Sagnik Bandyopadhyay

Classics

3  

Sagnik Bandyopadhyay

Classics

আত্মত্যাগ

আত্মত্যাগ

2 mins
364


বিষে বাতাস দূষিত। কিন্তু ভ্রুক্ষেপ নেই মানুষদের। সেই মানুষের সৃষ্ট বিষই মানুষদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে ক্রমশ। হায়! মনুষ্য সমাজ। নামেই মানুষ হয়েছো, প্রকৃত মানুষ হওনি। মানও নেই, হুঁসও নেই। পৃথিবী ক্রমশ দূষণের প্রভাবে মলিন হয়ে পড়ছে। প্রকৃতিমাতার অপরূপ সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। এই দেখে প্রতীপ-এর মন উদভ্রান্ত। বয়স তার চল্লিশ। পুরো নাম প্রতীপ দত্ত। কিন্তু ছোট-বড় সবার কাছে প্রতীপদা নামেই জনপ্রিয়। প্রতীপদাকে যেকোনো সমস্যায় যে কেউ পাশে পায়। তার মতো ভদ্র, সরল, দরদী মানুষ বিরল। তার মন যেমন দরিদ্র মানুষের কষ্টে কাঁদে, ঠিক তেমনি প্রকৃতিমাতার ওপর অত্যাচার দেখে তার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। দিনদিন প্রকৃতি মাতাকে দূষিত করার কাজ যেসব কান্ডজ্ঞানহীন মানুষেরা করে, তাদের উপর প্রতীপদা খুব রেগে যায় মনে মনে। ইদানিংকালে কলকারখানা থেকে বেরোনো বিষাক্ত ধোঁয়ায় প্রকৃতিমাতার প্রাণ ওষ্ঠাগত। একদিন প্রতীপদা একটি শিল্পাঞ্চলের কাছ দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ দেখলো কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় বাতাস ছেয়ে যাচ্ছে। তার মনে হলো কত কষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি মাতার। সে সোজা কারখানার মালিক তথা কোম্পানির মালিকের কাছে গিয়ে বলল,"এই যে মশাই আর কত অত্যাচার ও খুন করবেন?" শুনে তো কোম্পানির মালিক হতবাক হয়ে বলল,"কে আপনি?" "আমি যেই হই। কারখানার ধোঁয়াগুলিকে ফিল্টার করার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা করুন"- বলল প্রতীপদা। শুনে চটে গিয়ে মালিক বলল,"করবো না। হুমকি দিচ্ছেন?" দৃঢ়তার সাথে প্রতীপদা উত্তর দিলো,"হুমকি না সাবধান করছি।" কথাটি বলেই চলে গেল। প্রতীপদা নিজে বড়ো একটি কোম্পানির বড়ো পদে কর্মরত। প্রতীপদা শুনতে পেল যাকে সাবধান করে এসেছে সেই কোম্পানির সাথে প্রতীপদার কোম্পানি প্রজেক্ট নিচ্ছে। শুনেই প্রতীপদা তার কোম্পানির মালিককে বলল,"এটা করবেন না স্যার। এই কোম্পানি পরিবেশকে শেষ করে দিচ্ছে।" প্রতীপদার কথা গুলো শুনে মালিকের মনে হল প্রতীপদার মাথা গেছে। মালিক বললেন,"শরীর খারাপ লাগছে? ডাক্তার ডাকবো?" "না স্যার। আমি ঠিক আছি"- শান্তভাবে উত্তর দিলো প্রতীপদা। "তাহলে তুমি এইসব কথা বলছো? বুঝতে পারছো না এটি কোটি টাকার প্রোজেক্ট"- বললেন মালিক। প্রতীপদা মুচকি হেসে বলল,"আপনি আপনার টাকা নিয়ে থাকুন। যে প্রকৃতি মাতার সাথে অন্যায় করবে তার সাথে আমি থাকবো না। সে যত টাকার প্রোজেক্ট হোক না কেন। এই নিন।" বলে পদত্যাগ পত্রটা দিয়ে মালিক কিছু বলার আগেই দৃঢ়তার সাথে বেরিয়ে গেল। প্রতীপদা ও তার পরিবার ছোটবেলা থেকে কোনোদিন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি আর এখনো করল না। সে চাকরি ছেড়ে দিলো প্রকৃতি মাতাকে রক্ষার জন্য। ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা শুরু করল এবং সে তার কাজে সফল হল। কোম্পানি বাধ্য হল ফিল্টার বসাতে। কিন্তু প্রতীপদা আগের চেয়ে কম মাইনের চাকরি পেল। কিন্তু তাতে কোনো তার আক্ষেপ ছিল না। সে প্রকৃতি মাতার জন্য হাসিমুখে এই আত্মত্যাগ স্বীকার করল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics