আঁখি 👁️
আঁখি 👁️
সুদীর্ঘ নেত্র পল্লব বিশিষ্ট গভীর কালো মনি যুক্ত দুটো চোখ তার উপর কালো কাজলের ছোঁয়ায় সে যেন আরও মোহময়ী। যেমন তার মায়া সেরকম তার রসানল। এত সুন্দর চোখের অধিকারিণী হওয়ায় হয়তো কেউ তার নাম রেখেছে 'আঁখি ' অবশ্য তার অন্য একটা কারণ ও আছে আজ পর্যন্ত তার মুখ কেউ দেখেনি শুধু তার চোখের গভীরতা ছাড়া। সে সব সময় তার মুখ ঢেকে রাখে কালো কাপড়ে। যে যেমন আঁখি তার কাছে ঠিক তেমনই অসহায়ের কাছে মা অন্নপূর্ণা আর দুষ্টের কাছে দেবী চণ্ডী।
সামনে দাড়িয়ে আছে এক ভয়ংকরী মূর্তি ধারণ করে খোলা চুল জলানা থেকে আসা হাওয়াই সেগুলো এলোমেলোভাবে উড়ছে, তার চোখে অল্প লালের ছটায় অবিকল চণ্ডী , মা চন্ডী যেন স্বয়ং এসেছে অসুর নিধনে। অসুর মায়ের পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইলেও তার আজ মুক্তি নেই কারণ আঁখির কাছে এই ধরনের পাপের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কারণ সেই অসুর আগের দিন রাতে একটা নারীর শরীরকে ভোগ করতে চেয়েছিল , কুনজরে তাকিয়েছিল হয়তো আঁখির সাম্রাজ্য ছোট হলে সেই ফুলের পাঁপড়ি ছিঁড়ে নিখোঁজ করে দিত কিন্তূ ঠিক সময় বাঁচিয়ে নিয়েছিল মেয়েটিকে। কিন্তু আজ এই নরখাদক কে বাঁচাতে পারবে না কেউ...
আঁখির হুমকার করে বললো যত পাপের ক্ষমা চাওয়ার আছে চেয়ে নে। যতই কাকুতি মিনতি কর তোর আজ নিস্তার নেই কারণ তোর ভুলের সাজা মৃত্যুদণ্ড হলে তোর মতো ছদ্দবেশী কাপুরুষের দল ভয় পেয়ে হয়তো অন্য কোন দেবীর দিকে কুনজরে তাকাবে না। আর যদি তাকায় তো তার শাস্তি ও মৃত্যুদণ্ড।
কথা গুলো বলেই ছুরিটা দিয়ে একটানে গলাটা দুভাগ করে দিলো লোকটা কিছুক্ষণ ছটফট করে মারা গেলো।
সেই মৃত্যুর খবরটা পৌঁছে গেলো থানায়।
অফিসার বিক্রমাদিত্য তিনি এই থানার পুরনো কেস ফাইল গুলো খুলে দেখতে দেখতে চিন্তায় পড়ে গেছেন এই সব লোক গুলো মার্ডার করলো কে ? জানতে হবে ব্যাপারগুলো... এটাতে একটা রহস্য তো আছেই।
_________________________
আঁখি এসেছে তার 'আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ' কেন্দ্রে তার মতে প্রতিটা মেয়েকে নিজেকে নিজের আত্মরক্ষা করতে শিখে নিতে হয়। তাই সে এই এলাকার সমস্ত মেয়েকে তার শিক্ষা দিচ্ছে কীভাবে একা হাতে বিপদকে সামলাতে হয়।
হটাৎ একটা বাচ্চা ছেলে ওর নাম রাজ সে হাপাতে হাপাতে এসে দাঁড়িয়েছে ... আঁখি দিদি জলদি আমার সাথে চলো একটা দাদা জলে প্রায় ডুবেই যাচ্ছে।
কোন দাদা ? ওই কাল যে দাদাটা নতুন এসেছে পাড়ায় ওই দাদাটা।
আঁখি চলে গেলো দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একটা লোক পুকুরে নেমে সাঁতার না জানাই হাবুডুবু খাচ্ছে। আঁখি জলে নেমে লোকটাকে তুলে আনলো। অনেক জল খাওয়াই জ্ঞান হারিয়েছে। তাই সে কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে জল বার করার চেষ্টা করার পর যখন দেখলো শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ তখন সে চুলটা ধরে টেনে মুখ খুলে নিজের মুখের বাঁধন খুলে মুখ দিয়ে শ্বাস দিতে লাগলো এতে লোকটা চোখ খুলে তাকালো। জ্ঞান ফিরতে বাড়ি নিয়ে আসে দুধ খাইয়ে দিয়াই একটু সুস্থ হয়েছে।
আঁখি লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলো আপনার নাম?
তুহিন... ধন্যবাদ আপনাকে পুনর্জন্ম দেওয়ার জন্য।
_________________________
এইভাবেই বেশ কিছুদিন কাটলো বিক্রমাদিত্য এলাকার সবার কাছ থেকে খবর নিয়ে আঁখির সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পেরেছে এখন তার নিশানা আঁখি এবার পালা তাকে হতে নাতে ধরার।
অন্য দিকে তুহিনের সাথে বেশ ভালই বন্ধুত্ব হয়েছে আঁখির এক্ষণ তুহিন ও আঁখির দলের এই একজন।
।।
।।
আঁখি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চোখে কাজল দিচ্ছে পরিপাটি করে কাজল লাগতে সে আগে ভালোবাসতো না আগে ওর মা ওকে পরিপাটি করে কাজল পরিয়ে দিতো
মা বলতো " এত মিষ্টি মুখে সুন্দর দুটো চোখ অল্প একটু কাজল দিলে যেকোনো রাজকন্যাকে হার মানায়। তাই আমি আমার মেয়েকে কাজল পরা চোখেই দেখতে চাই বার বার আর আমার মেয়ের চোখের কাজল যেনো কখনো জলে না মুছে যায়" এই কথা রাখতেই আজও চোখে কাজল পরে রোজ। এসব ভাবতে ভাবতেই একটা ফোন এলো। তুহিনের ফোন .. ফোনটা রিসিভ করলো " আঁখি কাল যে লোক গুলো মদ খেয়ে মেয়েদের টোন টিটকিরি করছিল আজ তুলে এনেছি " চলে আসো ।
আঁখি পৌঁছে গেলো ওর সেই গুপ্ত ঘরে যেখানের যমরাজ ' আঁখি ' ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছে পাঁচ - ছয় জন কম বয়সী যুবক কে। আজ তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নয় আজ তাদের শাস্তি অন্য কারণ আঁখি এতোটাও অমানবিক নয়। আঁখি তুহিন কে নির্দেশ দিল ছেলেগুলো জমা গুলো খুলে দিতে তারপর একটা চাবুক এনে চালালো। বেশ কিছুক্ষণ পর চাবুক চালানো বন্ধ করে বলতে লাগলো আর শকুনের দৃষ্টি পড়বে কোনো মেয়ের উপর, যদি রাস্তা দিয়ে তোর বোন পেরিয়ে যেত দেখতিস ওই ভাবে কুনজরে নাকি ওই ভাবে কটু মন্তব্য করতিস ওই ভাবে।
ছেলেগুলো পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইছো। বার বার প্রাণ ভিক্ষা করছে। আর তারা এর পর মেয়েদের সম্মান করবে এই প্রতিশ্রুতি দিল। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করবে তার কথা দিলো তাই আঁখি তাদের ছেড়ে দিল ঠিকই কিন্তু ওদের গতিবিধির উপর ওর নজর থাকবে।
আঁখি টেবিলটার উপর বসে আছে, নিজের রাগ সংবরণ করছে। এমন সময় তার মুখের সামনে কেউ একটা রুমাল চেপে ধরলো তার আঁখির চোখের সামনে সব অন্ধকার।
কিছু সময় পর আঁখির জ্ঞান ফিরে এলো। আঁখি নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায়। তার মুখের বাঁধন কেউ যেনো খুলে দিয়েছে। হঠাৎ সামনে থেকে পায়ের শব্দে তাকিয়ে দেখে তুহিন...
আঁখি বলে উঠে তুহিন তুমি আমাকে বেঁধে রেখেছো কেনো?
আমি তুহিন নই। আমি বিক্রমাদিত্য... ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসার...
আমি তো আমার আসল পরিচয় দিয়েই দিলাম তোমার আসল পরিচয়টা বলো... কে তুমি কী তোমার আসল পরিচয় কনো আইন কে নিজের হাতে তুলে নাও ?
আঁখি কিছুটা বাঁকা হাসি হেসে বলে কীসের আইন? কোথায় আইন? কী করবে আইন পুলিশ আদালত? সব দোষী র কী শাস্তি সেই আদালত , আইন ?
কোন দোষের শাস্তি চাও তুমি? কী জন্য তুমি আঁখি ? আমাকে বলতে পারো সব ঘটনা কথা দিচ্ছি আমি তোমার পাশে থাকবো...
শুনো তবে আমার জীবন কাহিনী কী কারণে আমি আঁখি... আমি মধ্যবিত্ত পরিবারে এক মেয়ে, বাবা মায়ের খুব আদরের। বাবা থানার ওসি ছিলো বাবার কাধে আসে পড়লো রাজেন্দ্র চৌধুরীর ছেলে রোহিতের রেপ কেসর। তারা বাবাকে টাকা দিয়ে কেস ধামাচাপা দিতে বলে কিন্তু বাবা সেটা না করায় বাবাকে মৃত্যুর হুমকি পর্যন্ত দেয়। তাও কেসটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া একদিন রাতে রাজেন্দ্র আর রোহিত আমাদের বাড়ি।মা তখন রান্না ঘরে মেয়ের জন্য পছন্দের মাংস রান্না করছিল আর বাবা সবে মাত্র থানা থেকে আসে বসে আছে সোফায়। আমি তখন আমার পড়ার রুমে বসে পড়াশুনা করছি কারণ পরের দিন আমার পরীক্ষা। বাবার সাথে রাজেন্দ্র কথা শুনে আমি পড়ার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। দেখি রোহিত মায়ের সাথে অসভ্যতা শুরু করেছে বাবা আমাকে ইশারা করে বলে থানায় গিয়ে পুলিশে খবর দিতে আমি কোনো ভাবে সবার চোখের আড়ালে বেরিয়ে যায় সোজা পৌঁছলাম থানায় সবাইকে বুঝিয়ে যখন পুলিশদের নিয়ে বাড়ি ফিরি তখন দেখি সব শেষ। বাবার বুকের পাশে জামাটা রক্তেভেজা একটা ছুরি গাথা রয়েছে। মা কে কোথাও দেখতে না পেয়ে চারিদিকে খুঁজে দেখি বেড রুমে ঝুলন্ত অবস্থায়.... এসব বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো আঁখি...
যে চোখে বিক্রম শুধু আগুন দেখেছে সেই চোখে আজ জল.... এমন সুন্দর মুখে জল সত্যিই মানায় না। যে মেয়ে এত সুন্দর না জানি তাকে হাসলে কি অপরুপা লাগে। এই রূপে আর এই ব্যাক্তিত্ব বিক্রমের মন কেউ দোলা দেই।
বিক্রম নিজের হাতে আঁখির চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললো এত সুন্দর কাজল জলে তো সব ভেসে যাচ্ছে। এই চোখে জল মানায় না আঁখি শুধু আগুন মানায় আগুন... আচ্ছা আঁখি তার পর কী হলো ?
তার পর আমি অনেক থানা পুলিশ কেস কোর্ট করলাম কিন্তু ওদের অনেক টাকা অনেক লোক তাই আর শাস্তি পেলনা । মুক্তি পেয়ে গেলো আমিও সেইদিন থেকে নিজেকে ' আঁখি' বানালাম ওদের শাস্তির আসায়।
"তারপর তুমি ওদের শাস্তি দিলে" ??
হুঁ নিজে হাতে ওদের মাথা আলাদা করেছি ধর থেকে। যে নোংরা হাতে রোহিত আমার মাকে ছুঁয়েছে সে হাত আমি কেটে দিয়েছি।
আমি চাই না আর কোনো মেয়ে কোনো ক্ষতি হোক তাই আমি প্রতিশোধ নিয়ার পর ও আঁখি হয়েই থেকে গেছি....
আমিও তোমার সাথে থাকতে চাই আঁখি... আজ আমার আর একটা কথা বলার আছে আঁখি জানি না তুমি ঠিক আর উত্তর কি দিবে ? তাই জানতে চাই আঁখি আমি তোমার ওই কাজল কালো চোখের হারিয়ে যায় তোমার ওই চোখের মায়া আমাকে তোমার কাছে আটকে রাখতে চাই। আমি তোমার এই মায়াতে আটকে থাকতে চাই। সেই প্রথম দিন থেকে তোমার চোখে আমি বন্দী.....
বিক্রমের এসব কথায় আঁখির মুখে একটা মিষ্টি হাসি খেলে গেলো...
এটা সম্মতির হাসি .....
