আদায় কাঁচকলায়
আদায় কাঁচকলায়
ছোটলোকের বাচ্চা, তোদের বাড়ির গাছ। ফল খাস তোরা আর পাতা পড়বে আমার বাড়ি!কাল যদি আবার পাতা পড়তে দেখি আমি কিন্তু ডালটা কেটে দেবো।তখন আমাকে দোষ দেওয়া যাবে না।"
"মরণদশা!মাছ কেটে নাড়িভুঁড়ি কলতলায় ইচ্ছে করে ফেলে রেখেছে, যাতে কাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসে!এই জন্যই বলে হাড় হাভাতে!জীবনে মাছ দেখেনি!পাড়ার লোক জানিয়ে মাছ খাচ্ছে।ঝাঁটাটা দে তো রিমি,ঝেঁটিয়ে ও বাড়ির পাঁচিল টপকে ফেলি!"
"আবার জানালা খুলেছে!এমন জানোয়ার তো দেখিনি!"
"আবার শুঁটকি রেঁধেছে!ছিঃ মাগো!কি গন্ধ!একি মানুষ না পিচাশ!পচা মাছ খায়!"
ঘোষ বাড়ি আর মাইতি বাড়ি।কলকাতার তিন নং রাধামাধব রায় লেনের দুই একতলা বাড়ি পাশাপাশি গত পঁচিশ বছর।আগে সম্পর্ক ছিল নরমে ।বেশ ভাব ভালোবাসাই ছিল কিন্তু যবে থেকে গণেশ ঘোষ যে পার্টি আর নরেন মাইতি অন্য রংয়ের রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছে এবং নরেন বেশ টুপাইস কামাতে শুরু করেছে তবে থেকে একটু ঠোকাঠুকি!
এরপর আবার ঘোষ বাড়ির বড় ছেলে যখন করপোরেশনের চাকরি পেল নিন্দুকে বলে রং এর জন্য।সেই কথা মুখের উপর বলায় বাড়ির পুরুষদের হাতাহাতি আর মেয়েদের চুলোচুলি।তারপর থেকে দুই পরিবার আদায় কাঁচকলায়!
এভাবেই গালমন্দ আর কাদা ছোড়াছুড়ি, তাও চলছে বেশ ক'বছর।
এবাড়ির পুঁচকে মন্টু ও বাড়ির পুঁচকি দিয়াকে দেখে মুচকি হাসে।ওবাড়ির ক্লাস টেনে পড়া রিমি এবাড়ির দীপ্তেশকে দেখে লজ্জা পায়!কিন্তু কথা?অসম্ভব।তাহলেই পাড়া মাথায় করবে বাড়ির বড়রা!
গত কদিন ধরে মাইতি বাড়ি চুপচাপ!"কি ব্যাপার! বাড়িতে কেউ নেই নাকি?"ঘোষ বাড়ির বড় গিন্নী ছোটজাকে জিজ্ঞাসা করে?
ছোট জা ঠোঁট উল্টায়,"কি জানি দিদি,কি করে বলবো?"
জেঠির কথা শুনে রিমি বলে,"জানো না,মাইতি দাদুর তো করোনা হয়েছে!"
"তাই?"ঘোষ গিন্নী জানতে চায়,"তুই কি করে জানলি?"
রিমি ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয়,"ফেসবুকে দেখলাম।দীপ্তেশদা লিখেছে"।
"তাই"!ঘোষ গিন্নী বলে ,"বেশ হয়েছে,বুড়ো যা জ্বালিয়েছে!"
"ওরকম বোলো না জেঠি।ওদের খুব কষ্ট ,খাবার দাবারের খুব অসুবিধা।কেউ বাজার করার নেই, ওদের কেউ তো বেরোতেই পারছে না!"রিমির মুখে কষ্টের ছাপ।
"আমরা কিছু জানতে পারিনি বলো দিদি!এক দেওয়ালে বাড়ি,তবু!কি বদমাইশ দেখেছো!আমাদের কিছু বলেনি।যদি রোগটা আমাদের কারো হয়!"
"আঃ!ছোট চুপ কর!"এক ধমকে রিমির মাকে থামিয়ে দেয় ঘোষ গিন্নী।
রাত্তির তখন আটটা, হঠাৎ ঘোষ গিন্নী বিরাট একটা টিফিন কৌটোতে আলুর দম আর হটপটে রুটি করে রিমিকে ডাকেন,
"রিমি ,রিমি",পড়তে পড়তে রিমি ছুটে আসে," কি বলছো জেঠি?"!
"যা ছাদে গিয়ে এ দুটো ওবাড়ির কাউকে দিয়ে দে।আর বলবি এ কদিন দুবেলা আমরা রেঁধে দেবো।ওদের রান্না করতে হবে না!"
ছেলেকে ডেকে আদেশ শুনিয়ে দেন,"ওদের যা যা লাগবে একটু এনে দিস!ওষুধ পত্রটত্র।"
"কিন্তু মা..",কিছু বলার আগেই ঘোষ গিন্নী থামিয়ে দেন,"তোমার বাবার হার্ট অ্যাটাকের সময়টা ভুলে গেছো?মাইতি ঠাকুরপো না থাকলে পারতাম তোমার বাবাকে বাঁচাতে?"
"কিন্তু তখন তো..",
"ও তখন ভাব ছিল তাই উপকার নেওয়া যায় আর ভাব না থাকলে সাহায্য করা যায় না ,তাই তো?", এবারও ছেলেকে মুখ খুলতে দেন না ঘোষ গিন্নী!
©®