Nityananda Banerjee

Thriller Others

4  

Nityananda Banerjee

Thriller Others

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
253


একত্রিংশতি অধ্যায়


বড়দা গত দু'দিন কোন খবর নিতে পারেননি - যেন তিনি কত ব্যস্ত ! বাধ্য হয়ে আমি নাম্বার লাগালাম। মনে পড়ে গেল গতকালের স্বপ্নের কথা । স্বপ্নে হলেও ফোন তো করেছি কিন্তু ফোন ধরেছেন লঙ্কেশ্বর ।

আমি এবার সতর্ক হলাম। গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম - আপনি কি মিঃ উৎসব রায়চৌধুরী কথা বলছেন ?

- আমার সাথে আর বাঁদরামি করতে হবে না হতচ্ছাড়া বাঁদর কোথাকার!

খুব খুশী হলাম । বড়দারই গলা । আনন্দের আতিশয্যে বলে ফেললাম - এ কি ধরণের সম্বোধন বড়দা ? 

- তোর স্পর্ধা দেখে অবাক হচ্ছি রে ভাই ! আমার নাম ধরে ডাকিস ?

আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম - সরি । কাল রাতে যে দু:স্বপ্ন দেখেছি সেজন্য একটু খেলা দেখালাম বাধ্য হয়ে । আপনি কিছু মনে করবেন না বড়দা । আসলে একা একা থাকতে আর ভালো লাগছে না । কবে ফিরবেন বলুন তো ?

- আরও কয়েকটা দিন লাগবে রে ভাই! এখনও কাজটা গুছিয়ে উঠতে পারিনি । তোর কি মনে আছে ; একদিন বলেছিলি ২৬/২ সূর্য্যসেন স্ট্রীটের কথা , বীরেশ্বর রক্ষিতের কথা ?

আমি বললাম - বলেছি । কেন ? বীরেশ্বর রক্ষিত কি এখনও বহাল তবিয়তে আছে নাকি হাজত বাস করছে ?

বড়দা বললেন - চুপ চুপ । আমার পাশেই বসে আছে । শুনতে পেল কি না কি জানি !

বুঝে নিলাম লঙ্কেশ্বরকে ধরিয়ে দেওয়া চারটিখানি কথা না । বললাম - আপনার পাশে বসে আছে মানে ? 

- সে অনেক কথা । এখন বলা যাবে না । বুঝতেই পারছিস। 

- যাক গে, কবে নাগাদ আসছেন বলুন। আর দু'টো দিন দেখব ; তারপর কিন্তু আর বাড়ীর দায়িত্ব নিতে পারব না বলে দিলাম। একলা থাকার যে কি জ্বালা - হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি তো !

বড়দা হাসতে হাসতে ফোন ছেড়ে দিলেন । আমি আরও গভীর চিন্তায় পড়লাম। কি যে ঘটছে সেখানে ! ঠিক করলাম সারাদিন বাবলুদার দোকানে কাটিয়ে রাতে বাবলুদাকে নিয়েই বাড়ী ফিরব ।

মিঃ উৎসব রায়চৌধুরীও যে পরম নিশ্চিন্তে দুমকায় পড়ে আছেন তা তো নয় । এই বীরেশ্বর রক্ষিতকে নিয়ে তাঁর মাথাব্যথার অন্ত নেই । এই বলছেন 'শুধরে নেব ' তো পরক্ষণেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে টালমাটাল করে দিচ্ছেন সব কিছু ।

গোপা দেবী বললেন - বড়দা ! এই সংসার হল কাঁচের দ্রব্য। একবার ভেঙে গেলে আর জোড়া দেওয়া যায় না । আমি তো আমার বাবাকে চিনি । উনি কোনদিন শুধরাবেন না। তার চেয়ে আপনি ফিরে যান । শুধু শুধু নিজের ক্ষতি ডেকে আনবেন না ।

- তা' হয় না বউমা ! আমি এতদূর এসে আর খালি হাতে ফিরে যেতে পারব না । এ আমার জীবন মরণ পণ । 

গোপাদেবী চুপ করে গেলেন । দ্বিতীয়বার চর্বিতচর্বণ করতে তাঁর ইচ্ছে করল না ।

এমন সময় বুকুন এসে উপস্থিত হল । 

- জেঠুমণি কি মায়ের মত নিরাশ হয়ে পড়েছেন ?

তড়িৎ গতিতে বুকুনের দিকে ফিরে বড়দা বললেন - জীবনে কোনদিন নিরাশাগ্রস্ত হইনি বাবা ; আজও হব না ।

গোপাদেবী বললেন - ওনাকে জানতে তোর এখনও অনেক কিছু বাকি আছে বুকুন । আমার বাবা যত না একগুঁয়ে তার চেয়ে অনেক গুন বেশী জেদী পুরুষ উনি । চেহারা দেখে কাজের বিচার হয় না । 

বুকুন বলে - সে আমি অনেক আগেই জেনে গেছি মা । জেঠুমণি যদিও 'র' এর নিয়মিত গোয়েন্দা নন; কিন্তু মিলিটারি থেকে এখনও মাঝেমধ্যে তাঁর ডাক আসে । 

আমি জাস্ট ওনাকে এনকারেজ করতে কথাটা বলেছি ।

তারপর মিঃ রায়চৌধুরীর দিকে ফিরে বলে - প্লীজ ডোন্ট টেক ইট আদারওয়াইজ এলস । 

মিঃ রায়চৌধুরী বুকুনের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলেন - ইটস ওকে ।

দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে বুকুন অফিসে চলে যায় । বৈঠকে বসেন মিঃ রায়চৌধুরী, বীরেশ্বর এবং গোপাদেবী ।

বীরেশ্বর বলেন - কালই তবে গোপা মাকে নিয়ে কলকাতা চলে যাই ! কি বলেন মিঃ রায়চৌধুরী?

মিঃ রায়চৌধুরী গোপাদেবীর দিকে চাইতেই তাঁর নেগেটিভ ঈশারা বুঝতে পারেন ।

বলেন - মিঃ রক্ষিত ! তা' হয় না । আপনি আগে আপনার মেয়ে এবং বুকুনের সঙ্গে কথা বলুন। ওঁদের মতামত নিন। সব কিছুই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলুক ।

হাসলেন বীরেশ্বর রক্ষিত । 

- উনুনকে জিজ্ঞেস করে কাঠ দেব ? কি যে বলেন মিঃ রায়চৌধুরী?

- প্রয়োজনে কাঠ দিতেই পারেন কিন্তু অনাবশ্যক কাঠ দিলে আঁচ গনগনে হয়ে যায় ; তখন উনুনে চাপানো খাবার পুড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে । 

বীরেশ্বর সে কথা শুনে গুম হয়ে যান । কিছু পরে বলেন - আপনি ঠিকই বলেছেন । আজ রাতেই ওদের সঙ্গে কথা বলে নেব । 

- যা কিছু কথা - সব যেন আমার উপস্থিতিতে হয় ।

বীরেশ্বরের আসুরিক প্রবৃত্তির উন্মেষ ঘটে । তিনি পাশে বসা গোপা দেবীকে ধরে বলেন - এ আমাদের পারিবারিক ব্যাপার । আপনি অকারণ নাক গলাতে চাইছেন কেন ?

মিঃ রায়চৌধুরী বিনয়ের সঙ্গে বললেন - প্রথম কথা হল - পারিবারিক ব্যাপারটা এককালে ছিল । এখন আর নেই । বিয়াল্লিশ বছর আগেই তা শেষ করে দিয়েছেন ।

বীরেশ্বরের চোখ মুখ রাঙা হয়ে উঠল ; তাঁর মনে হল নেহাৎ অন্য প্রদেশে আছো সোনা , কলকাতা হলে এখনই প্রাণ কেড়ে নিতাম ।

নিজেকে অসম্ভব রকম ধৈর্য্যের দড়ি দিয়ে মনটাকে বেঁধে রাখতে হল । স্বমূর্তি ধরবার স্থান এটা নয় । কথাবার্তায় একটু নরম হয়ে বললেন - তবু নিজের মেয়ে তো ! দু'চার কথা শোনাতেই পারি । তা' ধরে বসে থাকলে তো চলে না। 

আর আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাব এতে আপনার মতামত নিতে যাব কেন ?

মৃদু হাসলেন মিঃ রায়চৌধুরী। বললেন - সম্পর্কটা যদি সেই পর্য্যায়ে থাকত ; আমার কিছু বলার ছিল না । এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। আপনার দাবী মানা বা না মানা - সবই নির্ভর করছে ওদের মা ও ছেলের উপর । আমার উপস্থিতিতে আলোচনার কথা বলেছি তারও যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ যুক্তি আছে যা আমি আপনাকে শেয়ার করতে চাই না ।

গর্জে উঠলেন বীরেশ্বর রক্ষিত।

- মিঃ রায়চৌধুরী ! আপনি কিন্তু আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন !

- সে তো আমার অধিকার ।

- অধিকার ? কোন সুবাদে ? একজন অতিথি হয়ে এসেছেন , তেমনই থাকুন ।

- এটাই তো আপনার ব্যাধি । আমি যতক্ষণ না আপনার এই ব্যাধি সারিয়ে তুলতে পারব ততক্ষণ আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারছি না ।

অট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন বীরেশ্বর রক্ষিত । 

- হা হা হা ।

সেই গুরুগম্ভীর হাসিতে নীড়ে থাকা পাখিগুলো নড়েচড়ে বসল । কিচিরমিচির ধ্বণি তুলে বীরেশ্বরকে যেন অবজ্ঞা করল । বীরেশ্বর বললেন

- কি আমার ডাক্তারবাবুটি এসেছেন রে - আমার ব্যাধি সারানোর জন্য । বলি শুনুন মশাই । আমার শরীরে কোন রোগব্যাধি নেই আর আপনি ডাক্তারও নন ।

- ইয়েস ! আই অ্যাম নট এ ডক্টর এট অল বাট আই ক্যান ডিটেক্ট দ্য ডিজিজ ইউ হ্যাভ উইথ ইউ ।

বীরেশ্বর ইংরাজি জানেন । তিনি এর অর্থ বুঝতে পেরে বললেন - ঠিক আছে, আসুক বুকুন। আপনার সামনেই আলোচনা হবে ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller