Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
325


ষড়শীতিতম অধ্যায় ।


আমরা যথাসময়ে ২৬/২ এর সামনে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রইলাম। এখন আমাদের পরিধানে রীতিমত সাহেবী পোষাক। মুখে চুরুটের দণ্ড । মাথায় হ্যাট । বড়দা ভুসভুস করে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন - কি রে তুইও আমার মত ধোঁয়া ছাড়ছিস না কেন? এখন আর এত লজ্জা করার কি আছে ?

মুখ নামিয়ে বললাম - অশোভনীয় কাজ করি কি করে , বড়দা?

- উঁহু ! বড়দা নয় ! বলেছি না মিঃ জ্যাকসন বলে ডাকবি ?

আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। বড়দার নতুন নাম মিঃ জ্যাকসন । আর আমি মিঃ থম্পসন । নিজেরাই নাম বেছে নিয়েছি ।

গত রাত্রেই এ' বিষয়ে চর্চা হয়েছে । আমরা দু'জন পুরোপুরি সাহেব সেজে যাব; যাতে কেউ কোন সন্দেহ করতে না পারে । ২৬/২ এ ঢুকব বড়দা জ্যাকসন এবং আমি থম্পসন নাম নিয়ে । ত্রিলোকেশ্বরের বাড়ীতে গিয়ে ওইভাবে নিজেদের পরিচয় দেব আর ওঁকে জানাব আমরা আমেরিকার ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে আসছি আপনার সাক্ষাৎকার নিতে । 

কিন্তু তার আগে আমি বাগানের দিক থেকে বাড়ীর ভেতরে নজর রাখব আর যদি কোন কথাবার্তা শুনতে পাই বড়দাকে ম্যাসেজ করে জানাব । সেজন্য দু'জনের ফোন মিউট করে রাখা হবে ।

বড়দা হাঁটতে হাঁটতে সিংদরজার প্রায় সামনে এসে থমকে দাঁড়ালেন। পিছিয়ে এসে আমাকে বললেন - সিংদরজাটা রিমডেলিং করেছে রে ! নাম্বার প্লেটটাও আর ২৬/২ নেই ।

বললাম - কত নং লিখেছে ?

- ফাঁকা । বুঝলি ? কোন নাম্বার নেই । কিন্তু ভেতরে সেলিমের গলা পাচ্ছি । তুই চলে যা পাঁচিল টপকে বাগানের দিকে । আমি সদর দিয়ে ঢুকছি ।

যেমন নির্দেশ তেমনই করলাম । পাঁচিল পেরিয়ে অতি সাবধানে বাগানের বড় আমগাছটার তলায় নিজেকে যতটা সম্ভব আড়াল করলাম । এখান থেকে সেলিমের কথাবার্তা ভালোই শুনতে পাচ্ছি । 

ত্রিলোকেশ্বর সেলিমকে বলছেন - যে বীরেশ্বরের জন্য তুই আমাকে ধরতে চেয়েছিলি সে এখন তোর সামনে দাঁড়িয়ে। ভয় করছে না তোর ?

সেলিম বলছে - নেমন্তন্ন করে ডেকে এনেছেন ; তাই বিশ্বাসকে ভরসা করে চলে এসেছি । এখন যদি বিশ্বাসঘাতকতা করেন তবে তার জন্য আমিও প্রস্তুত ।

ত্রিলোকেশ্বর হো হো করে হেসে উঠলেন । 

- নাহ্ তোর মেজাজ তেমনই কড়া আছে এখনও । তুই পারবি আমাকে যোগ্য সঙ্গত দিতে । 

এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল । ত্রিলোকেশ্বর সেলিমকে বসতে বলে দরজা খুলতে গিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন ।

- হাই মিঃ রক্ষিত ! আই অ্যাম মিঃ জ্যাকসন ফ্রম ইউ এস এ । 

- হ্যালো মিঃ জ্যাকসন । ওয়েলকাম টু মাই কিংডাম । হোয়াট ক্যান আই ডু ফর ইউ ?

- নাথিং এলস । ওনলি ওয়ান্ট ইয়োর কোর্টিয়াস এণ্ড ডেলিবারেট ভিউ এবাউট ইয়োর ইলেকশন ক্যাম্পেইন । 

- হোয়্যার আর ইউ কামিং ফ্রম ।

- ফ্রম দ্য ওয়ার্ল্ডফেমাস নিউজ দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ।

- ওহ সো ! প্লীজ ওয়েট হিয়ার । নাউ অ্যাম অন লাঞ্চ । উইল ইউ হ্যাভ ইট উইথ মি ?

- নো স্যার । থ্যাঙ্ক ইউ । মাই ফ্রেণ্ড উইল একম্প্যানি উইথ মি । হি উইল কাম উইদিন এ ফিউ মিনিটস।

বুঝলাম বড়দা ভেতরে ঢুকে গিয়েছেন এবং এই সুযোগে বাড়ীর ভেতরটা নিরীক্ষণ করছেন । 

সেলিম , ত্রিলোকেশ্বর আর সোনু যাদব লাঞ্চ টেবিলে একত্রে আহারে বসেছেন । 

ত্রিলোকেশ্বর বললেন - আজ তোদের বেশী সময় দিতে পারব না । আমেরিকা থেকে একজন এসেছেন আমার ইন্টারভিউ নিতে । তোরা খেয়ে দেয়ে এখন রেস্ট নে । আমি পরে তোদের সঙ্গে কথা বলছি ।

সেলিম ও সোনু এসি চালিয়ে দিব্যি গড়িয়ে নিচ্ছে । বড়দাও হয়তো এসিতে বসে আছেন । কেবল আমি আমগাছের তলায় গরম হাওয়া খাচ্ছি । আমি থাকতে না পেরে বাগান থেকে সোজা বাড়ীর দরজায় এসে কলিং বেল টিপে দিলাম । 

ত্রিলোকেশ্বর বড়দাকে ইংরাজিতে বললেন - সরি স্যার । ইলেকশনের সময় তো ! বাড়ীতে লোকজনের আসা যাওয়া বেড়েছে।

বলে দরজা খুলে আমাকে দেখেই বললেন - কাম কাম টু ইন্টারভিউ এট সেম টাইম । 

আমাকেও ডেকে বসালেন । বড়দা আমাকে না চেনার ভান করলেন । পরে ওয়েলকাম মিঃ থম্পসন বলে একটা খালি চেয়েরে বসতে বললেন ।

- মি ঠু ফ্রম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট মিঃ ট্রিলকেশোয়ার রকসিট । একটু সাহেবী কায়দায় উত্তর দিলাম।

তিন জনে বেশ আলাপ আলোচনা করছি । প্রথমে পরিবার নিয়ে প্রশ্ন করলাম। ত্রিলোকেশ্বর বললেন - আমার বাবা ত্রৈম্বকেশ্বর রক্ষিত পৈতৃক সুত্রে এই জমিটা রাণীমার বদান্যতায় পেয়েছিলেন । গরীব ব্রাহ্মণ বলে রাণীমা তাঁদের থাকা এবং খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন । রাণীমার ছিল দয়ার শরীর ।

বড়দা বললেন - ওই সকল অনেক শুনিয়াছি । পুওর হইয়াও আপনারা আজিকে এই বিশাল প্যালেস করিলেন কি প্রকারে ?

- সে অনেক কথা সাহেব । বাবা তেমন কিছু করতে পারেননি । আমার অগ্রজ ভ্রাতা বীরেশ্বর রক্ষিত ছিলেন বর্তমান শাসকদলের একনিষ্ঠ কর্মী । আমিও তাই। আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এমনটি হয়েছে।

আমি বললাম - শুনিয়াছি বীরেশ্বর রক্ষিতকে মার্ডার করা হইয়াছে । কেন ?

- আমি কি করে বলব সাহেব ? রাজনীতিতে তো অনেক কিছুই চলে ।

- আপনিও তো রাজনীতি করিটেছেন । আপনি জানিবেন নিশ্চয় !

ত্রিলোকেশ্বর সন্দেহের চোখে অপলক আমাকে দেখে যাচ্ছেন । বেটা টিকটিকি নয় তো ! 

বড়দা বুঝতে পেরে প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন - ওই সকল ছাড়িয়া দিন । আপনি বলুন এম এল এর টিকিট পাইয়া আপনি খুশী হইয়াছেন? কি মনে হয় ? আপনি এবং আপনার দল স্টেটে পাওয়ারে আসিবেন ?

- হাণ্ড্রেড পার্সেন্ট আসবে সাহেব । আপনি কাগজে ফলাও করে লিখে দিন ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত এবং দল শাসন ক্ষমতায় আসছেই । 

- কিন্তু পাবলিক ? জনসভায় লোক গুনিয়া তো ভোটের রেজাল্ট বলা যায় না । এক্সিট পোলও সকল সময় ট্রু হয় না ।

- রাখুন তো পাবলিক, এক্সিট পোল ! ত্রিলোকেশ্বর ভবিন্যৎ বলে দিতে পারে । বলছি তো জিতব । লিখে নিন।

হঠাৎ উপরের ঘরে গুড়ুম করে গুলির আওয়াজ পেতেই ত্রিলোকেশ্বর চমকে গেলেন । চটজলদি দরজা জানালা বন্ধ করে আমাদেরও ঘরের মধ্যে থাকতে বললেন। 

বড়দা বললেন - আপনি ঘাবড়াইবেন না । আমরা দেখিতেছি কি হইয়াছে ।

ত্রিলোকেশ্বর তখন ভয়ে সিঁটিয়ে আছেন । ওঁকে বুঝিয়ে বললাম - আপনি ভেতর থেকে দরওয়াজা লক করিয়া দিবেন । আমাদের দেখিতেই হইবে কি ঘটিয়াছে ।

ত্রিলোকেশ্বর কোন কথা শুনতে চাইলেন না । বড়দা দরজা খুলে আমাকে ডেকে বাইরে থেকে দরজায় খিল দিয়ে দিলেন ।

আমরা উঠে এসে দেখি আরেকজন ত্রিলোকেশ্বর মাটিতে পড়ে রয়েছেন । রক্তে মেঝে ভেসে যাচ্ছে । বড়দা নাড়ী টিপে দেখলেন লোকটি মৃত ।

আমি দেখলাম সোনু যাদব এবং সেলিম পরস্পরের দিকে পিস্তল উঁচিয়ে ধরে রয়েছে । 

সোনু বলছে - না সেলিম ভাই । আমাকে যে কাজ দিয়েছিলে তা' সম্পূর্ণ করে দিয়েছি । তার একমাত্র সাক্ষী তুমি । একজন ভি আই পিকে মেরে ফেলা - প্রশাসন সহজ ভাবে নেবে না । অতএব সাক্ষীকে নিশ্চয় বাঁচিয়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয় । 

সেলিম বলছে - কিস্যু হবে না । এতে লালবাজারের হাত আছে । নির্দেশ আছে আততায়ীকে মেরে ফেলার ।

আমি একটু আড়ালে গিয়ে ওদের উদ্দেশ্যে বললাম - তোমরা যাকে মেরেছ তিনি ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত নন। তাঁর হমসকল যাকে বলে ডামি ।

ওরা দুজনেই হতবাক । সেলিম বলল - আপনি কি করে বুঝলেন ?

বড়দা বললেন - আমি উৎসব রায়চৌধুরী সবই বুঝি । তোমরা থামো , আর খুনোখুনি করে মর না । এস দেখবে এস , আসল ত্রিলোকেশ্বরকে নীচের ঘরে বন্দী করে রেখেছি ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime