২০ বছর পর
২০ বছর পর


গেটের সামনে গাড়ি থামার আওয়াজে ছুটে দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে হাত নাড়লাম। দেখলাম আমার মেয়ে জামাই আর তাদের দুই সন্তান, সঙ্গে বেশ অনেকগুলো বাক্স প্যাঁটরা। যাক বাবা, এবার তাহলে কটা দিন থাকবে।
ওরা এলে নাতি নাতনিকে কাছে পেয়ে ওদের দাদু যে কী খুশী হয়! আমিও অনেক নিশ্চিন্তে থাকি মানুষটাকে খুশী দেখে, যতই হোক এতবড়ো বাড়ীতে কি এরকম একা একা ভালো লাগে কেবল কাজের লোকজনের ভরসায়? তবু মেয়ে জামাই সপরিবারে যে বছরে একবার আসে ঠিক নিজেদের সংসার-ধর্ম কাজ-কর্ম সব সামলে, তাই অনেক। অনেকের ছেলে মেয়েরা তো এটুকুও করতে পারে না।
আর ঐ মানুষটা তো চিরকাল একগুঁয়েই রয়ে গেলো! আমি কতদিকে আর কতটুকুই বা খেয়াল রাখতে পারি? বোঝে না মানুষটা! দেখা যাক, এবারে যদি মেয়ে জামাই রাজী করাতে পারে বাবাকে, ওদের কাছে ওদের সঙ্গে থাকবার জন্য। ঈশ্বর ওনার সুমতি দিন! মেয়েটা হাজার কাজের চাপের মধ্যে বড্ড উদ্বেগে থাকে, বাপের বাড়ীর চিন্তায়। নাহ্, উনি কিছুতেই রাজী হলেন না নিজের বাড়ী ছেড়ে যেতে। মানুষটা আমাকে কোনোদিন শান্তিতে স্বস্তিতে থাকতে দিলো না!
মেয়ে সপরিবারে এবার নিজের সংসারে ফিরে যাচ্ছে, ভারী মন নিয়ে। মায়ের কুড়ি বছরের মৃত্যু বার্ষিকীর কাজ নির্বিঘ্নে মিটিয়ে আমার মেয়ে ওর বাবাকে একলা রেখে চোখে জল নিয়ে গাড়িতে উঠলো। আমি বললাম, "ভাবিস না, আমি আছি তো! শরীরটা তো খাঁচা ছিলো কেবল, আত্মাটা যে তোদের কাছেই আছে।"
মেয়ে সজল চোখে, আমার কথা শুনতে পেলো কিনা কে জানে?
(সমাপ্ত)