(Writer) Mr. SANDIPAN SAHA

Action Inspirational Others

4.0  

(Writer) Mr. SANDIPAN SAHA

Action Inspirational Others

আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা

আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা

10 mins
607



স্বাধীনতা শব্দটির ব্যাপ্তি অনেক ৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কতটা স্বাধীন হতে পেরেছি মনে প্রাণে ৷ স্বাধীনতা বলতে আমি শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতার কথা ভাবি না ৷ আমি স্বাধীন দেশে জন্মেছি ৷ ব্রিটিশদের দ্বারা পরাধীনতার গ্লানি আমি ইতিহাসে পড়েছি কিন্তু তারপরেও একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে প্রকৃত অর্থেই কি আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক ?


 স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর স্বাধীনতা দিবসের দিনে আমরা কি হলফ করে বলতে পারব দেশের সব মানুষ দুবেলা-দুমুঠো খেতে পাচ্ছে ? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে ? ইংরেজরা এদেশ থেকে চলে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু বঞ্চনা কি বন্ধ হয়েছে ?

দেশের দুর্বলতর শ্রেণীর অধিকারকে প্রতিষ্ঠা কি সম্ভব হয়েছে ?আসলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এসেছে ঠিকই, কিন্তু এখনো সামাজিক স্বাধীনতা আসেনি ৷ আমাদের সংবিধান শুধু দিয়েছে বাকস্বাধীনতা, কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও আমাদের দেশে সেই বাকস্বাধীনতা শাসকের ইচ্ছাধীনে পরিণত হয়েছে এখনও কানাইয়া কুমারের মতো স্কলারকে নিজস্ব মতামত প্রদানের দায়ে জেল খাটতে হয়েছে ৷ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও এ দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ৷ শিক্ষা থেকে শুরু করে সামাজিক ক্ষেত্রে সরকারের নীতি নয়, দলীয় আদর্শকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলছে ৷ শিক্ষা এখন জ্ঞানের বিষয় নয়,তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাধীন দলের আদর্শের শিক্ষা রূপে ৷ এই স্বাধীনতা আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কখনোই চাননি ৷


তাঁরা চেয়েছিলেন দেশের প্রতিটি নাগরিক জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই যেন সমান অধিকার পায় ৷ প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো যেন পূরণ হয়, সেই ব্যবস্থা স্বাধীন দেশের সরকার করবে, এটাই চেয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ৷ খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা যাতে পূরণ হয় সেই লক্ষ্যেই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে আত্ম বলিদান দিয়েছিলেন ৷


তাদের চাহিদা আর আত্ম-বলিদান যে সার্বিক ভাবে সফল হয়নি তা কোন দ্বিধা না রেখেই বলা যায় ৷ আজকের দেশ পরিচালকরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামে শপথ করেও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা নিয়মে এগিয়ে চলেছেন ৷ আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসার পর সাধারণ মানুষের উপর আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দিয়ে দেশের উন্নয়নের কথা ফলাও করে প্রচার করে চলেছে ৷ দেশের সম্পীতিকে বিপন্ন করে সংখ্যালঘু সমাজকে আতঙ্কের মধ্যে রেখে দেওয়া হচ্ছে ৷এ নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে চাইলে তার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে ৷ বলা হচ্ছে তুমি মুসলিম পরিচয়ের বাইরে বের হয়ে ভারতীয় হতে পারোনি ৷


এখানেই শেষ নয়, অস্পৃশ্যতাকে আমাদের দেশের সংবিধানে কড়াভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৷ সংবিধান ও আইনের চোখে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা সংবিধান বলেছে ৷কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও দলিত হবার অপরাধে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারছে না অনেক সন্তান ৷ সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার নজির ভুরিভুরি ৷ এই স্বাধীনতা কি চেয়েছিলেন আমাদের দেশের সংগ্রামীরা ? দেশপ্রেমিকরা বলেন স্বাধীনতা মানে অরাজকতা নয়, স্বাধীনতা মানে শুধুই ১৫ ই আগস্ট নয় ৷ স্বাধীনতা মানে দেশপ্রেম, দেশকে মা রূপে পরিগণিত করা - "আমার জননী আমার মা, আমার জননী আমার দেশ" ৷স্বাধীনতা মানে একদিনের ছুটি নয়, নয় পতাকা উত্তোলন, নয় ক্লাবে ক্লাবে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো ৷ এই মুহূর্তে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে আমরা কি স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছি ? 


   আত্মমর্যাদার জন্য যদি কাউকে আত্মহত্যা করতে হয়, ন্যূনতম বেঁচে থাকার অধিকার যদি পাওয়া না যায়, অথবা প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার যদি কারো দয়া-দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তবে কি আমরা স্বাধীন ? আমার দেশ কি স্বাধীন ? অনেক দেশপ্রেমিক মনে করতেন স্বাধীনতার পর কমপক্ষে পাঁচ বছর মিলেটারি শাসন দরকার, দেশের যুব সম্প্রদায়ের চরিত্র গঠন ও নিয়মানুবর্তিতা দেখার জন্য ৷ স্বাধীনতার অর্থ দেশকে একটি সুদৃঢ় ভিতের উপর দাঁড় করানো, দেশের মানুষের ন্যুনতম প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য,খাদ্য ও বসবাসযোগ্য স্থানের চাহিদা পূরণে সক্ষম করে তোলার সাথে কর্মসংস্থান ও বিজ্ঞান বিষয়ক দিকে দেশকে স্বনির্ভর করে তোলা ৷স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করা, স্বাধীনতার অর্থ হল দেশের প্রতি আরও কর্তব্য পরায়ণ হওয়া ৷


 স্বাধীনতার অর্থ এটা নয় যে মানুষের দ্বারা তৈরি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সিড়ি বানিয়ে ক্ষমতা দখল, আর সিংহাসনে বসে তার অপব্যবহার করা ৷ এই ক্ষমতা দখলের সিংহাসনটি হতে পারে গ্রামের সালিশি সভার প্রধানের সিংহাসন অথবা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের সিংহাসন অথবা কোন রাজ্যের মন্ত্রীবর্গের সিংহাসন অথবা দেশের প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসন ৷ তাই স্বাধীন দেশের জনগনের উচিত কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতা দখলের সিংহাসনে বসাবার আগে সেই ব্যক্তির ন্যূনতম অন্তর্নিহিত মূল্যবোধের ও শিক্ষার সঠিক মূল্যায়ন করে নেওয়া ৷ নচেৎ স্বাধীনতার অপব্যবহার করার দায়ে শুধু সেই ব্যক্তি বিশেষের উপরই বর্তায় না সাথে সাথে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক এর শিক্ষা, বুদ্ধি ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে একটি প্রশ্ন চিহ্ন থেকে যায় ৷ জনগণ যদি কোন অসৎ ব্যক্তিকে সিংহাসনে বসায় তাহলে অসৎ ব্যক্তি অপেক্ষা জনগণ বেশি দোষী ৷ দেশ উন্নত হচ্ছে —'আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে'- দামী দামী অস্ত্র কিনছি - পরমাণু সমৃদ্ধ আমার দেশ ৷ কিন্তু আসল অস্ত্র টিম সঠিকভাবে বানানো গেল না ৷ তা হলো শিক্ষা ৷ সমস্ত জনগণকে সঠিক শিক্ষা দেওয়া গেল না ৷ দেশ যান্ত্রিক অস্ত্রে পরিপূর্ণ কিন্তু জনগণের অভ্যন্তরীণ 'অস্ত্র'নেই ৷ বিদেশি শক্তিকে আমাদের সাথে লড়াই করে জয়লাভ করতে হবে না, শুধু অশিক্ষার আগুনে বাতাস দিলেই দেশ জ্বলে ছারখার হয়ে যাবে ৷ কোন অস্ত্রই কাজে আসবেনা ৷ অশিক্ষার কারণে আরো বেশি করে জন্ম নেবে দেশের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের চাহিদা,যা মেটাতে প্রচুর দাম দিয়ে কেনা অস্ত্র বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার আগেই দেশের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে ৷ সত্যি কথা বলতে কি, ইংরেজরা যে শুধু অনেক অনেক অস্ত্র নিয়ে ভারতমাতাকে পরাধীন করে রেখেছিল তা কিন্তু নয়, ওরা ওদের শিক্ষা নিয়ে এল আর যাওয়ার সময় স্বাধীন করে দেওয়ার নাম করে একটি দেশকে দুই ভাগ করে গেল সাথে সাথে সারা জীবন একটি ক্রেতা নিশ্চিত করল যে কিনা অস্ত্র কিনে যাবে শুধু নিজের দেশের মধ্যে গজিয়ে ওঠা বিচ্ছিন্নতাবাদকে মেটাবার জন্যে ৷ স্বাধীনতার সঠিক অর্থ হতে পারে দেশের জনগণের ন্যূনতম সঠিক শিক্ষাদানের অঙ্গীকারে ব্রত হওয়া ৷ শিক্ষাই পারে সব পরাধীনতার থেকে মুক্ত করতে ৷ অন্ধকারে আলো জ্বালাতে দেশের জনগণের শিক্ষা বিনা সমস্ত স্বাধীনতাই আজ পরাধীনতার শিকলে বাঁধা ৷


 আমার দেশ স্বাধীন - কোনও হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করতে পারার অধিকারের স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি তাতে কোন সমস্যা নেই, হয়তো বা ৬০ কি ৭০ জন মানুষ মারা গেছে, ১৩০ কোটি জনসংখ্যাতে কোনো প্রভাব পড়বে না, দু-দিনের মধ্যে দরিদ্র সাধারণ মানুষ ভুলে যাবে, তারা কোনদিনও জানলো না যে সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারটা একটি স্বাধীনতা ৷দেশের বড় বড় মন্ত্রী মশাই প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড অট্টালিকা বানাচ্ছেন যার নাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ৷ তা দিয়ে নাকি স্বাস্থ্যখাতের রেঁনেসা জন্ম নেবে,তবে দুঃখের বিষয় হল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এর ভিতরে রোগীদের করুণ আর্তনাদ শুনলে বোঝা যায় যে কি বিপুলাকারে জনগণের সাথে প্রতারণা চলছে ৷ এক দল ক্ষমতাশীল মানুষ সাধারণ জনগণের অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার জন্য দেশের চরম ক্ষতি করে যাচ্ছে শুধু সাধারণ মানুষকে সামনে রেখে ৷ দেশের মধ্যে চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্য ভালো কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হচ্ছে, অর্থের বিনিময়ে শংসাপত্র বিক্রি হচ্ছে, আর যারা কিনছে তারা সেই অর্থ নিজেদের গৃহে পুনরায় গচ্ছিত করার জন্য সাধারণ মানুষের যে কোনো রকমের ক্ষতি করতে দ্বিধা করে না ৷ ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে দারিয়েও সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের সহ্য করে নিচ্ছে অশিক্ষার চাবুকের আঘাত ৷ তারা আজও জেনে উঠতে পারল না যে স্বাস্থ্যপরিষেবা একটি মৌলিক অধিকার ৷


 আমার স্বাধীন দেশের মধ্যে এখনও প্রতিদিন প্রকৃত কৃষককে আত্মহত্যা করতে হয় ৷ফসলের বীজ কেনার অর্থ নেই ৷ ঋণের অর্থ শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা কে মুক্তির সহজ উপায় বলে বেছে নিচ্ছে প্রকৃত কৃষকেরা ৷ "কৃষক সারাজীবন চাষ করে আর সারা জীবন ধরে ঋণের সুদের অর্থ শোধ করে"- সবচাইতে দুঃখের বিষয় হলো প্রকৃত কৃষকদের সামনে রেখে কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ আমাদের স্বাধীন দেশের স্বাধীন সরকারের কাছ থেকে স্বাধীনভাবে ঋণের টাকা তুলে নিচ্ছে ৷ তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি নেই এই স্বাধীন দেশের স্বাধীন সরকারের কাছে ৷ সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা দরকার কৃষকদের আর্থসামাজিক জীবনযাত্রা নিয়ে, কৃষকদের এখন প্রয়োজন বৈজ্ঞানিকভাবে কৃষি উন্নয়নের প্রশিক্ষণ ৷ সঠিক কৃষককে সঠিকভাবে চিহ্নিত করন প্রয়োজন, সাথে সাথে দরকার শিক্ষা ৷ শিক্ষিত কৃষক পারে নিজের অধিকার বুঝে নিতে ৷ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসলের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে ৷ ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে দাঁড়িয়ে আমাদের উচিত দেশের নাগরিকদের জন্য ন্যূনতম খাদ্যের সুনিশ্চিত বন্দোবস্ত করা, যাতে কিনা কোনও কৃষককে আত্মহত্যা করতে না হয় ৷

 বর্তমানে আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো অভিবাসন বা মাইগ্রেশন আমরা যদি সঠিক রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে না পারি বা সবকটি রাজনৈতিক দলগুলিকে অথবা দলের নেতা মন্ত্রীদের ন্যূনতম শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারি যে,"দেশের জন্য রাজনীতি, রাজনীতির জন্য দেশ নয়"— তাহলে মাইগ্রেশন কোনদিনও বন্ধ করা যাবে না ৷ভারতবর্ষের সীমানা সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে দৃষ্টি দিলে দেখা যাচ্ছে যে কি বিপুল পরিমাণে মাইগ্রেশন চলছে সমস্ত স্বাধীন প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে ৷ শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের সিংহাসনটি মজবুত করার জন্য তা বিনাবাধায় মেনে নিচ্ছে ৷ 

বর্তমানে রাজনৈতিক নেতাদের নূন্যতম শিক্ষার প্রয়োজন সবথেকে বেশি ৷এদের জানা বা অনুভব করা উচিত যে "দেশের ঊর্ধ্বে রাজনীতি নয়, রাজনীতির ঊর্ধ্বে দেশ"৷ নির্বাচন যায়, আবার ফিরে আসে কিন্তু যে মানুষটা একবার কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ঢুকে পড়ে সে আর কোনদিন ফিরে যায় না ৷দেশের প্রতি তার কতটা দায়িত্ববোঁধ জন্মায় সেটা বোঝার অনেক আগেই দেশের নাগরিকত্ব প্রমাণের দায়িত্ব তারা পূর্ণ করে ফেলে ৷স্বাধীন দেশ, সেও স্বাধীন, দেশের সে স্বাধীন নাগরিক ; তাকে কিছু বলা যাবে না ৷তাদের সাথে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল আছে যাদের একটাই স্লোগান —"তোমরা আমাদের ভোট দাও আমি তোমাদের সমস্ত কিছু করার স্বাধীনতা দেব"৷ ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রথম উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশুদ্ধকরণের সাথে সাথে দেশের প্রতি একটা দায়িত্ববোধের কথা সর্বদা মনে করিয়ে দেওয়া ৷ 

আমরা স্বাধীন — মঙ্গলেতে উপগ্রহ পাঠাচ্ছি ৷ বিশ্বে আমরা উন্নত হিসেবে পরিগণিত হব ৷ তবে নির্বাচনের সময়ে আজও এক্সিট পোলে বিচার করা হচ্ছে দলিত কটা ভোট দেবে,মুসলিম কটা ভোট দেবে, ব্রাহ্মণ কটা ভোট দেবে"৷ নিজেকে লজ্জিত বোধ করি, তাই আর উপগ্রহ নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করে না ৷মনে হয় কবি কেন লিখেছেন-"জাতের নামে বজ্জাতি সব"! এই দেশে আজও নেতা ঠিক করা হয় দলিল দেখে মুসলিম দেখে হিন্দু দেখে হায়রে মানুষ তোর তো কোন পরিচয়ই নেই মানুষের থেকে তো গরু ভালো,তাকেও রক্ষা করতে একদল আছে, তোর কে আছে ? তুই মানুষ পরে, আগে মুসলিম অথবা হিন্দু, আবার হিন্দু হলেই হবেনা দলিত হতে হবে অথবা যাদব হতে হবে ৷ ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে দাঁড়িয়ে আমরা নেতা নির্বাচন করি তার জাত দেখে, তার শিক্ষা দেখে নয় ৷ আমরা উন্নত দেশ ৷ এগোচ্ছি......৷ বর্তমানে একটি নতুন রাজনীতির ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে সেটা আরও বিপজ্জনক সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরু ৷ কিছু রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘু কে বিশেষভাবে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করছে আবার কিছু দল সংখ্যাগুরু কে বিশেষভাবে পাইয়ে দেবার রাজনীতি করছে ফলে জাতপাতের রাজনীতি তা চরম আকার ধারণ করছে ৷এই বিশেষভাবে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি ইংরেজের সময়কালেও দেখা গিয়েছে ৷তাহলে আমরা কোথায় স্বাধীনতা অর্জন করলাম ৷


আমার কাছে স্বাধীনতা মানে নারী-পুরুষনির্বিশেষে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কাজ করতে পারা ৷ চোখের সামনে একজন অসহায় মানুষকে দেখলে তার দিকে সাহায্যের হাত কারো অনুমতি ছাড়াই বাড়িয়ে দিতে পারার মধ্যেও আমি স্বাধীনতা খুঁজে পাই ৷যেখানে বিকৃত মনস্ক মানুষ শিশু কিংবা নারীর ওপর নির্যাতন চালায় সেখানে স্বাধীনতা আমাকে প্রতিবাদ করতে শেখায়,সেই প্রতিবাদ কোন রাজনৈতিক নেতার প্রভাবশালী দাদার ভয়ে ভীত না ৷ আমার স্বাধীনতার অভিধান জাত-পাতের ভেদাভেদ থেকে মুক্ত ৷চিকিৎসার নামে কোনো দুষ্ট জনকে প্রবঞ্চনার শিকার হতে হয় না ৷জনগণের মঙ্গলের তোয়াক্কা না করে দেশের নেতা মন্ত্রীরা যখন যা খুশি নিয়ম আরব করলে আমার স্বাধীনতা খর্ব হয় ৷স্বাধীনতা মানে আমি বুঝি সর্বস্তরে শিক্ষার ব্যাপ্তি ৷

স্বাধীনতা শিশু শ্রমিক চায়না, কাদা মাটি মেখে যে শিশুটি মাঠে খেলছে তার মুখের হাসিতে আমি স্বাধীনতাকে দেখতে পাই ৷৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের দাঁড়িয়ে আমাদের ভাবা উচিত দেশের উন্নতি তখনই সম্ভব যদি সঠিক নেতৃত্বের সন্ধান পাওয়া যায় ৷আমাদের সবার উচিত দেশের স্বার্থে ও নিজেদের স্বার্থে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে রাজনীতিকে খুব গভীরভাবে ভাবা ৷ দেশের নাগরিকরা ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয় নিজেদের স্বার্থে দেশের স্বার্থে ভালো নেতার দরকার ৷ব্যক্তিত্ব বিনা ভালো নেতৃত্বের জন্ম হয় না ৷


পচা পাঁকে বাস করে পংকজ সর্বদা পাওয়া যায় না ৷তাই প্রথমে উচিত পচা পাঁক সরিয়ে ভালো সরোবর তৈরি করা, তাতে নিশ্চিত পদ্ম ফুটবে ৷

তাই সমাজের কল্যাণে এবং সমাজকে বাঁচাতে দেশের সকল শিক্ষিত নাগরিক এবং জনগণের একত্রিত ভাবে উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশুদ্ধকরণ করা ৷নচেত্ দেশের ও দশের উন্নতি সম্ভব নয় ৷ রাজনীতির বাইরে কিছু হয়না; মহাভারত হতে বাইবেল, কোরান সর্বত্রই শুদ্ধ রাজনীতির ছাপ পরিষ্কার দেখা যায় ৷'


কোন মানুষই রাজনীতির ঊর্ধ্বে নয়, রাজনীতি দেশের ঊর্ধ্বে নয়'৷ অতএব সব উন্নতির, সব স্বাধীনতার, সব রাজনীতির সঠিক নেতৃত্বের দরকার, সঠিক প্রজার দরকার, শিক্ষার দরকার, ভক্তির দরকার,ত্যাগের দরকার, আদর্শের দরকার, দায়িত্ববোধের দরকার, মানুষের দরকার ৷ মানুষ চাই, মান আর হুঁশ দুটি যার আছে "মানুষ" যে জানে "আমি আত্মা! আমি ভগবান! আমি অশেষ!আমি অজেয়!আমি সে!আমি সে! আমি সে!" ঠিক এমনই মানুষের প্রয়োজন এবং এমনই নেতৃত্বের প্রয়োজন এবং এমনই একটি সঠিক দলের প্রয়োজন যা দেশের কল্যাণের অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ৷ সমাজের পরিকাঠামো কে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে এবং তা সম্ভব, সঠিক নেতৃত্বের পরিচালনার মাধ্যমে; যা গোটা দেশকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করবে এবং এই সবকিছুর মিলিত প্রয়াসই একমাত্র পারে স্বাধীনতাকে প্রকৃতরূপে প্রতিষ্ঠা করতে ৷ সেইদিন নিশ্চিতই আসবে,তাই সেই আশা রেখেই আমাদের সেই আলোর পথে চলতে হবে৷ প্রকৃত স্বাধীনতা ফিরুক, স্বাধীন হোক প্রকৃতরূপে আমাদের দেশ, যা মানুষের সকল দুঃখ জ্বালাকে দূর করবে এবং ভারতমাতার ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নকে পূর্ণতার মাধ্যমে তাদের আত্মবলিদানকে সফল করবে,আর তাতেই তাদের আত্মা সত্যিই শান্তি পাবে ৷

 

 তাই সকলে মিলে একত্রিত হয়ে আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতাকে ফেরাতেই হবে —"স্বাধীনতা আমাদের অধিকার,প্রকৃত স্বাধীনতাকে ফেরাতেই হবে...."

  ** জয় হোক মনুষ্যত্বের, জয় হোক মানুষের...জয় হোক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা সংগ্রামীদের,জয় হোক লাঞ্ছিত-বঞ্চিত সকল মানুষের,জয় হোক আমাদের অধিকারের...শীঘ্রই ফিরুক সকলের চেতনাশক্তি,মনুষ্যত্ববোধ,প্রতিবাদীশক্তি...জ্ঞানের প্রদীপ জ্বলুক...স্বাধীন হোক দেশ,স্বাধীন হোক সকল অধিকারের পথ,অন্ধকার থেকে প্রকৃত আলোয় ফিরুক দেশ...সকল মানুষের প্রাপ্ত অধিকারগুলি পূর্ণ হোক..পূর্ণ হোক..পূর্ণ হোক— এই কামনাই আমার.........**


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action