Sudip Bag

Action Thriller Children

3  

Sudip Bag

Action Thriller Children

অদ্ভুত প্রতিদান

অদ্ভুত প্রতিদান

3 mins
288



 একবছর আগের কথা। তখন আমি উত্তরবঙ্গে জঙ্গলের ভিতর নদীর ধারের একটি বাংলোর বাসিন্দা।একদিন সন্ধেবেলা বারান্দায় বসে আছি।সামনে কুয়াশার চাদরে মোড়া অমাবস্যার জঙ্গল।কানে আসছে নদীর জলের আওয়াজ।কিছুক্ষণ আগেই নিয়মমাফিক লোডশেডিং হয়েছে।সরকারি ফরেস্ট অফিসারের বাংলোটা গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা।দূর থেকে মন্দিরের ঘন্টা বাজার মতো ঝিঁঝিঁ পোকার সমবেত কন্ঠ ভেসে আসছে।মাস দুয়েক হলো শালবনী থেকে বদলি হয়ে এসেছি উত্তরবঙ্গের এই রাজাভাতখাওয়ার কাছে বক্সা ফরেস্টের ফরেস্ট অফিসার হিসেবে।থাকার জন্য পেয়েছি প্রাসাদসম একটা বাংলো।প্রথম যেদিন এলাম সরকারি বাংলোটাকে দেখে মনেমনে মান্না দের সেই বিখ্যাত গানটা - " মুকুটাতো পরেই আছে , রাজাই শুধু নেই .." আনমনেই গুনগুন করেছিলাম।আমার ভৃত্য মনিলালের কাছ থেকে শুনেছিলাম যে এই বাংলোটা তৈরি ১৭৬৫ সাল নাগাদ।রাজা ধৈয্যেন্দ্রনারায়ণ এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।রাজা খুব প্রজাবৎসল ছিলেন।কিন্তু তার একমাত্র শখ ছিল পশু শিকার করা।তৎকালীন বক্সার এই জঙ্গলে হিংস্র পশুতে পরিপূর্ণ ছিল।রাজা নিয়মকরে প্রতি অমাবস্যার রাতে শিকার করতে বেরোতেন।সারা রাত শিকার করে ভোরে বাঘ, সিংহ , হরিণ , বাইসন এমনকি হাতিও শিকার করে ফিরতেন।তারপর সেই পশুদের চামড়া, শিং, দাঁত সংরক্ষণ করে রাখতেন।রাজবাড়ীর ঘরের দেওয়ালে তার কয়েকটি নিদর্শন আমি অবশ্য বাংলোর অন্যান্য ঘরে পেয়েছি।সেই সব সংরক্ষিত প্রাণীদের অবশিষ্টাংশর বেশিরভাগই এখন রাজাভাতখাওয়া মিউজিয়ামে সুসজ্জিত আছে।মনিলালের মুখ থেকে আরো শুনেছিলাম যে এই রাজার মৃত্যু হয়েছিল বেশ রহস্যজনকভাবে।প্রায় দুবছর ধরে শতাধিক প্রাণী হত্যার পর এক অমাবস্যার রাতে রাজা শিকার থেকে আর ফেরেননি।সকালে জয়ন্তী নদীর তীরে রাজার ক্ষত বিক্ষত উলঙ্গ মৃতদেহ পাওয়া যায়।তাঁর দেহ থেকে দাঁত, নখ, এমনকি চামড়া পর্যন্ত তুলে নেওয়া হয়েছিল।রাজার কোন স্বর্ণালংকারও দেহে ছিলনা।তদন্ত করেও মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি।এরপর থেকেই রাজবাড়ীতে তালা পরে যায়।পরে দেশ স্বাধীন হলে প্রাসাদটিকে ফরেস্ট অফিসারদের থাকার বাংলো হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। 


বারান্দায় বসে বসে রাজা ধৈয্যেন্দ্রনারায়নের কথায় ভাবছিলাম।এইরকম একটা অমাবস্যার রাতেই তিনি মারা যান।আমিও এই দুমাসে চোরাশিকারদের হাত থেকে প্রায় গোটা কুড়ি হরিণ , দুটো বাচ্ছা হাতি , একটা বাইসনকে উদ্ধার করেছি।আমার মাঝে মাঝে মনেহয় মানুষ এত নিষ্ঠুর কি করে হতে পারে!

হঠাৎ একটা সুন্দর মিষ্টি বনফুলের গন্ধে চারিদিক ভরে গেল।একটা উষ্ণ বাতাস জয়ন্তী নদীর দিক থেকে হঠাৎ আমাকে একবার স্পর্শ করেই আবার ফিরে গেল।যেন কারোর আগাম আগমন বার্তা আমাকে দিয়ে গেল। বেশ ভয় ভয় পেতে শুরু করল।কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।ইচ্ছে হলো ঘরে ঢুকে যাই।কিন্তু একটা অদৃশ্য বাধন যেন আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে।হঠাৎ জয়ন্তী নদীর ওপার থেকে কারা যেন ছন্দবদ্ধভাবে নদী পেরিয়ে এদিকে আসছে।অমাবস্যার জন্য কোনোকিছুই ভালোকরে দেখা যাচ্ছে না।শুধু একটা জোরালো পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।আর সঙ্গে কতকগুলি পশুর সমবেত ডাক।ভীষণ ভয় পেয়ে চিৎকার করতে গিয়ে দেখি আমার গলা থেকে কোনো আওয়াজই বার হচ্ছে না।বুঝতে পারছিলাম এই তীব্র ঠান্ডায় আমি প্রবলভাবে ঘামতে শুরু করেছি।এদিকে সেই নিকষ কালো আঁধার ভেদ করে কারা জেনে আমার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে।গজরাজের আওয়াজ আমি এবার বেশ চিনতে পারছি।বাংলোর সামনের বাগানে কারা যেন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য।ভালো করে দেখা না গেলেও বুঝতে পারলাম এরা সকলেই হিংস্র পশুর দল।পশুরাজের গর্জন আমার কানে বাজছে।আমার হৃদস্পন্দন হঠাৎ সুতীব্র হয়েগেল।অন্ধকারে কিছু একটা জিনিস চকচক করে উঠলো।আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলামনা।


ঘুম ভাঙল পরেরদিন সকালে।আমি আমার ঘরের বিছানায় শুয়ে।গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।রামলাল পাশে বসে আমার মাথায় জলপটি দিচ্ছে।রামলাল বললো ,"কি বাবু ,তুমি সারারাত দরজা খুলে, না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলে ? ঠান্ডা বাতাস লেগে শরীরে জ্বর বাধিয়ে ফেললে ।আমি ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছি।" এই বলে রামলাল বেরোতে উদ্যত হলো।আমি বললাম,"রামলাল, গতরাতে তুমি সিংহের গর্জন শুনেছিলে?" রামলাল হেসে বললো ,"কি যে বলো বাবু ,সেই রাজাতো এই জঙ্গলের সব সিংহ মেরে ফেলেছে।"

তাহলে কি গতরাতে যা দেখলাম সবই স্বপ্ন! হঠাৎ পাশ ফিরতে গিয়ে দেখি আমার বিছানায় গতরাতের সেই উজ্জ্বল চকচকে আলো!হাতে নিয়ে দেখি হীরে, চুনী, পান্না বসানো একটা বাদশাহী স্বর্ণ আংটি! তবে কি গতরাতে ওরা ওদের পরবর্তী প্রজন্মের জীবন বাঁচানোর প্রতিদান দিতে এসেছিল !




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action