STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
284

ষটপঞ্চাশৎ অধ্যায়


- যখনই বিপদে পড়বে ; মামেকং শরনং ব্রজ ।

দাদার প্রতি মাভৈ: বাণী ছুঁড়ে দিলেন ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত । 

বীরেশ্বর বললেন - ভাই, আর পারছি না চাপ নিতে । শালা দল আর পুলিশ মিলে যে ভাবে আমার পিছু নিয়েছে , তা'তে তো দেখছি আমাকে ভিটেমাটি ছাড়া করবে ।

ত্রিলোকেশ্বর সবই জানেন। বলা বাহুল্য তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে দল এবং পুলিশ এমন কাজ করছে । আবার তিনিই পুলিশকে বলছেন তাঁর নিজের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে । কখনও বা বীরেশ্বরকে ভয় দেখিয়ে কিছু আদায় করে নিতে । এক্ষণে বীরেশ্বর যদি বাণপ্রস্থে যান তো তাঁরই বেশী লাভ । এই হাইড এণ্ড সিক খেলায় তিনি বিশেষ পারদর্শী। 

রায়চৌধুরী বাড়ী থেকে বীরেশ্বরের অকস্মাৎ পলায়ণ, তেজপাল সিং এর ট্রাকে কলকাতায় আগমন , ট্রাক ফেলে স্করপিও জোগাড় করে বাড়ী আসা - কোনটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । সব কিছুতেই ত্রিলোকেশ্বর জড়িত এবং বলা যায় রীতিমত প্রি-প্ল্যানড । 

তাই বীরেশ্বর যাতে নির্বিঘ্নে বাণপ্রস্থে যেতে পারেন নিজে বীরেশ্বরের ভেক ধরে হাওড়া ব্রীজে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেছিল হাজি মস্তান । কলকাতায় গাড়ি ছিনতাই করে ত্রিলোকেশ্বরকে এনেছিল সেখানে । উৎসব রায়চৌধুরী যে বীরেশ্বরের খোঁজে কলকাতায় আসবেন তা' জানা ছিল না । হঠাৎ তেজপালের ট্রাক দেখে আন্দাজ করে নিলেন উৎসব আসছেন । 

তৎক্ষণাৎ বীরেশ্বরকে ছিনতাই করা গাড়িতে তুলে দিয়ে হাজিকে বললেন - খড়্গপুরে গাড়িটা ছেড়ে দিয়ে ভাড়া করা গাড়িতে বীরেশ্বর যেদিকে যেতে চাইবে নিয়ে যেও ।

তিনি তেজপালের ট্রাক দেখে ভেক বদল করে বীরেশ্বরের পোষাক পরে আনমনে গঙ্গার দিকে চেয়ে রইলেন । পরবর্তীকালে পুনরায় মল্লিকপুরে যেতে বাধ্য হলেন । এই ইলেকশনের সময় তাঁর কলকাতায় উপথিতি আবশ্যক । নইলে সি এমের রোষানলে পড়তে হতে পারে । তাই সুযোগ খুঁজছিলেন কেমন করে মল্লিকপুর থেকে পালাতে পারেন । কেই বা তাঁকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করবে। 

ঠিক সেই সময় দেখলেন বাবলুদা এসেছে আমাদের বাড়ীতে। বড়দার নিকট পাওনা নিতে । ত্রিলোকেশ্বরের চোখ দুটো চকচক করে উঠল । 

এর আগে অনুষ্ঠানের দিন বাবলুদার সঙ্গে ওঁর পরিচয় আমিই করিয়ে দিয়েছিলাম। সেই সুযোগে বাবলুদার সঙ্গে আলাপচারিতায় তার ফোন নং নিয়ে রেখে দিয়েছিলেন। 

এখন সেটাই তাঁর কাজে লেগে গেল । মাঝরাতে বাবলুদার ঘুম ভাঙিয়ে তিনি তাঁর মনোবাসনা ব্যক্ত করলেন । বাবলুদা রাজী হল না । তখন স্বমূর্তি ধরে কথোপকথন শুরু করলেন। কি করতে হবে, কখন কি ভাবে করতে হবে সব জানিয়ে হুমকি দিলেন । বাবলুদা সেই রাতেই প্রাণের ভয়ে বড়দার বিরুদ্ধে প্রথম কুকাজটি করে বসল ।

ত্রিলোকেশ্বর কিন্তু সেই গর্ত দিয়ে পালালেন না । এত ধূর্ত - এত ধূর্ত যে তিনি প্রমাণ করতে চাইলেন তিনিই বীরেশ্বর।

আমরা সকলেই তাই ভেবেছিলাম । পুলিশ এসে মনে খটকা না ধরিয়ে দিলে আমাদেরও ভুল ভাঙত না ।

বাবলুদার অসহায়তার কথা আমি অনুভব করলাম। বড়দা কিন্তু তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখে দিলেন । ওকে ডেকে শুরু করলেন ম্যারাথন জেরা ।

- দেখ বাবলু, তুই যে কাজ করেছিস তা' অত্যন্ত গর্হিত কাজ । এ' কথা যদি পুলিশ জানতে পারে তোর কি দশা হবে ভেবে দেখেছিস ?

বাবলুদা বড়দার পায়ে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিল । 

- হেই বড়দা ! আপনি আমায় ক্ষেমাঘেন্না করে দেন বড়দা । আমি কিন্তু প্রাণের ভয়ে এ'কাজ করতে বাধ্য হয়েছি ।

পুলকের কথা শুনে আমি আতঙ্কে শিউরে উঠেছি। কি সাংঘাতিক লোক ওই বীরেশ্বর রক্ষিত ! তার হুমকি যে ঢাকের বাদ্যি নয়; দস্তুরমত সিংহ গর্জন - এটা ভেবেই আমি...

 বড়দা বললেন - সে না হয় আমি বুঝব; কিন্তু পুলিশ? পুলিশ কি তোকে ছাড়বে ? ত্রিলোকেশ্বর বল বা বীরেশ্বর - অনন্তকাল তো পুলিশের চোখে ধূলো দিয়ে বাঁচতে পারবে না ! ধরা একদিন পড়তেই হবে । রাজনৈতিক পটভূমি পাল্টে গেলেই ওঁরা জালে পড়বে । পুলিশি জেরায় পড়ে সিঁধ কাটার ঘটনাও বলবে । তখন কি করবি ?

বাবলুদা কাঁদতে কাঁদতে বলল - জীবনে কোনদিন কারও ক্ষতি বা অমঙ্গল চাইনি, ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়েছি । আপনিই আমার একমাত্র পরিত্রাতা । আপনি যদি চান আমাকে মারতে পারেন; বাঁচাতেও পারেন । তবে আমি ভেবে দেখেছি অপবাদ মাথায় নিয়ে আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না । আমি আজই রেলে মাথা দেব ।

আমি শুনছি আর আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। এমন একজন নির্দোষ মানুষ স্রেফ ভাগ্যদোষে মরতে যাবে এটা মেনে নিতে পারছি না ।

বললাম - বাবলুদা, অত ভেবো না । আচ্ছা, তোমার কি মনে হয় বড়দা থাকতে তোমার কোন শাস্তি হবে ? তাছাড়াও আমি আছি তোমার পাশে । 

বাবলুদা আশ্বস্ত হল কি না বলতে পারব না ; বড়দা ঘুরেফিরে একই কথা বললেন - আমাকে একবারও জানাবার প্রয়োজন মনে করলি না ?

আমি বললাম - বড়দা ছেড়ে দিন । ও তো অকপটে সব দোষ স্বীকার করে নিয়েছে ; এখন ওকে রেহাই দিন।

বড়দা বললেন - তুই থাম । এখানে অনেকগুলো লোকের নিরাপত্তার প্রশ্ন রয়েছে । আমিও বুঝি বাবলু মহৎ লোক কিন্তু ওর মাথায় গোবর ভরা আছে । 

আমি কোন প্রতিবাদ করলাম না । গোপা আর বুকুন এসে বলল - বড়দা যদি অনুমতি করেন তো বলি; আমরা বাবলুদাকে কিছুদিনের জন্য দুমকায় নিয়ে যেতে চাই । ওর মনের যা অবস্থা তাতে একটা পরিবর্তন প্রয়োজন । 

বড়দা হাসলেন ।

- বলছ যখন আমি বাধা দেব না । তবে ও যেখানেই থাক শান্তি পেলে বাঁচি। 

বাবলুদা বলল - আমি কোথাও যাব না । সারাজীবন এই গাঁয়ে আছি, থাকব । এখানেই শেষ নি:শ্বাসটুকু নিতে চাই ।

আমি বললাম - বাবলুদা আমিও তো যাচ্ছি । দিনকয়েকের মধ্যেই ফিরে আসব । চল না ! ক'টা তো দিন !

বাবলুদার মত পরিবর্তন করা গেল না ।

- ওটি হবে না । আমি এখানেই থাকব । বড়দার ছত্রছায়ায়। তা'তে আমাকে পুলিশ কেন, বাঘে ধরলেও ভয় পাই না ।

বড়দা বললেন - যাক গে । ও সব ছাড় । এখন আমাকে জানতে হবে ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিতের ইতিহাস, ওর কর্মপরিধি । আর বীরেশ্বর কোথায় গা ঢাকা দিয়েছেন তারও খবর নিতে হবে । কাল তোরা দুমকা গেলে আমিও রওনা দেব ।

আমি পড়লাম আর এক চিন্তায় । বড়দা তো যাবেনই । ওঁকে ধরে রাখা অসম্ভব । বললাম - একা একাই যাবেন বড়দা ? না মানে ..

- দেখ ভাই, সবেতেই মানে খোঁজার চেষ্টা করিস না । এতদিন যে আমার চোখের আড়ালে ছিলি, তখন তো কোন দরদ দেখাসনি ? আর আমি তো যাচ্ছি কাজ নিয়ে - এতে তোর কিসের চিন্তা?

- চিন্তা তো হবেই বড়দা। এমন কাজ নিয়ে বেরোলে চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক । আমি বরং আপনার সঙ্গে চলি ।

- তা' হয় না ভাই । বউমা, বুকুন কত আশা নিয়ে অপেক্ষা করছে । ওদের সঙ্গে না যাওয়াটা তোর অপরাধ করা হবে ।

বাবলুদা সব শুনছিল । উঠে এসে বড়দাকে বলল - আমাকে নিয়ে চলুন বড়দা । একজন সঙ্গী থাকলে কিছুটাও তো ভালো লাগবে ।

- বলছিস ? চল তবে । ভয় পাবি না তো ? কারণ আমাকে পুলিশের সাহায্য নিতেই হবে । আর তখন যদি তোকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ?

- করলে করুক । আমি সত্যি কথাটাই বলে দেব । বিশ্বাস করলে ভালো , না করলে বড়জোর হাজতে ভরে দেবে ।

- তা'তে আমার কি লাভ হবে ? সেই তো একা হয়ে যাব ।

বাবলুদা একটু ভেবে বলল - সে দেখব'খন । আগে চলি তো !

 (চলবে )



साहित्याला गुण द्या
लॉग इन

Similar bengali story from Crime