STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Classics

4  

Nityananda Banerjee

Classics

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
375

ঊনবিংশ অধ্যায়


- উঁহু হুঁ ! একদম নয় !

সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বীরেশ্বর রক্ষিত গর্জন করে উঠলেন । 

- একদম পকেটে হাত দেবার চেষ্টা করবে না ! নইলে পুরো পিস্তল খালি করে দেব । এটা আমার দৈনন্দিন খেলা - জান তো !

মিঃ উৎসব রায়চৌধুরী বিস্মিত হলেন । একজন অতিথির প্রতি এরূপ আচরণে অভ্যস্ত নন তিনি। বললেন - আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি ; হঠাৎ সমর সজ্জা নিলেন কেন ?

পিস্তল তাক করেই সামনে এসে দাঁড়ালেন তিনি। 

- আমার সঙ্গে কেন দেখা করতে চান ?

আগন্তুককে নিরীহ গোবেচারা দেখে পিস্তলটা পকেটে ভরে নিলেন বীরেশ্বর । 

মিঃ রায়চৌধুরী বললেন - আমি বুকুন সম্পর্কে কিছু জানতে চাই ?

- কে বুকুন ? ও সব বুকুন উকুন আমি জানি না । আর জানলেই আপনাকে বলতে হবে তার কি প্রয়োজন আছে ?

এবার বীরেশ্বরের কথাবার্তায় একটুখানি শালীনতার আভাস মিলল । ' তুমি ' থেকে ' আপনি'তে উন্নীত হল সম্বোধন। 

মিঃ রায়চৌধুরী বললেন - বলতে তো আপনাকে হবেই। আপনার উত্তর না পাওয়া পর্য্যন্ত আমার স্বস্তি নেই ।

- তার আগে আপনি কে বলুন তো ? কোত্থেকে আসছেন? 

মিঃ রায়চৌধুরী বিনীত ভাবে বললেন - ভয় পাবেন না। আমি ই ডি বা সি বি আই নই ; আপনি আশ্বস্ত হোন।

আমি একজন কৃষিজীবী মানুষ। এসেছি দূর গ্রাম থেকে ।

বীরেশ্বর বললেন - আপনাকে দেখে তো একটি ছেলের কথা মনে পড়ে গেল । 

- এই তো ! চিনতে পারছেন তাহলে ? এবার ভদ্রলোকের মত বলুন দেখি বুকুন কে ? কোথায় থাকে ? তার বাবা মায়ের নাম কি ?

বীরেশ্বর এত সহজে দমে যাবার মানুষ নন। উল্টে জিজ্ঞাসা করলেন - কি নাম আপনার ?

- আমি শ্রী উৎসব রায়চৌধুরী।

বিষম খেলেন বীরেশ্বর । কয়েকটা হেঁচকি তুলে সুনেত্রাকে ডাকলেন - কই রে দিদিভাই? এক গ্লাস জল আন তো !

সুনেত্রা যেন তৈরী হয়েই ছিল । ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা জলের বোতল বের করে একটা সুদৃশ্য গ্লাসে ঢেলে উপস্থিত হল বীরেশ্বরের সম্মুখে । বীরেশ্বর গ্লাস হাতে নিয়ে ঈশারায় সুনেত্রাকে চলে যেতে নির্দেশ দিলেন। সুনেত্রা তড়িঘড়ি সেখান থেকে বিদায় নিল ।

গ্লাসে চুমুক দিয়ে বীরেশ্বর বললেন - রায়চৌধুরী নামটা বেশ শোনা শোনা মনে হচ্ছে । বললেন - আপনার বয়স কত ? 

উৎসব বললেন - তা ধরুন সাতাত্তরের মত হবে । কিন্তু বয়স জেনে আপনি কি করবেন ?

তার উত্তর না দিয়ে অঙ্ক কষতে শুরু করলেন ।

' আপনার বয়স সাতাত্তরই ধরলাম । বিয়াল্লিশ বছর আগে আপনি তখন পঁয়ত্রিশ ছিলেন । মানে ....

আচ্ছা বলুন তো আপনার কোন ভাইটাই বা ছেলে আছে ?

মিঃ রায়চৌধুরী বললেন - আমি অবিবাহিত।

- তা'হলে আপনার ভাই ? আছে কেউ ?

মিঃ রায়চৌধুরী বললেন - আমি একলা ।

হাসিতে ফেটে পড়লেন বীরেশ্বর । 

- তাহলে আপনি বুকুনের খোঁজ নিচ্ছেন কেন ?

- তাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন ।

- আপনি কি ভাবে বুঝলেন বুকুন আমাদেরই কেউ ?

- আপনার তা না জানলেও চলবে । কিন্তু আমার জানবার প্রয়োজন আছে । 

দেয়ালের ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখলেন দু'টি মেয়ের ছবি টাঙানো আছে । আঙুল দেখিয়ে বললেন - ছবিতে ওই দু'জন আপনার কে হয় ?

পিছু ফিরে দেখলেন বীরেশ্বর । 

- ও ওটা ? একজন আমার স্ত্রী অন্যজন মেয়ে। স্ত্রী গত হয়েছেন আর মেয়ে নিরুদ্দেশ ।

উৎসব দেখলেন এ ভাবে কথা আদায় করা যাবে না । তিনি অন্য পথ ধরে বললেন - মেয়ের বিয়ে দেননি ?

বীরেশ্বর অধৈর্য্য হয়ে উঠলেন ।

- এ সব অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা ছেড়ে আসল কথা বলুন। নইলে দরজা খোলা আছে পথ দেখুন ।

- বুকুন ছেলে না মেয়ে ? আর আপনার মেয়ের নাম কি গোপা রক্ষিত ?

- না, আমার মেয়ে বিয়াল্লিশ বছর আগে রায়চৌধুরী হয়ে গিয়েছে। 

- তার মানে ? আপনি বলতে চাইছেন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন? কার সাথে ?

বীরেশ্বর ঢোক গিলে বললেন - সামওয়ান পুলক রায়চৌধুরীর সাথে । 

মিঃ রায়চৌধুরী বললেন - পুলক ! সে তো আমার ভাই! সে কিন্তু বিয়ে থা' করেনি তো ? 

বীরেশ্বর মিঃ রায়চৌধুরীকে চেপে ধরলেন।

- হ্যাঁ হ্যাঁ, পুলক । পুলকের সঙ্গেই বিয়ে দিয়েছিলাম । বেটা পালিয়েছিল! হাতে পেলে না; ডালকুত্তাকে দিয়ে জ্যান্ত খাওয়াব ।

- পেলে তো ? সে তো এখন দুমকায় বাড়ী তৈরী করে চুটিয়ে সংসার করছে।

গোঁ গোঁ করে উঠলেন বীরেশ্বর । মিঃ রায়চৌধুরীর হাত ধরে বললেন - আমাকে দেখিয়ে দিতে পারবেন?

- কেন ? আমার কি দায় পড়েছে ? 

বীরেশ্বর পকেট থেকে পিস্তল বের করে উৎসবের মাথায় ঠেকিয়ে বললেন - এক্ষণই চল্ আমার সঙ্গে। হতচ্ছাড়াটাকে গুলি করে মারব । 

- ভালোই হবে। আমিও নিষ্কন্টক হব । কিন্তু এ ভাবে তো যাওয়া যায় না । একবার তো তাকে জানিয়ে দিতে হবে আমি যাচ্ছি ।

- তো ফোন করে বলে দে? 

অশ্লীল সুরে কথাটা বললেন বীরেশ্বর । 

- কিন্তু ফোনটাই তো ফেলে এসেছি !

বীরেশ্বর নিজের ফোন দিয়ে পুলকের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলেন।

মিঃ রায়চৌধুরী পুলকের নাম্বারে ফোন করে বললেন - শোন ভাই, আমি একটা কাজে দুমকা আসছি । বৌমাকে বলবি যেন রাতের খাবারের আয়োজন করে ।

আমি শ্রী পুলক রায়চৌধুরী এক্স-চিফ সুপারিন্টেণ্ডেন্ট। বড়দার ইঙ্গিত বুঝে নিলাম । বললাম - ঠিক আছে বড়দা ! কিন্তু আপনারা ক'জন আসছেন ?

উৎসব বীরেশ্বরের দিকে চাইলেন। বীরেশ্বর বললেন - আমি , ড্রাইভার আর তুই - তিনজন।

মিঃ রায়চৌধুরী ফোনে তিনজনের যাবার কথা বলে ফোন কেটে দিলেন। মোবাইলের ট্রু-কলারে ঢুকে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পুলকের নং ডিলিট করে দিলেন। 

ফোনে কোন নং দেখতে না পেয়ে বীরেশ্বর বুঝে গেলেন পুলকের নং টা মুছে দেওয়া হয়েছে। তাঁর রাগ আর এক ধাপ চড়ে গেল । 

উৎসবের একটা হাত কাঁধে তুলে নিয়ে বললেন - চল্ ।

উৎসব বললেন - এ ভাবে কেন ?

- যা বলছি কর । কাঁধে হাত রাখ। রাখ বলছি। আর হেসে কথা বল !

তারপর ওই ভাবে তাঁরা বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেলেন। সুনেত্রা কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল - দুর্গা দুর্গা।

ত্রিলোকেশ্বর দেখলেন ওঁরা দু'জন বন্ধুর মত হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন ।

শিয়ালদহ স্টেশনের সামনে এসে বীরেশ্বর ওঁর ড্রাইভারকে বললেন - যা দেখি পাঁচশ টাকার রকমারি মিষ্টি নিয়ে আয় । 

উৎসব রায়চৌধুরী বললেন - মিষ্টি কি হবে ?

- ভেব না, সামাজিকতা রাখতে নিচ্ছি । পথ তো অনেকটাই; খেতে হবে তো !

- কিন্তু আমি তো মিষ্টি খাই না! সুগার আছে।

- তুই হাওয়া খাবি । চুপচাপ বস ।

মিঃ রায়চৌধুরী বললেন - একটা ফোন কিনে আনি। এই ড্রাইভার ভাই আমাকে একটু ফোনের দোকানে নিয়ে চল । 

বীরেশ্বর দেখলেন তাঁর হাজি মস্তান ড্রাইভারের সঙ্গে যায় তো যাক । কতবার ফোন দেব ওটাকে । যা হাতের কায়দা দেখলাম ফোনের তত্ত্বগুলো না দেখে ফেলে ।

ড্রাইভার যে দোকানে মিষ্টি কিনল তারই উপরতলায় ফোনের দোকান । আর তার পাশের দরজাটা খুললেই উৎসব যে হস্টেলে উঠেছেন সেটা । উৎসব ড্রাইভারকে নিয়ে ফোনের দোকানদারকে কানে কানে কিছু বললেন। সে কর্মচারীকে ফোন দেখাতে বলে হস্টেল থেকে ফোন নিয়ে উৎসবের পকেটে রেখে দিল । কিন্তু বীরেশ্বরকে দেখানোর জন্য একটা নতুন ফোন সিমকার্ড সহ কিনে গাড়িতে উঠলেন ।

ড্রাইভার বলল - কোথায় যেতে হবে ?

বীরেশ্বর উৎসবকে দেখিয়ে বললেন - ও যেখানে নিয়ে যাবে ।


( চলবে )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics