STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

6 mins
384

পঞ্চাশীতিতঅধ্যায়

সুনেত্রার কথায় রূপা ভেঙে পড়েছে । গোপাও কিছু বলতে পারছে না , যদিও গোপা সেদিনই জেনে গিয়েছিল রূপার মুখে । আজ সেও অপ্রস্তুত হয়ে গেল । এমন বেমক্কা একটি দুরূহ প্রশ্নের মুখে পড়ে রূপা ও গোপা দু'জনেই কেঁদে ভাসাল ।

আবার সুনেত্রাও এর উত্তর পেতে মরীয়া । কিছুতেই বুঝতে চাইছে না - ওর ছোটদাদু এক দুর্জন । যে নিজের মেয়েদের সর্বনাশ চায় ; তাকে আর যাই হোক বাবার আসনে বসানো যায় না ।

রূপা তো বলেই দিল - ওই লোকটা আমাদের বাবা নয় ; অতএব তোর ওকে আর ছোটদাদু বলার প্রয়োজন নেই ।

সুনেত্রার এতে যেন কিছুই আসছে যাচ্ছে না । সে শুধু তার ছোটদাদু হঠাৎ এমন কেন বলল সেই চিন্তাই করতে লাগল।

গোপা বলল - আমাদের কথা যদি তোর বিশ্বাস হচ্ছে না তো তোর বুকুনদাকেই না হয় জিজ্ঞেস করে আয় । তুই তো বুকুনকে ভরসা করিস !

তা'তেও ওর কোন ভাবোদয় হল না । তখন গোপা নিজে বুকুনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে এল । বুকুন বলল - কি হল মা ? আমাকে এত শীঘ্র ঘুম থেকে ওঠালে কেন ?

গোপা বলল - আগে ঘুম ছাড়া বাবু । তারপর বলছি শোন।

বুকুন বলল - আহাহা কি হয়েছে বল না !

- তোর ছোটদাদু ফোন করেছিল ।

- তো কি হল ? করতেই পারে তোমরা ওর মেয়ে ।

- আমাদের করেনি । করেছে সুনেত্রাকে । কি সব আলফাল বলে ওর মনটা ভাঙিয়ে দিয়েছে ।

- মন ভাঙিয়ে দিয়েছে ? কি বলেছে ছোটদাদু?

- সুনেত্রাকে বলেছে ও নাকি আমাদের কেউ না , এমনকি ও রূপার মেয়েই নয় । আরও কি সব আজেবাজে কথা শুনিয়েছে তোকে সেগুলো বলতে পারব না ।

- ও: এই ব্যাপার । সুনেত্রা এখন কোথায় ?

- নীচে বসে কান্নাকাটি করছে মা আর মেয়েতে ।

- আচ্ছা চল তো দেখি !

ওরা নীচে নেমে এল । বুকুন সুনেত্রাকে আদর করতে করতে বলল - আমার ছোট্ট বোনটি ! কান্নাকাটি করিস না বোন । বাইরের কে এসে কি বলে দিল , অমনি তুই চঞ্চল হয়ে উঠলি! তোর মত মেয়ের এটা শোভা পায় না । তুই তো জানিস ত্রিলোকেশ্বর কেমন লোক , আমরাও জানি। শুনেছিস না ; মাকেও তো বলেছে মা নাকি বীরেশ্বর রক্ষিতের মেয়ে না ; তারই বড় মেয়ে ।

সুনেত্রা বুকুনকে জড়িয়ে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল । তার চোখের জলে বুকুন ভাসল, রূপা, গোপা কেউ বাদ গেল না ।

বুকুন বলল - চল আমরা কোথাও বেড়িয়ে আসি । কোথায় যাবি বল ?

সুনেত্রা বলল - এই পোড়া মুখ দেখাতে কোথাও যাব না । বুকুনদা আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে । কি হবে বেঁচে থেকে? আরও এমনি কত অপবাদ শুনতে হবে ।

- ত্রিলোকেশ্বর লোকটা হাড় বজ্জাত । জেঠুমণির মুখে শুনেছিস না ও বড়দাদুকেও মারতে চেয়েছিল । বড়দাদু নেহাৎ রাজনৈতিক খুন হয়ে গেছে । আমি ভাবছি এই লোকটার কপালে কি লেখা আছে ! নে ওঠ, ও সব ভুলে যা । অন্তত আমাকে দেখেও কিছু সুচিন্তা কর । ওরে বোন! তোর সুখের জন্য আমি তো তোর পাশেই আছি । আমাকে ভরসা করিস না ?

সুনেত্রা আরও জোরে বুকুনের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল । তা' দেখে রূপা উঠে এসে বলল - বল মা! কি কথা কেমন করে বললে তোর এই মনোভাব কাটবে - যা বলবি আমি তাই করব । তুই আর বুকুন ছাড়া আমাদের আর কে আছে বল !

সুনেত্রা বলল - তুমি আর আমার কাছে আসবে না । তোমাকে তো বলেছিলাম আমার মাথায় হাত রেখে বল দাদু যা বলেছে মিথ্যে বলেছে । কিন্তু তুমি তো করলে না ?

রূপা মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে দিব্যি খেয়ে বলল - বুড়োটা যা বলেছে সব আমাদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে বলেছে।

- তুমি ঠিক বলছ তো ? কই তাহলে বুকুনদার গা ছুঁয়ে আর একবার বল দেখিনি !

রূপা এবার ফাঁপরে পড়ে গেল । অসহায় চোখে গোপার দিকে চাইতেই গোপা ইশারায় সম্মতি জানিয়ে দিল ।

রূপা বুকুনকে ধরে একই কথা বলল । এবার সুনেত্রা অনেকটাই নরম হয়ে গেল । বুকুনকে ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল রূপার বুকে । আবার শুরু হল মা মেয়েতে কান্নার প্রতিযোগীতা ।

গোপা হেসে বলল - আমি জানি বুকুন তোর কত প্রিয় । তাই তো ওকে ঘুম থেকে তুলে আনলাম ।

বুকুন বলল - মাঝে মাঝে তো তোর শিউলিকে খুব মনে পড়ে । তুই কি শুনেছিস ওর বাবাকে পুলিশ পিটিয়ে মেরেছে ?

- না তো ! কেন? মারল কেন ?

- সেজন্যও ছোটদাদু দায়ী । কি প্রয়োজন ছিল ওদের বাড়ী যাবার । নিজে তো অপরাধী ! তাই পুলিশ খবর পেয়ে বাড়ীটা ঘিরে তল্লাশি করছিল । পায়নি বলে পুলিশের সন্দেহ হল ওরাই হয়তো ত্রিলোকেশ্বরকে লুকিয়ে রেখেছে। সেজন্যই শুরু করল অত্যাচার আর তাতেই হাসপাতালে গিয়েও উনি আর ফিরলেন না ।

- ও মাগো ! কতদিন আগে ঘটেছে এটা ? কই, কেউ তো আমাকে বলেনি !

রূপা বলল - আমরাও জানি না। আহা রে ! শিউলির এখন কি অবস্থা ! যাবি নাকি দেখা করতে ?

সুনেত্রা এখন অনেকটা হাল্কা হতে পেরেছে । বলল - গেলে হয় !

রূপা বলল - চল তবে আজই ঘুরে আসি ।

সুনেত্রা বলল - আজই ? না থাক । মেসোমশাইরা ফিরে আসুন । তারপর না হয় ...

গোপা বলল - ঠিক বলেছিস । ওনাদেরও তো নিয়ে যেতে হবে ! নইলে কে চিনিয়ে দেবে ওদের বাড়ীটা ?

অনেক মেহনত করে সুনেত্রার মনের ভুল ভাঙানো হল । কিন্তু গেল কি ?

বিকেল হলে ওরা সবাই মিলে মল্লিকপুর মোড়ে ঘুরতে গেল । বুকুন বলল - কি সুন্দর জায়গাটা ! বল ?

সুনেত্রা বলল - তুমি ঠিক বলেছ বুকুনদা । কলকাতার মত এখানে গুমোট ভাব নেই । চারদিকে সবুজ ধানক্ষেত , ক্যানালের জলে ছেলেমেয়েদের সাঁতার কাটা , মাছ ধরা - কি ভালো লাগে দেখতে আমার !

বুকুন বলল - আমার কিন্তু কলকাতা ভীষণ ভালো লাগে । দুমকা টাউন হলেও কলকাতার মত প্রাণচঞ্চল নয় । তোকে তো এবার অফিসে জয়েন করতে হবে - তাই না ?

সুনেত্রা বলল - আমার আর চাকরি করতে ভালো লাগে না । নিয়ম মেনে দশটা- পাঁচটা অফিস - ধূরর । ভালো লাগে না ।

এভাবে ঘোরাফেরা করতে করতে ওরা পাড় বাঁধানো ক্যানেলে গিয়ে বসল । জল তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কুঁড়াজালি , পোলো, আর জাল ফেলে মাছ ধরতে লেগেছে ।

একটি ছেলে বাঁশের ঝুড়ি নিয়ে ওদের সামনে দাঁড়াল।

- মাছ লেবে নাকি ?

বুকুন বলল - কি মাছে ? বড় না ছোট ?

- এজ্ঞে চূণামাছ ।

বুকুন উঁকি দিয়ে দেখল ছোট ছোট পুঁটি, মৌরলা, চিংড়ি মাছের মিশেল । সুনেত্রা বলল - চূণো পুঁটি? আরিব্বাস ! বুকুনদা নাও নাও । রাতে বাটি-চচ্চড়ি হবে ।

বুকুন অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে বলল - বাটি-চচ্চড়ি ? সে আবার কি ?

- ও তুমি বুঝবে না । খেলে আর ছাড়তে পারবে না ।

গোপা বলল - নিয়ে নে বুকুন । আজ রাতে ভাত খাবেন ওঁরা। সারাদিন তো হোটেলে মোটেলে খেয়েছেন ।

বুকুন ছেলেটিকে বলল - কত দাম ?

ছেলেটি বলল - তিরিশ টাকা দ্যান - সব দিয়ে দেব ।

বুকুন বলল - এতগুলো মাছ আর মাত্র ত্রিশ টাকা?

ছেলেটি অবাক হয়ে বুকুনকে দেখতে লাগল । ভাবল - বেশী দর হেঁকে দিল নাকি! বলল - তাইলে কুড়ি টাকাই দ্যান । তার চেয়ে কমাতে পারবনি ।

বুকুন পঞ্চাশ টাকার নোট ওর হাতে দিয়ে মাছগুলো নিয়ে নিল ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime