Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
396


একশততম অধ্যায়

শিউলির মা বললেন - আছে আরও , যেমন তিলকাঞ্চন শ্রাদ্ধ, দানসাগর শ্রাদ্ধ ইত্যাদি ।

বড়দা বললেন- বৃষোৎসর্গ মানে তো একটা জ্যান্ত ষাঁড়কে ত্রিশুল আগুনে লাল করে ছেঁকা দেওয়া?অমানবিক ওটা । ওটা বাদ দিয়ে ভাবতে পারেন ।

- তবে তো রইল দানসাগর মানে রাজারাজড়াদের ব্যাপার আর তিল এবং কাঞ্চন সহযোগে ব্রাহ্মণ ভোজন করানোর একটা বিধান আছে ।

- ঠিক আছে, কাল আমরা পুরোহিত ডেকে সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নেব । পুরোহিত মশাই কি বলেন সেটাও দেখতে হবে ।

আমি বললাম - উনি আর কি বলবেন । আমরা যা বলব সেইমত কাজই হবে ।

গোপা এবং রূপা বলল - তিল কাঞ্চনই হোক । শ্রাদ্ধ তো শ্রাদ্ধই । এতে বাহুল্য দেখাবার প্রয়োজন কি ?

বড়দা বললেন - ঠিক কথা বলেছ বউমা । তাহলে ওটাই ঠিক হল - তিলকাঞ্চন শ্রাদ্ধ ।

বুকুন বলল - আর ব্রাহ্মণ ভোজন ? আমি বলছিলাম শুধু ব্রাহ্মণ কেন, পাড়া প্রতিবেশীদেরও খাওয়ানো হোক ।

বড়দা বললেন- শ্রাদ্ধের জন্য নেমন্তন্ন করে খাওয়ানো আমার নীতিবিরুদ্ধ। তার চেয়ে বীরেশ্বর এবং ত্রিলোকেশ্বরের পাপের টাকায় কাঙালি ভোজন করালে ওঁদের পাপ কিছুটা স্খালন হতে পারে ।

আমি বললাম - আমারও তাই মত ।

শিউলির মা বললেন - আমরা হিন্দু ঘরের মানুষ। শাস্ত্রীয় লোকাচার কিছু তো মেনে চলা উচিৎ। তাই বলছিলাম কাছাকাছি প্রতিবেশী, আত্মীয়বর্গ , বন্ধু বান্ধব এবং অন্তত বারোটি ব্রাহ্মণকে ভোজন করিয়ে শ্রাদ্ধবাসর শেষ হোক।

বড়দা বললেন- সে না হয় করা যেতেই পারে ।

গোপা বলল - সুনেত্রা বলছিল অনাথ আশ্রমে কিছু দান করলে হত ।

বড়দা বললেন- কোরো । এতে কি আপত্তি থাকতে আছে ?

রূপা বলল - ত্রিলোকেশ্বরের শ্রাদ্ধও হবে নাকি?

আমি বললাম - হচ্ছে যখন দু'জনেরই হোক না হয় ।

বড়দা বললেন- হবে তো ! এক সঙ্গে দুটো শ্রাদ্ধই হবে । আমরা তো এখানে সবাইকে জানি না ; এ বিষয়ে বউমা তোমরাই আয়োজন কর । আমরা বাকি সব ম্যানেজ করে দেব ।

নির্বিঘ্নে শ্রাদ্ধ শান্তি পর্ব পেরিয়ে গেল । অন্তত হাজার বারোশ' গরীব দুঃখীদের ভোজন করিয়ে দুই দুর্বৃত্তের আত্মাকে সন্তুষ্ট করার প্রয়াস কতটা সফল হয়েছে তা' মর্ত্যে বসে তো আর জানা যাবে না ।

তথাপি বড়দার মনে একটা অদ্ভুত প্রশান্তির ছায়া দেখতে পেয়েছি ।

- ভাগ্য করে এসেছিলেন ওঁরা । সারাজীবন অসামাজিক আচরণ, খুন, করেও পার পেয়ে গেলেন ।

গোপা বলল - এ তো শুধু আপনারই বদান্যতায় বড়দা ! আমরা আমাদের উত্তরাধিকারও পেলাম । আশা করি এই বাড়ীতে আর কোন অঘটন কোনদিন ঘটবে না ।

- তোমাদের বলা হয়নি । আমার মনে হয়েছে বীরেশ্বর রক্ষিত কোন ক্ষতি করবেন না ; তা না হলে তিনি মরার পর আমাকে হেল্প করতেন না ।

আমি বললাম - আমিও তাই বলি । যা দেখেছি সেদিন আগেকার কাজের সঙ্গে ভীষণ অমিল পেয়েছি । বলতে গেলে পুরো উল্টোরকম ।

গোপা বলল একবার যদি দেখতে পেতাম!

রূপা বলল - ত্রিলোকেশ্বরকে যেন কখনো দেখতে না পাই ।

তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে । কোন ঝড় জল কিছু নেই ; হঠাৎ ছাদের উপর পা তুলে দাপাদাপির শব্দ শোনা গেল । শিউলিরা সকলেই চিনার পার্কে চলে গেছে । বাড়ীতে আমরা মাত্র কয়েকটি প্রাণী ।

কান সজাগ রেখে সবাই ছাদের দিকে গেলাম। দরজা এমনিই বন্ধ থাকে । তখনও ছিল । দরজার সামনে গিয়ে সবাই শুনল ছাদে যেন তাণ্ডব চলছে ।

কেউ দরজা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে , অন্যজন তাকে দুমদাম লাথি মেরে ফেলে দিচ্ছে । আমরা ছয়টি প্রাণী স্বকর্ণে শুনছি আর চোখের পর্দায় সেই দৃশ্য দেখছি যেন।

সুনেত্রা গোপাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। রূপাও তাই । বুকুন দরজা খুলে দেখতে চাইল ।

বড়দা বললেন - উঁহু ! এখন একদম সে চেষ্টা করবে না । অনর্থক দুর্ঘটনা ঘটে যাবে ।

বুকুন বলল - চোর ডাকাত নয় তো !

আমি যেটুকু অনুভব করলাম আমার মনে হল ছাদে দু'ভাইয়ের মল্লযুদ্ধ চলছে । বললাম - চোর ডাকাত হলে এতক্ষণে দরজা ভেঙে ফেলত । আমার মনে হয় বীরেশ্বর এবং ত্রিলোকেশ্বরের মধ্যে লড়াই চলছে ।

বড়দা বললেন - তুই ঠিক বলেছিস ভাই । আমারও তাই ধারণা ।

রূপা বলল - এখন কি হবে ?

গোপা বলল - বাবা যদি হন; তবে কাকাইকে ঠিক জব্দ করবেন ।

আমরা তারই প্রতীক্ষা করছি । এক সময় তুমুল হুঙ্কার ধ্বণি শোনা গেল । বাগানের গাছগুলোয় পাখিরা কিচিরমিচির শব্দ করতে লাগল । কয়েকটা পথের কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠল । পাশের বাড়ীর আলোগুলো জ্বালিয়ে ওঁরাও জানালা খুলে দেখতে লাগলেন । হয়তো শব্দের দিক ঠিক করতে না পেরে এদিক সেদিক পায়চারি করতে লাগলেন ।

একটা থমথমে পরিবেশে আমরা ক'জন প্রহর গুনছি । এক সময় ছাদ থেকে কিছু একটা পতনের শব্দ পাওয়া গেল ; সঙ্গে এক আকাশ আর্তরব ।

বড়দা বললেন - যুদ্ধ শেষ ।

বুকুন বলল - এবার দরজা খুলি তা'হলে ।

গোপা বলল - এটা তোর অফিস চত্বর নয় । বরং পুলিশে খবর দে !

বড়দা বললেন - কিছু করতে হবে না । ত্রিলোকেশ্বরের পতন এবং বীরেশ্বরের পরিবর্তন হয়েছে । আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর সবাই । কিছু একটা ভালো সঙ্কেতই পাবে ।

আরও পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট অপেক্ষার শেষে একটা বিকট হাসির শব্দ শোনা গেল ।

' ভাই বলে এতদিন মুখ বন্ধ করে ছিলাম । আজ জীবনের সব জ্বালার অবসান করে দিলাম। আমার সংসারের ধূমকেতু এবার ফল ভোগ করগে' যা । নিজের বউকে মেরেছিস, আমার বউকেও ছাড়িসনি - লোকচক্ষুর অন্তরালে পিস্তলের গুলিতে শেষ করে দিয়েছিস । আমার মেয়েদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিস । পাপী ত্রিলোকেশ্বর এবার নরকেশ্বর নামে ফলভোগ কর । হা হা হা ।

পরমুহূর্তেই সব চুপচাপ হয়ে গেল । দরজা আপনা আপনি খুলে গেল । বীরেশ্বর চললেন বীরদর্পে নক্ষত্রলোকে ; যেখান থেকে তাঁকে আর কোনদিন কেউ দেখতে পাবে না ।

বড়দা সহ আমরা সকলে ছাদে উঠে কিছুই দেখতে পেলাম না । অথচ যে নাটক এতক্ষণ অভিনীত হয়ে গেল তার দর্শক এবং শ্রোতা হিসাবে স্মৃতির পাতায় খচিত হয়ে গেল ।

গোপা এবং রূপা নিজেদের পরস্পরকে বুকে জড়াল । আমি বুকুন ও সুনেত্রাকে ধরে রইলাম ।

বড়দা বললেন - এর কি কোন ব্যাখ্যা দেওয়া যায় ? রক্তের সম্পর্ক কখনও মুছে ফেলা যায় না ; তাই না রে ভাই ?

আমি বললাম - লঙ্কেশ্বরের মনেও যে এত প্রেম ছিল আজ বুঝতে পারছি ।

- তোর আফশোষ হচ্থে না ?

আমি ওঁর মুখের দিকে চাইলাম ।

- মনে করে দেখ তোর কথামত সেই অভিশপ্ত রাতের কথা ; যে রাতে বউমার সঙ্গে তোর ঘনিষ্ঠতা তিনি কৃত্রিম উপায়ে ঘটিয়েছিলেন ; তার ফসল যা তুই এখন পেয়েছিস দীর্ঘকাল পরে ; যদি নিজে থেকে সেই সময় মানিয়ে নিতে পারতিস তবে তোর জীবনটাও অন্য খাতে বইত । বউমাকেও দীর্ঘ যন্ত্রণা সহ্য করতে হত না । আর রূপা মা ; তোমাকে তো আমি কুর্ণিশ জানাই সুনেত্রার মত একটি পুতুল হাতে পেয়েছ বলে ।

সুনেত্রা খুশীর আতিশয্যে বলে ফেলল - সবই তো শুনলাম কিন্তু আমার বাবার খোঁজ তো নিলেন না !

চমকে গেলাম সকলেই । এখনও সুনেত্রার মনে কি দ্বিধা রয়ে গেছে ?

( চলবে )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller