STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
254

ত্রিসপ্ততিতম অধ্যায় 


কেন্দ্রের শাসক দলের টিকিট পেয়ে ছোট রক্ষিত দিবাস্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন । ২৬/২ এস্টেটের মালিক রূপে সদর্পে বাড়ীত ঢুকে বীরেশ্বরের সিন্দুক ভেঙে যাবতীয দলিল পত্র হাতিয়ে নিয়ে উকিল সত্যচরণ ঘোষালকে বললেন - এই নাও হে উকিল । এবার ওর স্বর্গে যাবার পথ পরিষ্কার করে ফেল দেখি । আর তো তিনটে মাস ; তারপর বিধায়ক রূপে আমার কর্মকাণ্ড দেখথে পাবে ।আর ভালো কথা, একই সঙ্গে তোমাকে আর একটা কাজ করতে হবে...

ঘোষাল সাহেব তাঁর দিকে হাঁ করে চেয়ে রইলেন। এই বুঝি বলেন বীরেশ্বরের হোয়ার এবাউট জানতে হবে । আর ঘোষাল খুব ভালো ভাবেই জানেন বীরেশ্বরের কাজে নাক গলানো মানে গলায় টাইম বোম্ব ঝুলিয়ে বসে থাকা ।

ত্রিলোকেশ্বর বললেন - হাজি মরেছে, ববিও এখন পুলিশ হাজতে । তোমাকে ববির হয়ে কেস লড়তে হবে । ওকে আমার দরকার । বীরেশ্বর ওকে ঠিকমত কাজে লাগাতে পারেনি; আমি ওকে স্পেশ্যাল ট্রেনিং দিয়ে বডিগার্ড রাখব।

- কিন্তু স্যার, যতটুকু শুনেছি ববিই তো আপনাকে মারতে সেলিম নামের এস আইকে পাঠিয়েছিল ।

- সেই জন্যই তো বলছি । ববির মত কাজের লোককে আমার দরকার । শুধু এই বিধায়ক হয়ে থিকলে তো চলবে না ; আমার চোখে দিল্লি দেখা যাচ্ছে ।

ঘোষাল সাহেব ভাবলেন লোকটা একটা আস্ত পাগল । এখনও নির্বাচনই হল না ; উনি কলকাতা ছেড়ে দিল্লির পথ ধরে বসে আছেন । যাকগে , ও তো তাঁর ব্যাপার । এই সুযোগে টু-পাইস যদি পকেটে ঢোকে তো ক্ষতি কি !

বললেন - আমিও এই কথাটাই ভাবছিলাম স্যার । সামান্য বিধায়ক হয়ে কি এমন লাভ ; একবার সাংসদ হয়ে গেলে , বলা যায় না, মন্ত্রীত্বও হাতে এসে যেতে পারে । 

ত্রিলোকেশ্বর বললেন - দূর দূর ! অতশত ভাবি না বাপু । আর তোমার কি মনে হয় কেন্দ্রে মন্ত্রী হলে আমি তোমাকে সুপ্রীম কোর্টের জজ বানিয়ে দেব ?

ঘোষাল সাহেব বললেন - স্যার আমার যেমন বিছানা, তেমনি পা মেলি । আমি বলছিলাম আপনার কথা ।

- সে তোমাকে বলতে হবে না । সবাই জানে আমি লোকটা কেমন । তাদের আশীষ পেলে কোনকিছু অসম্ভব নয় ।

ঘোষাল মনে মনে বললেন - আগে এই নির্বাচন জিতে দেখান; তারপর বুঝব কত মুরোদ আপনার ।

ত্রিলোকেশ্বর বললেন - কি হল হে ঘোষাল ! কিছু বলছ না যে !

মাথা চুলকে ঘোষাল বললেন - আমি আর কি বলব স্যার ! আপনার ভাবনার সঙ্গে কি আমি তাল মিলিয়ে চলতে পারি !

- তাহলে চাকরি ছেড়ে দাও বাপু । শুধু শুধু হাতি পুষতে যাই কেন !

- এ কি বলছেন স্যার ? আপনার দয়ায় বেঁচেবল্তে আছি । হঠাৎ করে এমন কথা বললে যে বেঘোরে মারা পড়ব স্যার !

- হুমম । তা'হলে কাজে লেগে পড় । সাতদিনের মধ্যে আমার কিন্তু খবর চাইই ।

তখনকার মত ঘোষাল কাগজপত্র নিয়ে বিদায় নিলেন । রাতের দিকে বীরেশ্বর এসে ' ভাই ভাই' বলে ডাকতে লাগলেন। ত্রিলোকেশ্বরের চোখ কান সজাগ হয়ে উঠল । 

এই তো বিকেলে ওর সিন্দুক ভেঙে দলিল দস্তাবেজ হাতিয়েছেন । আর রাতেই যমঠাকুর এসে উপস্থিত !

তিনি শুনেও না শোনার ভাণ করলেন। এবার বীরেশ্বর গর্জন করে উঠলেন - দরজা খুলবি না কি ভেঙে ফেলব ? 

বলে মিথ্যে অভিনয় করে বললেন - এই এনামুল, শঙ্কর, প্রদীপ, কামরান , কি করছিস কি ? পাঁচিল টপকে ছাদে উঠে যা । আমি নীচের দিক দিয়ে জানালায় উঠে শুয়ারটাকে জব্দ করি ।

ভয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল ত্রিলোকেশ্বরের। তিনি থানায় ফোন করে বললেন - এখনই আসুন স্যার । আমার জীবন বিপন্ন । বীরেশ্বরকে যদি ধরতে চান এই সুযোগ । ওরা বাড়ীর দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে ।

বীরেশ্বরের থার্ড সেন্স ভেরি সেনসিটিভ ।বুঝতে পেরেছেন তাঁর ভাই পুলিশে খবর দিচ্ছে । সেজন্য আবার চেঁচিয়ে বললেন - দরজা খুললি না ! দেখে নেব কাল তোর কি ব্যবস্থা করতে পারি ।

ত্রিলোকেশ্বরও জানেন এখন দরজা খুলে দিলে তাঁকে আর সকাল দেখতে হবে না । অতএব যা আছে কপালে ভেবে চুপ করে রইলেন । বীরেশ্বর আর কাল বিলম্ব না করে প্রস্থান করলেন । 

একে একে তাঁর সহচরগণ চলে যাচ্ছে । তিনি নতুন নতুন লোকের খোঁজ করছেন ; কিন্তু মনের মত কাউকে পাচ্ছেন না । কি খেয়াল হল সত্যচরণ ঘোষালকে স্মরণ করলেন। আর যাই হোক পারিবারিক উকিল । দেখা যাক তাঁকে হেল্প করতে পারেন কি না । তিনি পায়ে হেঁটে কিছুটা পথ গিয়ে বাসে উঠলেন। 

ঘোষালের বাড়ী লেকটাউনে । কখনও যাননি সেখানে। এও জানেন পুলিশ তাঁর পিছু পড়ে আছে । মত পরিবর্তন করে চলে গেলেন তাঁর শ্বশুর বাড়ীর দিকে । এ যাত্রা ঘোষাল সাহেবের ফাঁড়া কেটে গেল । শ্বশুর বাড়ীতে এখন আর কেউ নেই। তমালী মারা যাবার পর বয়সজনিত কারণে শ্বশুর শাশুড়ি দু'জনই গত হয়েছেন। যদিও বাড়ীর চাবিটা তাঁকেই দান করে গেছেন । 

পকেট হাতড়ে দেখলেন চাবি নেই । তখন স্থির করলেন তালা ভেঙে ঢুকবেন । এ ছাড়া গত্যন্তর নেই । 

রাতটা শ্বশুরবাড়ীতে কাটিয়ে ফিরে এলেন ২৬/২ এ । এসে দেখেন ত্রিলোকেশ্বর তালা মেরে বেরিয়ে গেছেন । আপন ভাগ্যকে দোষারোপ করলেন না তিনি । পুরুষ মানুষের দশ দশা, কখনও হাতি কখনও মশা ।

এখন না হয় মশার জীবনচক্র শুরু হল । তিনি ত্রিলোকেশ্বরের টিকিট পাওয়ার জন্য হিংসান্বিত হলেন না । নিজের এই দুর্ভাগ্যের জন্য কাউকে দায়ীও করলেন না । শুধু তাঁর খুব হাসি পেল । এ' হাসিতে শ্লেষ নেই, বিদ্বেষ নেই, কাপট্য নেই, আছে শুধু দম্ভ যা তাঁর চিরকালীন সম্পদ ।

ঘোষালের নাম্বার বের করে ফোন করলেন । 

- মিঃ ঘোষাল ! বীরেশ্বর স্পিকিং। আলমারিতে যে সব দলিলগুলো নিয়ে গেছ সব ভূয়ো । ভুলেও কিছু করতে যাবে না । তার জন্য তুমি স্বয়ং দায়ী থাকবে । নিজেকে অতি চালাক ভেবো না । আমি বাড়ীতে নেই মানে এই নয় বাড়ীর ভেতর কি হচ্ছে না হচ্ছে জানতে পারব না ।

ঘোষাল ভাবলেন - ভুত প্রেত নয় তো ! তা' না হলে তিনি কি করে জানলেন !

বীরেশ্বর বললেন - ওগুলো ফেরৎ চাই । নইলে জান তো এক্কেবারে ঘ্যাচাং ফু: করে দেব । 

ঘোষাল ভিরমি খেলেন । কি সাংঘাতিক পরিবারে নিজেকে জড়িয়েছেন ! সবিনয়ে বললেন - স্যার আপনি ভুল বুঝছেন । আমি তো কায়দা করে আপনার কাগজগুলো আদায় করে এনেছি । আপনি কোথায় আছেন স্যার ? আমি কি ওগুলো পৌঁছে দিয়ে আসব ?

- না । ওগুলো সাবধানে রেখো । আমি নিজে গিয়ে নিয়ে আসব । আর একটা কথা - সীল করা খামগুলো কি খুলে ফেলেছ ?

- একদমই না স্যার । আমি তো জানি এগুলো আপনার টপ কনফিডেন্সিয়াল । তাই ছোট স্যার যখন হাতে তুলে দিলেন আমি অবাক হয়ে নিলাম শুধু ; তা' নইলে স্যার আমার প্রাণটা তো আস্ত থাকত না !

- সে তো তোমার এমনিই থাকবে না । রামে হলেও মারবে - রাবণে হলেও মারবে । 

সত্যচরণ ঘোষাল ভয়ে কাঁপতে লাগলেন । তাঁর মরণ যে সুনিশ্চিত তা' বুঝতে পেরে আদালতে প্রাণরক্ষার আবেদন জানালেন ।

( চলবে )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime