STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

6 mins
325

অষ্টনবতিতম অধ্যায়

ডক্টর ভরদ্বাজ চলে গেলেন । বোধ করি এই আলোচনা সভারও একটা ভিডিও করে ফেলেছেন গোপনে । আমি দেখেছি ওঁর বুক পকেটের পেনটা নিয়ে মাঝে মাঝে আলোচনার বিষয়বস্তু নোট করে যাচ্ছেন । মিঃ ভট্টাচার্য্য প্রশ্নও করেছিলেন সে বিষয়ে।

তিনি বলেছিলেন - সবার কথা লিখে নিলাম । আমাকেও তো যখন তখন জবাবদিহি করতে হতে পারে ।

ভট্টাচার্য্য সাহেব চেষ্টা করেছিলেন ওঁকে এ সবে বিরত থাকতে । কমিশনার বলে দিলেন - ছেড়ে দাও ভটচাজ । পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে ।

বড়দা বললেন - আই অ্যাম সরি স্যার ।

মিঃ মুখার্জী বললেন - সাহেব! এর আগে ডক্টর ভরদ্বাজের সঙ্গে আপনার কোন আলাপ ছিল নাকি ?

বড়দা বললেন - হসপিটালেই প্রথম দেখেছি । এখন তো দেখছি তিনি শুধু ডাক্তার নন; একজন পোড় খাওয়া মনোবিদও ।

মিঃ মুখার্জী বললেন - রাখুন তো মনোবেত্তার কথা । আসুন স্যার , আপনাকে আবার শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে যেতে হবে ।

- তাই তো ! মুখুজ্যে ক'টা বাজে ?

নিজের হাতে ঘড়ি থাকতেও তিনি মিঃ মুখার্জীকে বললেন।

- সবে সাড়ে দশটা ।

- ও: তবে এখন অনেক দেরী । বেলা চারটেয় তো অনুষ্ঠান ?

ফোন এল কমিশনারের কাছে । ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর ফোন থেকে ।

- ইয়েস স্যার । নিরুপম হিয়ার ।

- শোনো নিরুপম । টিভিতে এ সব কি প্রচার হচ্ছে ? মিডিয়াগুলো ভেবেছে কি ? একজন মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তিতে কালি ছেটানো । অবিলম্বে এগুলো বন্ধ কর ।

- আমি দেখছি স্যার ।

তার কিছুক্ষণ পরই বিরোধী দলনেতার ফোন ।

- কি মিঃ সোম ? দল জিততে পারেনি বলে বিরোধী নেতার ফোন দেখে অবহেলা করছেন ? সি এম কে বলে আপনার খবর নিচ্ছি । ফোন রেখে দিলেন।

- কি জ্বালা বল তো মুখুজ্যে ! যেন পুলিশই যত নষ্টের গোড়া । এ জন্যই বলছি ...

মিঃ মুখার্জী বললেন - আর বলতে হবে না স্যার । সব বুঝে গেছি ।

- ওহে ভটচাজ! এবার চল ; তদারকি করি গিয়ে । চাকরি বলে কথা ।

ওঁরা বিদায় নিলেন । আমরাও বাঁচলাম। যেন গায়ে হাওয়া লাগল ।

বড়দা বললেন - ডাক্তারের বুকের পাটা আছে বলতে হবে । তিন তিনটে পুলিশ কর্তাকে ঘোল খাইয়ে ছাড়লেন।

আমি বললাম - আমার তো আশঙ্কা হচ্ছে ।

বুকুন মাঝখানে বলে উঠল - আবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা শুরু হল বলে ।

বড়দা বললেন - এখানে আমাদের কিছু করার নেই । চল সবাই রেডি হও মল্লিকপুরে ফিরে যাই ।

বুকুন বলল - কিন্তু জেঠুমণি! আজ যে সূর্য্যসেন স্ট্রীটে যাবার কথা ছিল !

সুনেত্রা বলল - হ্যাঁ তো, কথা ছিল ।

বড়দা বললেন - বাড়ীটা সীল করা আছে । এখন সেখানে যাওয়া ঠিক নয় । অবশ্য গতকাল তার বন্দোবস্ত করে এসেছি ।

বুকুন বলল - কি বন্দোবস্ত জেঠুমণি?

- বাড়ীর দলিল এবং নকশা ঘোষালের বাড়ী থেকে উদ্ধার করে এনেছি ।

গোপা, রূপা, বুকুন, সুনেত্রা , এবং শিউলিরা সকলেই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল । বুকুন বলল - ইউ আর রিয়েলি গ্রেট জেঠুমণি। তাহলে কবে ওখানে যাব ?

বড়দা বললেন - দেখি কি করা যায় । পুলিশ তো চাইলেই তালা খুলে দেবে না । এর জন্য আদালতের অনুমতি লাগবে। আজ তো আর সময় নেই ; এবার আগামীকাল যাব সবাই মিলে ।

সুনেত্রা বলল - বাড়ীতে ?

- না রে মা, প্রথমে আদালতে যেতে হবে । অনুমতির কপি নিয়ে পুলিশের কাছে যেতে হবে । তারপর পুলিশ গিয়ে তালা খুলে দিলেই আমরা ঢুকতে পারব । সেজন্য এই দলিলটার খুব প্রয়োজন ছিল ।

আমি বললাম - এটা ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত নিজের নামে করতে ঘোষাল সাহেবকে দিয়েছিলেন।

গোপা এবং রূপা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমাদের প্রণাম করল ।

শিউলির মা রান্না নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বললাম - বৌঠাকরুন অযথা কষ্ট করবেন না; এই বুকুন খাবারের অর্ডার করে দে বাবা ।

শিউলি বলল - স্যার, এবারও আপ্যায়ন করার সুযোগ দিলেন না ।

বড়দা বললেন - আমরা পরের বার যখন আসব, খবর দিয়ে আসব । তখন মন প্রাণ ভরে আপ্যায়ন কর । তা ছাড়াও আপাতত ডিনারও তো এখানেই করব । তখন না হয় দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে নিও !

শিউলি বলল - তাই কি হয় ? এসেছেন ভুরিভোজ না করিয়ে ছাড়ব না ।

এভাবে কথা চলে । বড়দা বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেন । এমন সময় মিঃ ভট্টাচার্য্যের ফোন এল ।

- হ্যালো মিঃ রায়চৌধুরী ! পরমেশ্বর বলছি । সি এম আপনার সঙ্গে মিলিত হতে চাইছেন ।

বড়দা বললেন - এখন তো তিনি শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে আছেন । এখন যেতে পারছি না । কাল সন্ধ্যের দিকে হলে সুবিধা হয় । কেন না কাল সকালে আমাদের কোর্টে যেতে হবে ।

পরমেশ্বর চিন্তিত হয়ে বললেন - কোন কেস ?

- ব্যক্তিগত । কোর্টের অনুমতি নিতে হবে ।

- কি ব্যাপারে ?

- বা রে ! যার বাড়ী তাকে তো বাড়ীতে ঢুকতে হবে । আর আপনারা তো তা সীল করে দিয়ে এসেছেন!

- হুমম্ তা ঠিক । আমি তাহলে কাল সন্ধ্যেয় এপয়েন্টমেন্ট ফিক্সড করে দিচ্ছি ।

বড়দা বললেন - দেবেন ? আচ্ছা ঠিক আছে ।

তারপরই আবার ফোন এল ডক্টর ভরদ্বাজের । বললেন - মিঃ রায়চৌধুরী! আমরা কি কোন ভুল করেছি ?

- দেখুন এ বিষয়ে আইনজ্ঞরাই বলতে পারবেন। আমি কিছু বলতে পারছি না । আপনারা এগারোজন মিলে যা ডিসাইড করেছেন, আমি একলা তা' ভুল বলে দিতে পারি না । তবে কথায় আছে না ' ভাবিয়া করিও কাজ ; করিয়া ভাবিও না ' । আপনারা তো যা করার করেই দিয়েছেন; আর সে নিয়ে চিন্তা করার কোন অবকাশ নেই ।

- তাহলে আমরা আইনের পথেই চলি ?

- সেই ভালো ।

পরের দিন আমরা বাড়ী দখলের বন্দোবস্ত করে ২৬/২ এ প্রবেশ করলাম ।

পরিপাটি করে সাজানো বাড়ীটা তখন ভীষণ অগোছালো ছিল । যেখানে সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে গেছছ । বাগানের গাছগুলো মনে হল বিধ্বস্ত ।

বড়দা বললেন - চল ছাদটা একবার দেখে আসি ।

আমি রাজী হলাম না ছাদে যেতে । রূপা বলল - চলুন আমি নিয়ে যাই । বাকিরাও বলল - চল সকলেই যাই।

আমি আর কি করি ! জেদ বজায় রাখতে একতলায় বসে রইলাম।

হঠাৎ আমার মনে হল কেউ যেন ঘরে জল দিয়ে সাফাই করছে । দরজাটা একটু ফাঁক করতেই দেখি লঙ্কেশ্বর নিজের হাতে জমাট রক্ত জল দিয়ে মুছে যাচ্ছেন । সাহসে ভর করে রুম থেকে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। লঙ্কেশ্বর আমার দিকে চেয়ে মৃদু হাসলেন । তারপর আবার নিজের কাজ করতে লাগলেন । কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘর পরিষ্কার হয়ে গেল ।

তা' দেখে আমার ভেতরটা ধুকপুক করে উঠল । এ যে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন লঙ্কেশ্বরকে প্রত্যক্ষ করছি । মনে সাহস এনে বললাম - এ কি করছেন আপনি ?

তিনি আমাকে দেখলেন, একটু হেসে ধীরে ধীরে বাগানের দিকে চলে গেলেন । বড় আমগাছটা ঝড়ঝড় করে কেঁপে উঠল । আমি উর্দ্ধশ্বাসে ছাদের দিকে চললাম।

আমাকে এ ভাবে হাঁপাতে হাঁপাতে ছাদে উঠতে দেখে গোপা দু'হাত দিয়ে আমাকে ধরে ফেলল ; নইলে হয়তো পা হড়কে পড়েই যেতাম । সকলে ব্যাকুল হয়ে আমাকে দেখছে । শুধু বড়দা বললেন - আমগাছের হঠাৎ দুলুনির শব্দ আমিও পেয়েছি রে ভাই । ভয় নেই এখন তিনি কোন ক্ষতি করবেন না ।

সকলে এই হেঁয়ালির মত কথাগুলো বুঝতে না পেরে এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল ।

আমি শুধু বললাম - আমি স্পষ্ট দেখেছি বড়দা ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime