অচেনা প্রতিবাদ
অচেনা প্রতিবাদ


মেন ছবির ছেলেটিকে চেনেন?
না, আমি জানি অনেকেই হয়ত তাকে চেনেই না। এরকম বহু মানুষ মানুষের জন্য কাজ করে, আর মৃত্যুর পর অন্ধকারে হারিয়ে যায়।
সত্যি বলতে আমিও চিনতাম না। তার মৃত্যুর এক বছর পর তাকে "প্রলয়" সিনেমাটার মাধ্যমে চিনেছিলাম।
বুঝেছিলাম তথাকথিত সমাজে পুরুষ মানেই কেবল ধর্ষক ভাবা মানুষ গুলোর মুখে একটা কষিয়ে চড় ছিল এই মানুষটি। হ্যাঁ একজন পুরুষ ধর্ষণ করলে আমার পুরুষ হিসেবে যেমন মাথা হেঁট হয়। মনে হয়, পুরুষ হয়ে না জন্মালেই বুঝি ভালো হত। অন্যদিকে এই মানুষটিকে চিনে ওনার কথা জেনে বুকটা গর্বে ফুলেও ওঠে। আর আক্ষেপ থাকেনা পুরুষ হওয়ার প্রতি।
প্রতিটা শ্রেণিতেই রক্ষক ও ভক্ষক দুই থাকে। আমরা মানে পুরুষেরা কেবল ভক্ষক হিসেবেই পরিচিত। রক্ষক নামটা ওই ভক্ষকের মাঝে চাপা পড়ে আছে। কিন্তু এই মানুষটি বা এই ধরনের মানুষ গুলোর জন্য সমাজে আজও পুরুষে ধর্ষক ছাড়া বাবা, ভাই দাদা ভালো বন্ধু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
হ্যাঁ আজকের দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই বীরপুরুষ "বরুন বিশ্বাস"। অনেক ছোট থেকেই নানারকম সামাজিক কাজে যুক্ত হয়ে গেছিলেন কোন রাজনৈতিক দলের সাপোর্ট ছাড়াই মানুষের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলেছিলেন।
পেশায় স্কুল শিক্ষক বরুন ধীরে ধীরে মানুষের খুব কাছের হয়ে উঠেছিল। ২০০০ সালে ইচ্ছামতি আর যমুনার জলে প্লাবিত গ্রাম গুলোর জন্য একটি খাল কাটার প্রস্তাব নিয়ে তার প্রথম আন্দোলন শুরু হয়।এই দুই নদী সুটিয়া বনগাঁ গাইঘাটা অঞ্চলে বন্যার কারন হত। শেষ পর্যন্ত সেখানে একটি খাল খনন করা হয় সরকারের সহযোগিতায়।
২০০০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ৩৩ টি গনধর্ষণ ও প্রায় ১২ টি খুনের ঘটনা ঘটে সুটিয়া অঞ্চলে। এর প্রতিবাদে গ্রামবাসীদের নিয়ে "সুটিয়া গনধর্ষণ প্রতিবাদ মঞ্চ" গড়ে তোলেন বরুন বিশ্বাস। এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি হুঙ্কার দেন "আমরা যদি আমাদের মা, বোন, স্ত্রী ও মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে না পারি, তবে আমরা সভ্য সমাজে বাস করার যোগ্য নই। আমাদের যদি ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস না থাকে, তাহলে আমাদের তাদের থেকেও বেশি শাস্তি পাওয়া উচিত... তাই আসুন, আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আমাদের মহিলাদের সম্মান রক্ষা করুন।" জেগে ওঠে সুটিয়া। একে একে ধরা পড়তে থাকে সমস্ত অপরাধীরা।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।২০১২ সালের ৫ জুলাই কলকাতা থেকে যখন ফিরছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময়ে সবার অজান্তে ওঁত পেতে বসেছিল কয়েকজন দুস্কৃতি। গোবরডাঙা স্টেশনের পার্কিং লটে পৌঁছানো মাত্র পিছন থেকে গুলি করে তারা বরুন বিশ্বাসকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। শেষ হয় আর এক প্রতিবাদী কন্ঠ। আরও এক মায়ের বুক হয় খালি।
তবে যুগে যুগে এই প্রতিবাদ ফিরে আসে আসবে এই রকম বরুন বিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে। তার মা বলেছিলেন "আমি ছেলে-হারানো এক গর্বিত মা। আমার ছোটোছেলে বরুণ মৃত্যুভয়ের সামনে দাঁড়িয়েও কখনও পিছু হটেনি। যেদিন পর্যন্ত প্রতিবাদী মঞ্চ সবরকম দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে, সেদিন পর্যন্ত আমার ছেলে অমর থাকবে। বরুণ ছিল, বরুণ আছে, বরুণ থাকবে।"
এরকম ছেলের মা হওয়াই বা কত জনের ভাগ্যে জোটে।
আজ তার জন্মদিনে তাকে অন্তরের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
যেন তোমার মত হতে পারি। আমাদের কেবল ধর্ষক নামটা যেন ঘুচে যায় চিরতরে।
তুমি আছো তুমি থাকবে।
আজও তিনি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। শ্রেষ্ঠ পুরুষ। শ্রেষ্ঠ মানুষ
।