Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

6 mins
373


সপ্তাশীতিতম অধ্যায়

ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত থানায় লালবাজারে ফোন করে চলেছেন । আমি এবং বড়দা ওদের দুজনকে বাইরে রেখে ভেতরে গিয়ে ঢুকেছি । ত্রিলোকেশ্বর ঝাঁঝিয়ে উঠলেন - গেট আউট ট্রেসপাসার্স । পুলিশ ইজ কামিং।

বড়দা এবার নিজের স্বরূপ ধরে বললেন - চিনতে পারছেন মিঃ ত্রিলোক ত্রৈম্বকেশ্বর রক্ষিত । আমি মিঃ জ্যাকসন ওরফে উৎসব রায়চৌধুরী আপনার সম্মুখে কথা বলছি ।

পুলিশ ডেকে কোন লাভ নেই । আমি ওঁদের আসতে মানা করে দিয়েছি । কেউ আসবে না । অথচ জানালা খুলে দেখুন এলাকাটা পুলিশ ঘিরে রেখেছে ।

- তার মানে ষড়যন্ত্র ! ষড়যন্ত্র করে ...

- না । ষড়যন্ত্র নয় অষ্টযন্ত্র । ষড়যন্ত্রে কাজ হয়নি বলে আমাদের দুই ভাইকেও মাঠে নামতে হয়েছে । আপনি হয়তো জানেন না খোদ পুলিশ কমিশনার, মিঃ সন্তু মুখার্জী, এস ডি পি ও বারাসত এই গেম খেলেছেন । আমরা তো দাবার গজ এবং নৌকো । আর যে দু'জনকে আপনি নেমন্তন্ন করে বাড়ীতে এনেছেন ওরা হল বোড়ে । নিজে মরবে কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ছাড়বে না ।

ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত বড়দার পায়ে পড়লেন ।

- এবারটির মত বাঁচান মিঃ রায়চৌধুরী। ভবিষ্যতে দ্বিতীয়বার কোন কুকাজ করব না । এই আমি ঠাকুরের পা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করছি ।

বলে দেয়ালে টাঙানো শ্রীরামকৃষ্ণের পায়ে হাত দিলেন।

আমি বললাম - দুর্বৃত্তকে হাতের মুঠোয় পেয়ে ছেড়ে দেওয়া তো বোকামী শ্বশুর মশাই !

- পুলক তুমিও ? তুমি না আমার জামাই ? আমার গোপামা'র স্বামী ?

- বড় দুর্ভাগ্যজনক সম্পর্ক শ্বশুর মশাই । লঙ্কেশ্বরও এত ভয়ঙ্কর ছিলেন না । আপনি তো তাঁর উপরে অধিষ্ঠান করেন। আপনি না তাঁর ছোটভাই ?

- ভুল করেছি । ভুল করেছি । সেদিন বাবলুর উপর প্রতিশোধ না নিয়ে তোমাকে শেষ করে দিলে হয়তো দাদার আত্মা শান্তি পেত । মারিনি কেন জান ? এই সম্পর্কটার খাতিরে ।

- আপনি সুনেত্রাকে উল্টোপাল্টা কথা বলে কি ভেবেছিলেন আমাদের পরিবারে অশান্তির আগুন জ্বালাবেন ?

- সুনেত্রা ? ও হো হো । ওই বেজন্মা ছুঁড়িটা !

বড়দা হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন - মুখ সামলে কথা বলুন মিঃ রক্ষিত । আপনার নিজের জন্মবৃত্তান্ত জানেন কি ?

হাসলেন ত্রিলোকেশ্বর । খুব দুঃখ পেলে যেমন হাসি পায়, ঠিক তেমনি একরাশ মলিনতা যুক্ত হাসি ।

বড়দা বললেন - সত্যি করে বলুন তো ! আপনি কি সত্যিই বীরেশ্বর রক্ষিতের সহোদর ?

- কোই শখ ?

- বিলকুল ।

বড়দা বললেন - আপনি ত্রৈম্বকেশ্বর রক্ষিতের জারজ সন্তান ।

- মুখ সামলে কথা বলুন মিঃ রায়চৌধুরী! নইলে প্রাণ হাতে করে আর বাড়ী ফিরতে পারবেন না ।

- আগে আপনি প্রাণে বাঁচুন । তারপর দেখা যাবে । তবে সেলিমকে আপনি অসাধারণ কর্মী বেছেছেন - মানতেই হবে । আপনাকে সোনু মেরেছে দেখে সোনুকেও শেষ করে দিল ! আসলে সোনু তো মরেনি ।

- হা হা হা ! সেলিম আমার চেনাজানা প্রাক্তন পুলিশ অফিসার । সোনু মনু কেন আপনাকেও যে কোন সময় মেরে দিতে পারে । আর জানেনই যখন এমন বিপজ্জনক খেলায় মেতেছেন কেন ?

আমি বললাম - বড়দা! আপনার ইন্টারভিউ শেষ হলে আমাকে বলবেন - আমারও কিছু জিজ্ঞাস্য আছে। আমি একটু বাইরেটা দেখে আসি মিঃ ভট্টাচার্য্য ও মিঃ মুখার্জী এসেছেন কি না ।

ভেতরে ওঁরা কথা বলছেন । আমি বাইরে বেরিয়ে সেলিম ও সোনুর সঙ্গে দেখা করলাম ।

সেলিম বলল - আর কতক্ষন এ ভাবে রইব স্যার ? হাতটা যে নিসপিস করছে ।

আমি ওকে বললাম - মিঃ মুখার্জী বললেন প্ল্যানটা একটু এদিক ওদিক করতে । মানে এবার গুলি করবেন আপনি । সোনু নিষ্ক্রিয় থেকে আপনাকে পলায়নের ব্যবস্থা করে দেবে ।

পুলিশকে বলা আছে পিছনের দরজায় কেউ থাকবে না । আপনি কাজ হাসিল করে নি:শব্দে পালিয়ে যাবেন ।

সোনুকে আমরা নিয়ে যাব । আর সোনুর পিস্তলটাতেই গুলি করবেন । পুলিশ যেন ভাবে একই পিস্তল থেকে দুই ত্রিলোকেশ্বর মরেছে ।

সেলিম তার দুর্বিনীত স্বভাবের জন্য আমার কথাগুলো মেনে নিল ।

সোনুকে চোখের ঈশারায় সেলিম বেরিয়ে এলেই মেরে ফেলতে বললাম । অপরাধীরা আর কিছু বুঝুক বা না বুঝুক অপরাধ করতে তাদের কোন সমস্যা নেই । হাতের বুড়ো আঙুল এবং তর্জনীতে নীরব শব্দ করে ওর পাওনা সম্বন্ধে আশ্বস্ত করলাম ।

সেলিমকে বললাম - চলুন ভেতরে । ত্রিলোকেশ্বর অপেক্ষা করছেন।

সেলিম ঢুকতেই ত্রিলোকেশ্বর ওকে জড়িয়ে ধরে বললেন - তুই আমার যোগ্য সহকারী । এঁরা দেখ আমাকে কত জ্বালাতন করে চলেছে । এদের উচিত শিক্ষা দিতে পারবি তো ?

-একবার হুকুম করেই দেখুন কর্তা । কি হাল করি এদের !

- তবে আমার চোখের সামনেই এই দুটোকে খতম করে দে । এখনই ।

সেলিম প্রস্তুত হয়ে নিল । প্রথমে আমাকে এবং বড়দাকে ত্রিলোকেশ্বরের দিকে সরে যেতে বলল । সেলিম বলল - আগে কে যাবে কর্তা ?

- আমার জামাই বাবাজীবন ! ওই হারামজাদাই এই ফেউটাকে আমার পিছু ছেড়ে দিয়েছে ।

সেলিম পিস্তল তাক করল আমার ঠিক কপালে যাতে একটা গুলিতেই কাজ শেষ হয়ে যায় ।

ত্রিলোকেশ্বর কুটিল হাসি হেসে উপভোগ করতে লাগলেন।

বড়দা এবং আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম । নিমেষে পিস্তল ঘুরে গেল ত্রিলোকেশ্বরের দিকে । তিনি তখন শেষ হাসি হেসেই চলেছেন ।

তারপর গুড়ুম ! শুধু আওয়াজটাই উঠল । আমি দেখলাম, বড়দা দেখলেন, সেলিমও দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে গেল ।

আমি বললাম - পেছনের গেট দিয়ে চলে যান । কেউ বাধা দেবে না । কুইক !

সেলিম রুম থেকে বেরিয়ে গেল । কয়েক সেকেণ্ড পর আমিও বেরেলাম । ঠিক গেটের কাছে পৌঁছাতেই সেলিম মুখ থুবড়ে পড়ে গেল । আরও একটা গুলি করে সোনু পালাবার চেষ্টা করছিল । কোথা থেকে বড়দা এসে অব্যর্থ নিশানায় গুলি ছুঁড়লেন । সোনু পপাত ধরণীতলে ।

কাছে গিয়ে বললাম - তোমার পাওনা শোধ হয়ে গেল সোনু যাদব । এবার মর্গে গিয়ে নিরুদ্দেশ হও ।

অধীর অপেক্ষা আর সহ্য হচ্ছিল না মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যের। বড়দাকে ফোন করে বললেন - আর কতক্ষন?

- হয়ে গেছে । নির্লিপ্ত গলায় বড়দা বললেন - এবার আপনারা এসে পরবর্তী কাজগুলো করে নিন । আমরা আসি । আর ভেরি সরি টু সে ; সেলিমকে বাঁচানো গেল না । সোনু যাদব ওকে মেরে ফেলল । সো সরি স্যার ।

মিঃ ভট্টাচার্য্য বললেন - নো ম্যাটার । কমিশনার আমাদের সে কথা বলে দিয়েছেন । আমরা এখন ভেতরে আসছি । আপনারা চলে যান বাড়ী ছেড়ে ।

আমরা পিছনের গেট দিয়েই বেরিয়ে গেলাম । হুড়হুড় করে পুলিশ দল ঢুকল ভেতরে । তাদের বুটের শব্দে আমাদের জুতোর আওয়াজ ঢাকা পড়ল ।

আমরা ধর্মতলার দিকে রওনা দিলাম । একটা ভলভো বাসে উঠে পড়লাম । বড়দা বলল - আমার একটা জিনিস মাথায় আসছে না ; বাড়ীতে গিয়ে কি দেখব ?

আমার ভয় হল । বাড়ীতে আবার কি হয়েছে !

বললাম - কেন ?

- ওই যে সুনেত্রার কথাটা!

- ও ঠিক ম্যানেজ করে নেব । আর নিউজে তো দেখল বলে অমুক দলের প্রার্থী ত্রিলোক ত্রৈম্বকেশ্বর রক্ষিত রহস্যজনক ভাবে নিজের বাড়ীতে খুন হয়েছেন । তখন কি আর ও সব কথা কারও মনে থাকবে ?

- তা' যা ' বলেছিস । আর একটা কথা তুই কি করে বুঝলি আমরা যার ইন্টারভিউ নিচ্ছিলাম সেইই ত্রিলোকেশ্বর ! তার ডামিও তো হতে পারত !

- অবশ্যই হতে পারত । আমি দেখেছি ডামি ত্রিলোকেশ্বরের বাঁ হাতের কনুইয়ের নীচে কোন জড়ুল নেই । আর যে ত্রিলোকেশ্বর আমাদের ইন্টারভিউ দিচ্ছিলেন তিনি আজ হাফ হাতা পাঞ্জাবি আর ধুতি পরেছিলেন।

- এই তো দেখছি তোর বুদ্ধি খুলে গেছে । নাহ্ এবার তুই সাফল্য পাবিই বলে রাখলাম ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime