STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
234

সপ্তনবতিতম অধ্যায়

পুলিশ কমিশনার নিরুপম সোম , মিঃ সন্তু মুখার্জী , আর মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যকে রিসিভ করে তিনতলার ফ্ল্যাটে এনে বসালেন । প্রথামাফিক আপ্যায়ন শেষে বড়দা বললেন - এবার বলুন, কি বা হেতু আগমন তব !

মিঃ সোমকে দেখে মনে হল তিনি পদ গরীমার অনাবশ্যক হানি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে আছেন। সেই তুলনায় মুখার্জী এবং ভট্টাচার্য্য সাহেব অনেকটাই নরমাল ।

মিঃ সোম বললেন - আপনি কি ভিডিওটা দেখেছেন?

বড়দা বললেন - আমি কেন, পরিবারের সকলেই দেখেছেন।

- তাঁদের মনে কি রিপার্কাশন হয়েছে বলে আপনার ধারণা?

- চোরের রাজত্বে মহতের যা দশা হয় !

- ওহে মুখুজ্যে, ভটচাজ কি হবে এবার ? আমি তো ইস্তফা দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, তোমরা কি করবে ?

ওঁরা দুই জন একই কথা বললেন যে তাঁদের সংসার আছে, এখনই সন্ন্যাস নেবার ইচ্ছে নেই ।

কমিশনার বিরক্ত হয়ে বললেন - আ: সন্ন্যাস নিতে কে বলেছে ? তোমরা কি চাকরিতে বহাল থাকবে নাকি ইস্তফা দেবে ?

বড়দা বললেন - আপনারা এমন অন্যায় কাজ করলেন কেন ? তখনই তো রিজাইন দিতে পারতেন ! এবার বলুন তো কত টাকা খেয়েছেন তিন জনে মিলে ?

সোম খেপে গেলেন - টাকা ? আমাদের টাকা দেবার সাহস করে কোন শালা ? টাকাই যদি নিতাম তবে বীরেশ্বর আর ত্রিলোকেশ্বরকে খতম করার পরিকল্পনা করতাম না ।

বড়দা বললেন - সে কথা কি আদালত মানবেন ? ভিডিওতে একটু হলেও আপনাদের তিনটি মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । এখন ল্যাবে যদি পরিষ্কার হয়ে যায় ওগুলো আপনাদের তবে তো ফাঁসবেন নি:সন্দেহে ।

মিঃ সোম বললেন - সেজন্যই তো আপনার কাছে আসা ।

বড়দা বললেন - কে এই ডিডিও সম্প্রচার করেছেন আপনারা কিছু জানেন ?

- এখনও তদন্ত করা হয়নি ।

- আমার হয়ে গেছে ।

- এরই মধ্যে আপনি জেনে ফেলেছেন কালপ্রিট কে ?

ওঁরা তিনজন ভীষন উত্তেজিত হয়ে উঠলেন - কে ? কে ?

বড়দা বললেন - অস্থির হবেন না । ধীরে ধীরে জানতে পারবেন ।

মিঃ ভট্টাচার্য্য বড়দার হাত ধরে বললেন - প্লীজ, নামটা বলুন। কালপ্রিটকে এরেস্ট করে আনি ।

বড়দা বললেন - এত অধৈর্য্য হলে চলে ? তিনি পালাতে পারবেন না । আমি ওঁকে অলরেডি ধরে এনেছি।

- ধরে এনেছেন ? কোথায় সে ? চাবকে পিঠের ছাল তুলে দেব না ! মিঃ মুখার্জী উত্তেজিত হয়ে বললেন ।

বড়দা বললেন - আস্তে । এটা আপনার লালবাজার নয় ।

মিঃ সোম বললেন - মুখুজ্যে , এই তোমার বড় দোষ । একশন নিতে এক্সপার্ট ।

মিঃ ভট্টাচার্য্য বললেন - আমারও খুব রাগ হচ্ছে স্যার । বেটাকে পেলে পিটিয়ে তুলোধোনা করতাম ।

বড়দা মুখে আঙুল দিয়ে 'উসসস ' করছ শিস দিয়ে উঠলেন।

- আস্তে ! সবাই শুনতে পাবে । উনি পাশের ঘরেই আছেন । আপনারা বসুন । আমি নিয়ে আসছি ।

বড়দা উঠে গেলেন । ডক্টর ভরদ্বাজকে নিয়ে এসে চতুর্থ চেয়ারে বসিয়ে বললেন - ডক্টর সাহেব ! এঁদের চেনেন নিশ্চয় , তাই আর নতুন করে ইন্ট্রোডাকশন দিচ্ছি না । এঁদের বলুন আপনি এমন কাজ করলেন কেন ?

- মিঃ রায়চৌধুরী ! আমি ডাক্তার । সাধারণ এম বি বি এস নয় , রীতিমত পড়াশোনা করে এ টু জেড ডিগ্রী নিয়ে স্পেশ্যালাইজেন করেছি । আমি কুৎসিত রাজনীতির শিকার । শুধু আমি ধয় ; আমার মত আরও দশজন ডাক্তার শিকার হয়েছি । টাকার খেলা খেলবেন ওঁরা আর আমরা তাঁদের বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দেব - তাঁরা মজা লুটবেন - এ জিনিস বন্ধ না হলে রাষ্ট্রের কল্যাণ করা যায় কি ?

মিঃ সোম বললেন - ও আপনি দেশোদ্ধারে নেমেছেন বুঝি?

- দেশোদ্ধার কি না বুঝি না; তবে আমি এ ভাবেই প্রতিবাদ জানিয়েছি । আর আমি কেন আমরা এগারোজন ডাক্তার মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ কাজ করেছি । আপনারা তিনজনও তো পার্টি ছিলেন ; আপনারাও তো নীরব দর্শক থেকেছেন । আপনাদের বিবেক সাড়া দেয়নি কেন ?

মিঃ মুখার্জী এবং মিঃ ভট্টাচার্য্য তখন রাগে লাল হয়ে গেছেন। নেহাৎ কমিশনার সামনে বসে আছেন তাই কোন প্রতিক্রিয়া দিলেন না ।

বড়দা বললেন - ডক্টর ভরদ্বাজ ! আপনি হাসপাতালের সঙ্গে কত বছর যুক্ত আছেন ?

- তা' প্রায় এক যুগই বলতে পারেন ।

- ও সব যুগ-টুগ বুঝি না । বছর হিসেব করে বলুন।

- বারো বছর ।

- এই বারো বছরে আপনি কতগুলো রোগী দেখেছেন, কতগুলো রোগী সারিয়ে তুলেছেন, আর কতগুলোই বা মারা গেছে ?

- সে তো হাসপাতালের রেকর্ডে আছে । আমার মনে নেই ।

- তাই স্বাভাবিক - যেমন স্বাভাবিক মন প্রকৃতিস্থ করে কাজ না করা । যার ফলে আপনি এমন এক হঠকারিতা করে বসেছেন ।

- আমি কি ভুল করেছি ?

- ডক্টর ভরদ্বাজ ! আপনার কাজের বিচার করার আমি কে ? আমার কাজ হল আপনার কাজের চুলচেরা হিসাব করার । সেই হিসাব বলে যে আপনি ভুল করেছেন। করার আগে বেশ কিছুবার ভাবা উচিৎ ছিল - কার হিতে বা বিপরীতে আপনি এই কাজ করছেন।

যে ভিডিওটি আপনি প্রচার করেছেন তা' যদি হাসপাতাল মালিক মিঃ ঝুনঝুনওয়ালার এগেইনস্টে যেত কিছু বলার ছিল না । এখানে হেভিওয়েট রাজনীতিক যার একজন বর্তমান এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যজন বিরোধী দলের নেতা । শুধু তাই নয় ; স্বয়ং পুলিশ কর্তা এবং তাঁর সুযোগ্য দু'জন ধুরন্ধর পুলিশ অফিসারও রয়েছেন। এখন তো আপনার গর্তে পড়ে যাওয়া হাতির দশা হয়েছে। কি করবেন? আদালত কি আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারবেন ?

- ভবিষ্যতে কি হবে সব সময় তো তা' চিন্তা করা হয় না । যেমন ধরুন একজন রোগীকে যে ওষুধটি দিচ্ছি তার রোগে সেটিই কার্য্যকরী ; কিন্তু তার এফেক্টে যদি রোগীর ক্ষতি হয় তবুও তো প্রয়োগ করতেই হবে ।

- এখানেই তো ভুল হচ্ছে স্যার । যে ওষুধটি আপনি ভি ভি আই পিদের উপর প্রয়োগ করেছেন তা' যে ব্যুমেরাং হয়ে আপনার দিকে ফিরে আসতে পারে সেটা বুঝলেন না কেন ?

কমিশনার সাহেব বললেন - আপনাদের সব ক'টাকেই এরেস্ট করব । আদালত তো বলেই দিয়েছেন প্রচারককে ধরতে ।

- সে আপনি করতেই পারেন। তাতে তো এটা প্রমাণিত হবে না যে আপনারা একটা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন না। বরং দেশশুদ্ধ সবাই জেনে যাবে পুলিশ এবং প্রশাসন মিলে দেশকে কি ভাবে শোষণ করে যাচ্ছে । জনগণের সামনে আপনাদের মুখোশ খুলে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা ।

- আ-প-না-দে-র ! মানে আপনারা এগারোজনই কি এতে যুক্ত ।

- প্রথম থেকেই বলে আসছি আমরা আলোচনা করে তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি । এমনকি আইনি পরামর্শও নিয়েছি ।

তিন পুলিশ অফিসার পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন।

বড়দা বললেন - কিন্তু ডক্টর ভরদ্বাজ ! ছবিতে হলেও আমি কেন অনেকেই দেখেছেন হায়েনার দল চিতাবাঘের মুখ থেকে শিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে । আপনাদের তেমন কিছু হবে না তো ?

- আমরা ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি । তেমন পরিস্থিতি এলে তার জন্যও আমরা প্রস্তুত ।

- তার মানে আপনারা ডিটারমিনড যা করেছেন ঠিক করেছেন।

- মিঃ রায়চৌধুরী ! আমি চেম্বার ছেড়ে এসেছি। আর কোন জিজ্ঞাস্য থাকলে বলুন ; নতুবা এবার আমি আসি ।

কমিশনার সাহেব বললেন - আসতে পারেন। আমাদের যা জানার ছিল , জেনে নিয়েছি । এবার দেখা হবে লালবাজারে ।

( চলবে )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime