Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

শুভায়ন বসু

Tragedy Classics Inspirational

3  

শুভায়ন বসু

Tragedy Classics Inspirational

আঁচল

আঁচল

6 mins
111


আজও ছেলেটার জ্বরটা কমল না।দু’দিন ধরে অনিল কোবরেজের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে ।সারারাত জলপটি, ওষুধ-পথ্য ।ভোরের দিকে চোখটা লেগে গিয়েছিল মল্লিকার। তাতেই ঘোরের মধ্যে হাজির সুতনু ।

-তুমি কোথায় আছ সুতনু ?আমি যে তোমাকে অনেক দিন ধরে খুঁজছি।

-আমাকে খুঁজছ?এখনও? আমি তো সব ছেড়ে চলে গেছি।

- কি বলছ সুতনু ? তুমি আমার সঙ্গে শুধু ভালবাসার খেলা খেলেছিলে,না?

-জানি না।তুমি বৃথা সময় নষ্ট করছ,আমাকে আর খুঁজে পাবেনা মল্লিকা। 

-সময় নষ্ট? একরত্তি ছেলেটার কথা একবারও ভাবলে না? ওর জন্য অন্তত একবারটি ফিরে এসো সুতনু ,তোমার পায়ে পড়ি। 

-তা আর হয় না, আমি অনেক দূরে চলে গেছি। সেখান থেকে আর ফিরে আসা যায় না। আমাকে ভুলে যাও।

- আমি যে এইভাবে আর পারছিনা।কেন চলে গেলে এভাবে নিজের স্ত্রী সন্তানকে ছেড়ে?আমরা কি দোষ করেছি?

-আমি... আমি হেরে গেছি। 

-কি বলছ?তোমার কি অসুবিধা বল। আমি তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব।

-আমি.. আমি..

 সুতনু কি যেন বলতে চাইছিল মল্লিকাকে। শেষে কিছু না বলেই প্রতিবারের মতো এবারও ঝাপসা হয়ে হারিয়ে গেল।

 চোখটা জলে ভরে আসছিল মল্লিকার। স্বপ্ন দেখার কান্না ? হবেও বা। সুতনু চলে গেছে আজ এক বছর এক মাস হলো ।কোলের ছেলেটাকে নিয়ে মল্লিকা আজও সেইরকমই অসহায়। আদিত্য মানে সূর্য ও জানে। নামটা সুতনুরই দেওয়া ।


দাদাবাবুদের বাড়ির ছেলেটার নাম আদিত, খুব শান্ত ।কতই বা বয়স ,ছয় সাত হবে। স্কুলে নিয়ে যাওয়া ,নিয়ে আসার দায়িত্ব মল্লিকার। বৌদির নাকি কি সব অপারেশন হয়েছে, শুয়েই থাকে সারা দিন। আরো কিছু জটিল অপারেশন হবে, দাদাবাবুদের বাড়ির কথাবার্তায় বুঝতে পারে ও।বৌদির অবস্থা ভালো নয় ,কে জানে বাঁচবে কিনা ।

একদিন দাদাবাবু এসে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল মল্লিকাকে, বৌদির ঘরে। ‘একবার এস মল্লিকা, বৌদি তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে চায়’, দাদাবাবু বলেছিল। ধীরে ধীরে পর্দা সরিয়ে ঘরটায় ঢুকেছিল মল্লিকা ।সারা ঘরে ওষুধের গন্ধ, চব্বিশ ঘন্টার নার্স । তারই মধ্যে বিছানা থেকে একটা শীর্ণ হাত বাড়িয়ে দিয়ে, মল্লিকার হাতটা ধরেছিল বৌদি, ‘তুমিই মল্লিকা?’ কি মিষ্টি গলা, কি সুন্দর দেখতে বৌদিকে। মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, বৌদিকে বাঁচিয়ে দিও ঠাকুর,মনে মনে বলেছিল মল্লিকা। ঘাড় নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলেছিল। ‘আদিতকে একটু দেখো, আমি তো কিছুই করতে পারি না ।তুমিই ওর সব। ছেলেটাকে সাবধানে রেখো, খুব দুষ্টু ।‘বৌদি অনেক কষ্টে কথাগুলো বলেছিল। কোথা থেকে একরাশ কান্না উঠে আসছিল মল্লিকার, কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেছিল, ‘তুমি একদম চিন্তা কোরো না বৌদি, আমি আছি তো।‘ বৌদি সেই কথায় কেন যেন, ভীষণ আস্বস্ত হয়েছিল ।আসলে মায়েরা মায়েদের মন বোঝে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটু হেসে বলেছিল, ‘তুমি খুব ভাল, আমি জানি।‘ মল্লিকার চোখে জল এসে গেল, বলল, ‘তুমি তাড়াতাড়ি সেরে ওঠো বৌদি, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।‘ বৌদি বিছানায় এলিয়ে প’ড়ে, ক্লান্ত স্বরে বলেছিল, ‘কিচ্ছু ঠিক হবে না, কিচ্ছু না।‘ নার্সের ইশারায় মল্লিকা বেরিয়ে এসেছিল ঘর থেকে। আঁচলে চোখ দুটো তাড়াতাড়ি মুছে ফেলেছিল। সে কান্না কেউ দেখতে পায়নি ।দাদাবাবু মল্লিকাকে এসে বলেছিল, ‘তোমার হাতে ছেলেটাকে দিয়ে আমাদের কত শান্তি,তুমি জানো না। তুমি কিন্তু কামাই করবে না একদম, বুঝেছ?’ মল্লিকা ঘাড় নেড়েছিল।


ছেলেটাকে স্কুলে নিয়ে যেতে আসতে, হাতটা তাই শক্ত করে ধরে রাখে মল্লিকা। নিজের ছেলেটাও আর কদিন পরেই স্কুলে যাবে- নিশ্চয়ই যাবে ।ও একটু একটু করে পয়সা জমাবে ।স্কুলে যাবার মেলা খরচ ।বই-খাতা ,জামা-প্যান্ট,ব্যাগ, টিফিন বক্স, ওয়াটার বটল্। বাবুদের ছেলেটার সেইসব গোছাতে গিয়ে ওর চোখ যেন দেখতে পায় আদিত নয়, আদিত্য নামটাকে। নামেও কি অদ্ভুত মিল ছেলেদুটোর ।মায়াটা যেন একটু বেশিই পড়ে গিয়েছে ।পরম মমতায় মল্লিকা সব গুছিয়ে দেয়, একটুও ভুল হয় না। তারপর জামা-প্যান্ট পরিয়ে যখন আদিত একেবারে রেডি, চোখ সরাতে পারে না মল্লিকা। আদিত্যও ঠিক এরকমই একদিন স্কুলে যাবে।

‘আজ স্কুলে যাব না মাসি, প্লিজ’, আদিত বায়না করত। ‘কেন যাবেনা সোনা? কি হয়েছে?’ ‘আমি মার কাছে থাকব, মার কাছে আমায় যেতেই দেয় না‘, আদিত কাঁদোকাঁদো। ‘যাবে তো মার কাছে। মা একটু সুস্থ হলেই যাবে।‘মল্লিকা বোঝাতে চেষ্টা করে। ‘মা কবে সেরে উঠবে মাসি?’ মল্লিকার কাছে এর কোন জবাব ছিল না। সে ডাক্তার নয়, কিন্তু ডাক্তারও কি বলতে পারতো ?তবে মল্লিকা মার অভাব পূরণ করার সাধ্যমত চেষ্টা করত। আদিতের হাত ধরে বলত, ‘চল, চল স্কুলে যেতে হবে। স্কুল থেকে ফিরে এসে মার কাছে নিয়ে যাব।‘ আদিত্য খুশি হয়ে বলত, ‘স্কুল থেকে এসে? মার ঘরে কিন্তু আমি আজকে সারাদিন থাকব। ঠিক আছে?’ ‘হ্যাঁ, ঠিক আছে’ মল্লিকা স্তোকবাক্য দেয়। আর মার কাছেই শোব কিন্তু রাতে, মা আমাকে ঘুম পাড়াবে, দিদা নয়‘, আদিত আবদার করে। ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে’, এবারেও মিথ্যে বলে মল্লিকা। আহা রে ,ওর হাতে যদি সত্যি এর কোন উপায় থাকত!


জ্বরটা যায়নি ছেলেটার। আজ মনটা দুশ্চিন্তায় বেজে উঠছে বারবার। তবু কামাই করা যাবেনা বাবুদের বাড়ি। গুরুদায়িত্বে একদিনও ফাঁকি দেবার জো নেই।আর মাত্র এক ঘণ্টা ।আদিতকে বাড়ি পৌঁছে, জামা-কাপড় ছাড়িয়ে, টিফিন খেতে দিয়েই, এক ছুট দেবে মল্লিকা ।আজই হরেণ ডাক্তারকে দেখাবে ছেলেকে । আঁচলে বাঁধা আছে জমানো কয়েকটা টাকা ।যেভাবে হোক ছেলেটাকে সুস্থ করে তুলতেই হবে। অনেক স্বপ্ন ওর আদিত্যকে নিয়ে ।ও’ও স্কুলে যাবে ,বড় হবে ,বড় হয়ে মল্লিকার মুখে একটু হাসি ফোটাবে। অনেক লড়াই । এই অবেলায় কেন চলে গেলে সুতনু ?লড়াইটা নয় দুজনে একসঙ্গে লড়ত।আদিত্যকে বড় করে তোলার দায়িত্ব কেন নিলেনা সুতনু? কেন পালিয়ে গেলে ? ছিঃ।চোখে জল আসতে দেয় না মল্লিকা।স্কুল থেকে ফেরার সময়, দাদাবাবুদের গাড়িতে আদিতকে ওঠাতে গিয়ে ,হাত চেপে ধরে ভাল করে।


কিন্তু আজ আদিত বড় বায়না করছে ।গাড়িতে কিছুতেই উঠবে না।


‘আমি ওই আইসক্রিমটা খাব মাসি।‘ ‘কোন আইসক্রিম ?’ ‘ওই যে’, বলে পাশের আইসক্রিম পার্লারের শোকেসের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় আদিত। অনেক দামি আইসক্রিম, মল্লিকা কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। এমন তো কখনো করে না ছেলেটা, বরাবরই শান্ত। তবে আজকাল একটু জেদি হয়ে উঠেছে। আসলে মাকে বেশি কাছে পায় না তো ছেলেটা, মার ভালবাসা, মার সান্নিধ্য না পেলে শিশুদের কত কষ্ট, জানে মল্লিকা।ভালোবাসা দিয়ে মন ভোলাতে চায় ,কিন্তু পেরে ওঠে না আদিতের জেদের কাছে। ‘আমি আইসক্রিম খাবই, এনে দাও না মাসি।‘ ‘পরে একদিন খেও ,আজ দেরি হয়ে যাচ্ছে যে’, মল্লিকা সামলাতে চেষ্টা করে। ‘কিচ্ছু দেরি হচ্ছে না ,আমি গাড়িতে যেতে যেতে খাব। তুমি কিনে দাও না মাসি’, মল্লিকা কি করে সামলাবে ছোট্ট ছেলেটাকে, কিভাবে বোঝাবে, নিজেই বুঝে উঠতে পারে না ।আবার শাসন করতেও মন চায় না। এই ক’দিনে নিজের ছেলের থেকে আদিতের কোন তফাৎ করে উঠতে পারেনি মল্লিকা ।না শুধু নামের মিলে নয়, ওর আদিত্যের স্বপ্ন আর আদিতের বাস্তব প্রতি মুহূর্তে মিলেমিশে এক হয়ে যায় বলে। আদিত ওর ভবিষ্যতের আদিত্য ।


ড্রাইভার সাহেব হাত উল্টে মুখটা ব্যাজার করে বুঝিয়ে দিল এসব আবদারে ওর সায় নেই। কিন্তু ছেলেটা নাছোড়বান্দা ,আইসক্রিমটা কিনে দিতেই হবে। হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে মল্লিকা মাসিকে, সেও জানে মাসি তার বড় বিশ্বাসের ,বড় আপনার। শিশুরাও স্পর্শ চেনে।


‘চলো না মাসি, চলো না ।ওই আইসক্রিমটা আমার চাই।‘ ‘ঠিক আছে সোনা, আগে আমার হাতটা ভাল করে ধরো, দুষ্টুমি কোরোনা।‘মল্লিকা বলে। ‘কিনে দেবে তো?’, আদিত মাসির হাতটা শক্ত করে ধ’রে, বলে। ‘ হ্যাঁ সোনা’, মল্লিকার মনটা হু হু করে ওঠে। ছেলেটা তো মাকে সেভাবে পায়না ,আজ মাসি ওর কাছে মার মত। প্রথমবার ভালোবেসে মাসির কাছে কিছু আবদার করছে, আর মল্লিকা তা দেবে না,এ হয় নাকি? লাফাতে লাফাতে, আদিত মাসির হাত ধরে আইসক্রিম পার্লারে ঢুকে পড়ে।


আঁচলের বাঁধাটা খুলে মল্লিকা জমানো খুচরো মোচড়ানো টাকাগুলো গুনে গুনে ,সোজা করে, পরম মমতায় সাজায়। তারপর ও সেই টাকাগুলো যখন একটা দামী আইসক্রিমের জন্য তুলে দিচ্ছিল আইসক্রিম পার্লারের সুসজ্জিত সেলসম্যানের হাতে ,ওর কিন্তু একটুও কষ্ট হচ্ছিল না,আফসোস হচ্ছিল না ।ছেলেকে ডাক্তার দেখানোর জমানো টাকাটা আইসক্রিম এর পেছনে বাজে খরচ হয়ে গেল ,একবারও মনে হচ্ছিল না ।খালি প্রাণভরে দেখছিল আদিত্য থুড়ি আদিতের চেটে চেটে পরম তৃপ্তিতে আইসক্রিম খাওয়া।আসলে মল্লিকা যে মা।



Rate this content
Log in

More bengali story from শুভায়ন বসু

Similar bengali story from Tragedy