অমানবিক
অমানবিক
দেশ তথা সমগ্ৰ দুনিয়ার এই কঠিন পরিস্থিতিতেও কিছু মানুষ যে কতটা নির্মম ও পৈশাচিক আচরণ করতে পারে তা কল্পনাও করা যায় না। মানুষের নামে বদনাম এই হিংস্র জানোয়ারগুলোর আমার মতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার ই নেই। এদের পাপেই আজ ধরিত্রী ভারাক্রান্ত। আমার আজকের ভাবনায় আছে সেই মেয়েটি যে অনেক আশা নিয়ে গত বছর জানুয়ারি মাসে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল। অনেক রঙীন স্বপ্ন সাজিয়েছিল সযত্নে তার চোখে। কিন্তু কিভাবে তার সেই স্বপ্নের দুনিয়া ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল, তারই করুন কাহিনী আজ পড়ুন-------
মিমির সঙ্গে পলাশের পরিচয় হয়েছিল ব্যাংকে। মিমি ওর মায়ের পেনশন সংক্রান্ত কিছু কাজে ব্যাংকে গিয়েছিল। পলাশও ওই ব্যাংকেই কাজ করতো। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব, তারপর ঘনিষ্ঠতা। পলাশদের বাড়ি থেকেও পলাশের বিয়ের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিলো তখন। আর তাই পলাশ যখন ওর বাড়িতে বিয়ের জন্য মিমির প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল, কেউই আপত্তি করেনি তখন। মিমির দিদি আর মা ছাড়া সেই মুহূর্তে মিমিদের পাশে সাহায্য করবার মতো কেউই ছিল না। মিমির দিদির তো আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তাই বিয়েতে যৌতুক হিসেবে সেভাবে কিছু দেওয়া সম্ভব হয়নি ওদের পক্ষে। ছেলেপক্ষ রাও তখন সেভাবে কিছু ই বলেনি। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র, গয়নাগাটি এসবই দিয়েছিল মিমির মা। অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে মিমি পলাশের স্ত্রী হয়ে ওই বাড়িতে গিয়েছিল। প্রথম কদিন তো সবই ঠিকঠাক চলছিল। মিমিও নতুন বিয়ের পর অন্য সব মেয়ের মতই পলাশের ভালোবাসার আবেগে ভেসে গিয়েছিল। মিমির মা অনেক টাই নিশ্চিন্ত হয়ে গিয়েছিল দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে।তার দুই মেয়েই যে যার জীবনে খুশি আছে, এর থেকে বেশী চাওয়ার একটা মায়ের জীবনে আর কি ই বা থাকতে পারে।
কিন্তু ভাগ্যের লিখন কে খন্ডাতে পারে। মিমি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল এক বছর পর। খুশি হয়ে খবরটা দিয়েছিল দিদিকে আর মাকে ফোনে। ওরাও খুব খুশি হয়েছিল মিমির জীবনের এ
ই নতুন খবরে। কিন্তু এরই মাঝে মিমি একদিন ওর দিদিকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানায় যে ,ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন নাকি ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার নাম করে, ওর গর্ভস্থ শিশু ছেলে নাকি মেয়ে সেটাও দেখতে চায়। ওদের কথাবার্তায় মিমি সেটা জানতে পেরেছে আজই। আর তারপর ই ও দিদি কে জানিয়েছে সব কথা। পরদিন ওদের চেনাজানা ডাক্তারের সহযোগিতায় মিমির টেস্ট হয়েছিল। আর তারপর থেকেই মিমিকে ওরা অ্যাবরশন এর জন্য চাপ দিতে থাকে। মিমি আপত্তি করাতে ওর উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করতে থাকে ওরা। মিমি পলাশকে অনেকভাবে বুঝিয়েছিল। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এই লক ডাউন চলাকালীন মিমিকে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন এবং স্বামী মিলে হত্যা করে, এবং মিমির বাপেরবাড়ির লোকজনকে এটা বলা হয় যে, মিমি অসুস্থ হয়ে মারা গেছে । কিন্তু মিমি মারা যাবার ঘন্টা খানেক আগেই ওর দিদিকে এটা জানিয়েছিল যে,ওরা ওকে মেরে ফেলতে পারে।আর তাই এই লক ডাউন ভেঙ্গে যাবার পরই যেন , মিমিকে ওর দিদি এসে নিয়ে যায়। দেশের এই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে যেখানে সবাই করোনা নামক মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সেখানে মিমির শ্বশুরবাড়ি র লোকজন যে পরিকল্পিতভাবেই এই খুন করেছে, তাতে কোনো সন্দেহই নেই। কারণ এখন যাতায়াতের সমস্ত মাধ্যম বন্ধ। তাই সন্দেহের ভিত্তিতে কোনো রকম দোষারোপও ওদের ওপর করা যাবে না। মিমির শেষকৃত্য ওরা করে দিয়েছিল। মিমির দিদির কাছে থাকা হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজের ভিত্তিতে মিমির বাপের বাড়ির লোক কতটা কি করতে পারবে পরে, সেটাও একটা বড়ো জিজ্ঞাসা। সত্যি মানবিকতার এমন নির্লজ্জ, নির্মম রূপ দেখলে, নিজেদের মানুষ হিসাবে ভাবতেও খারাপ লাগে। মানবিকতা আজ কোন্ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে , সেটাই একটা বড়ো প্রশ্ন। কতশত মিমি প্রতিদিন নিজেদের জীবন বলি দিচ্ছে এই নরখাদকদের হাতে। মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় এধরণের ঘটনায়। কবে এইসমস্ত ঘটনার অবসান হবে জানিনা।
সবাই সতর্ক থাকুন, ভালো থাকুন।