STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
322

অষ্টপঞ্চাশৎ অধ্যায় 


বড়দা স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎকার সেরে সেদিনই কলকাতা থেকে মল্লিকপুরের দিকে রওনা দিলেন । জ্যোৎস্নাকে যে কিডন্যাপ করা হয়েছে বড়দা জানলেও বাবলুদাকে এর বিন্দুবিসর্গও জানালেন না ।

ধর্মতলা থেকে বাসে করে বর্ধমান পৌঁছালেন। দু'ঘন্টার বাস জার্নি সত্বেও বড়দা বাবলুকে এ নিয়ে কিছু জানালেন না । গ্রামে ঢুকলেই জেনে যাবে এবং সেটাই ভালো হবে। 

বাবলুদা বলল - আচ্ছা বড়দা , একটা কথা আপনাকে জানাতে ভুলে গেছি । বীরেশ্বর এবং ত্রিলোকেশ্বর যমজ সন্তান । তাঁদের চেহারায় অদ্ভুত রকমের মিল । কিন্তু আমি সেই রাতে ভদ্রলোকের বাঁ হাতে একটা বড় লোমশ যুক্ত জড়ুল দেখেছি। এখন তিনি বীরেশ্বর নাকি ত্রিলোকেশ্বর তা তো বলতে পারব না । আপনি কি এ বিষয়ে কিছু জানেন ?

বড়দা বললেন - বীরেশ্বর রক্ষিতকে আমি হাফ হাতা জামা পরে থাকতে দেখেছি বটে ; খেয়াল করিনি হাতে কোন জড়ুল আছে কি না ।

বাবলুদা বলল - আমি কিন্তু স্পষ্ট দেখেছি ভদ্রলোকের বাঁ হাতের জড়ুলটা ।

- তাই তো ! বীরেশ্বরের হাতে যদি ওই ধরণের কোন জড়ুল থাকত, আমার নজরে নিশ্চয় পড়ত । তা' যখন পড়েনি তখন লোকটি নি:সন্দেহে ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত । অন্তত তোর কথায় তো তাই মনে হচ্ছে । 

- বড়দা ! ওনারা দু'ভাই কিন্তু ভয়ঙ্কর । বীরেশ্বরকে আপনারা যেমন চিনেছেন ,তেমনি আমি চিনেছি ত্রিলোকেশ্বরকে । 

- সেই জন্যই তো তোকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ২৬/২ সূর্য্যসেন স্ট্রীটে তোকে নিয়ে গিয়ে সনাক্ত করব । কিন্তু হঠাৎ বাড়ীতে ফিরতে হল বলে..

- এ ভাবে চলে এলেন কেন ? বেশ তো হত ভদ্রলোককে দিনের আলোয় চাক্ষুষ করতাম !

- সে তো হবার নয় রে ! তিনি এখন কলকাতাতেই নেই ।

- কোথায় গেছেন ?

- বোকার মত প্রশ্ন করিস না তো ! ও কি এক জায়গায় বসে থাকার লোক ! এই দেখ না, গতকাল আমাদের বাড়ী ফাঁকা দেখে রাতে বাড়ীতে ঢুকে আশ্রয় চেয়েছিল । ভোর বেলায় আবার পালিয়েছে । তবে এসেছিল একা , পালিয়েছে আর একজন রমণীকে নিয়ে ।

- কা'কে ? বড়দা শুনেছি আমার শাশুড়ি মা রাতে আপনাদের বাড়ীতে ছিলেন । তবে কি...

- তা' হলে তো আমার ততটা মাথা ব্যথা হত না রে বাবলু । ও যাকে নিয়ে গেছে সেইটে যে ভীষণ ভয়ের ।

- কে সেই হতভাগী বড়দা ?

- না থাক এখনই বলব না । গাঁয়ে তো এসেই গেলাম ; নিজেই জেনে যাবি । 

বাবলুদা নাছোড় । বলল - যত ভয়েরই হোক, আমার কৌতূহল চেপে রাখতে পারছি না । আপনি বলুন।

- বলব ? সহ্য করতে পারবি তো ?

- পারব পারব । আপনি বলুন ।

- তোর বউকে ধরে নিয়ে গেছে । সেটাই তো চিন্তার ।

বাবলুদা আর স্থির থাকতে পারল না । শিশুর মত ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ' এ আমার কি হল গো !

কেঁদে একশা হয়ে বাবলুদা যখন গাঁয়ে ঢুকল উদ্ভ্রান্ত মীনাক্ষী কাকিমা ওকে দেখে শাপ-শাপান্ত করতে লাগলেন। বাবলুদা সব হজম করে বড়দাকে বলল - আমি জানতাম । লোকটা বলেছিল সর্বনাশ করবে । করলও। এখন এই বুড়িটার ভীমরতি কি করে কাটাই বড়দা ?

বড়দা মীনাক্ষী কাকিমাকে এই দুর্যোগকালে চুপ করতে বললেন । আমরা তো দুমকা থেকে ফিরে সব জেনে গেছি। গোপা মীনাক্ষী কাকিমাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে বিফল হয়ে ক্ষান্ত হল ।

গোটা গ্রাম তখন বাবলুদার ঘরে ভীড় জমিয়েছে। কেউ সহানুভূতি জানাতে এসেছে, কেউ বাবলুর অকর্মণ্যতাকে দায়ী করে গায়ে জ্বালা ধরা মন্তব্য ছুঁড়ছে।

বড়দা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন জনতাকে শান্ত করতে ।

আমি বাবলুদার হাত দুটো ধরে সমবেদনা জানাচ্ছি । সে আমাকে জড়িয়ে ধরে ' এ কি হল গো আমার ' বলে কান্নাকাটি করছে । 

একসময় বাবলুদা বলে উঠল - নাহ্ আর নয় । এবার আমাকে কিছু একটা করতেই হবে । 

আমি বললাম - ভেবো না বাবলুদা, বড়দা থাকতে বউদিদির কোন ক্ষতি হতে দেবেন না । ওই দেখ বড়দা ফোন করছেন ।

বলে ওকে বড়দার দিকে নিয়ে গেলাম । বড়দা তখন বর্ধমানের পুলিশ সুপারের সঙ্গে তর্ক করছেন - বর্ধমান থানাকে সতর্ক করা সত্বেও ওরা কেন ব্যবস্থা নেয়নি ?

সুপারের কথাগুলো শুনতে না পেলেও বড়দা যে স্বরাষ্ট্র

সচিবের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন তাতেই কাজ হল । পুলিশ সুপার বললেন - আমি নিজে ফোর্স নিয়ে যাচ্ছি সরেজমিনে তদন্ত করতে । 

বাবলুদা শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হল বৈ কি ! কিন্তু মীনাক্ষী কাকিমা লাফ দিতে দিতে বললেন - আমার মেয়ে যদি অক্ষত শরীরে না ফিরে আসে তো আমি তোমাদের কাউকে ছাড়ব না । ওই পোড়ার মুখোটাকে তো নয়ই।

পোড়ার মুখো মানে বাবলুদা - ওঁর জামাই ।

- ওনার কি দরকার ছিল কলকেতা যাবার ? 

বড়দা বললেন - ও কাকী! আমি নিয়ে গেছলাম। তুমি ওকে গালাগালি করছ কেন , মনে করলে সব গালি আমাকেই দাও । ও বেচারার তো কোন দোষ নেই !

বড়দার কথায় কাকিমা তখনকার মত ক্ষান্ত হলেন ঠিকই কিন্তু বাবলুদার প্রতি একটা বিজাতীয় ঘৃণা নিয়ে ফের কাঁদতে বসলেন ।

বর্ধমানের পুলিশ সুপার মিঃ সুলতান আহমেদ তিনটে গাড়ির কনভয় নিয়ে আমাদের বাড়ীর দরজায় এসে নামলেন । বড়দাকে সঙ্গে নিয়ে এ রুম সে রুম ঘুরে দেখলেন। রিপেয়ারিং করা সিঁধ দেখলেন। তারপর বড়দাকে বললেন - আপনার বাড়ীতে সিসিটিভি লাগানো নেই ?

বড়দা হাসলেন । 

- সিসিটিভি লাগালেই কি অপরাধের কিনারা হয়ে যায় মিঃ আহমেদ ? তাহলে তো কথাই ছিল না । যে গ্রামে টিমটিম করে বিজলী বাতি জ্বলে সেখানে সিসিটিভি লাগিয়ে কি হবে ?

- আচ্ছা বেশ । এবার পায়ের ছাপ গুলো নিতে হবে । 

বলে একজন অফিসারকে নির্দেশ দিলেন। বড়দা বললেন - সে সব আমি নিয়ে রেখেছি এবং ল্যাবে পাঠিয়েও দিয়েছি ।

- ভেরী গুড । অর্দ্ধেক কাজ তো সেরেই ফেলেছেন । এবার বলুন তো আপনি কাকে সন্দেহ করছেন ?

বড়দা বরাবরই সোজা কথার মানুষ। সুপারের এ হেন বালসুলভ প্রশ্নের উত্তর দিলেন - আমার সন্দেহের তালিকা বড় । সেখানে আপনিও আছেন ।

- মানে ? কি বলতে চান আপনি ?

আমি দেখলাম তর্ক বিতর্ক শুরু হয়ে যাবে । আবহাওয়া পরিবর্তন করতে বললাম - আপনারা আপনাদের কাজ করুন স্যার । 

- আপনি কে ?

বড়দা বললেন - আমার ছোট ভাই । সন্দেহের তালিকায় ওর শ্বশুরমশাই এবং কাকাশ্বশুর মশাইও আছেন ।  

- তাহলে ওদের দু'জনকে গ্রেপ্তার করলেই তো ঝামেলা মিটে যায় ।

- অবশ্যই মিটে যায় । কিন্তু গ্রেপ্তা করবেন কে ? আপনি?

শুনুন মিঃ আহমেদ! বীরেশ্বর রক্ষিত এবং ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিত দু'জনই রাজনৈতিক মদতপুষ্ট । আর আপনারা যারা প্রশাসনের তাবেদার তাদের সাধ্য কি ওঁদের গায়ে কুটোর আঁচড় দিতে । 

এবার সুপার সাহেবের বোধগম্য হল ওঁদের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে । 

- ঠিক আছে মিঃ রায়চৌধুরী, আমি সমস্ত থানাগুলোকে সতর্ক করে দিচ্ছি যাতে ওঁদের গতিবিধি সম্বন্ধে আমাকে অবহিত করেন। 

বড়দা বললেন - স্বরাষ্ট্র সচিবও গতকাল এ কথা আমাকে বলেছেন । আপনারা কোন সতর্ক বার্তা পেয়েছেন কি ?

- হোম সেক্রেটারীর কাছ থেকে। এখনও তেমন কিছু পাইনি। তবে আপনি বলছেন যখন খবর নেব ।

বড়দা বুঝে গেলেন এঁরা কিছু করবেন না । যা করার তাঁকেই করতে হবে ।

বললেন - আপনাদের বিশেষ কিছু করতে হবে না ; শুধু যে মেয়েটিকে কিডন্যাপ করা হয়েছে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করুন ।

এস পি সাহেব দলবল নিয়ে চলে গেলেন । 

দু'তিনদিন পর কলকাতার কাগজগুলোতে খবর হয়ে গেল মল্লিকপুর গ্রামের ঘটনা । সঙ্গে লাইন জুড়ে দেওয়া হল ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ চরমে । হয়তো রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ইঙ্গিত এখানে স্পষ্ট ।

 ( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime