সোহাগীরা
সোহাগীরা


ওগো সোহাগীরা, হয়তো সকলেই পরেছো হাতে,
কিছু কথা বলি, মন দিয়ে শোনো, ক্ষতি নেই তাতে।
সিন্ধু সভ্যতা থেকে শুরু করে প্রাচীন রোমেও ছিলাম,
আগে থেকে ধাতুর চুড়িদের তো আদর ছিল বরাবর!
নতুন আবিষ্কার আমরাও সমাজে জায়গা পেলাম।
নতুন বলতেও খ্রীস্টের জন্মের বহু আগেই এসেছি,
অনেক আগুনের তাপ সহ্য করে এ জীবন পেয়েছি।
শুধু দেখতেই চকচকে, সুন্দর আমাদের কারুকাজ,
তা মোটেও নয়, আছে রিনরিনে মিষ্টি আওয়াজ।
ভারতের ফিরোজাবাদ এ ব্যাপারে পেয়েছে তাজ।
আধুনিকতার চাপে কারিগরদের যাচ্ছে চলে কাজ,
মেলায়, হাটে, বাজারে কজন আর কেনে আজ ?
চুড়িওয়ালী নিজের খুশীতে স্টীলের বাসন ওয়ালী !
খুব চাপ, তবু তার হাতে আমরা আজও শোভা পাই,
যদিও নেই আগেকার মতো রেশমী চুড়ির বড়াই !
কিছু গেঁয়ো মানুষ তাদের উৎসবে, পরবে চায় বলে,
এখনও আমরা পৃথিবী থেকে একেবারে যাইনি চলে।
সকলে আমাদের হামেশাই খুব সস্তা ভেবে এসেছে,
কিনতে গিয়ে মানুষেরা খুব করে দরদাম করেছে ।
কেন? না, কাঁচামালে
র অভাব তো একেবারে নেই !
ধূলো মাটির এই পৃথিবীতে বালির অভাব কোথায় ?
বেশী পরিমাণে থাকলে তার দাম কি পাওয়া যায় !
কিন্তু যারা, আগুনের তাপে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে,
আমাদের বানায়, নানা রঙ দিয়ে, কাঁচ গলিয়ে !
তারা কবে, কোথায় ওদের নিষ্ঠার দাম পায় ?
যখন সকলেই থাকি একসাথে আগুনের তাতে রাঙা!
ছুঁলেই পুড়ে যাবে ওদের ঐ কালশিটে পড়া হাত,
আমাদের কপাল তো জন্মানোর পর থেকেই ভাঙা।
পোড়া কপালেরা এক একটা চুড়ি আগুনের তাতে,
জুড়ে দেবার পরেই সোহাগীরা পড়তে পারে হাতে।
অর্থ ও ক্ষমতার প্রতীক লাল আমরা, নীলেরা জ্ঞান,
বেগুনী রা দিই স্বাধীনতা, সবুজ বিবাহিত ভাগ্যবান।
সাফল্যের তরে কমলা, সাদা নতুন করে শুরু করা,
কালো চুড়ি শক্তির, আর সুখী যতো আমরা হলুদেরা।
রূপালী রঙের চুড়ি দেয় তেজ, সোনালী সৌভাগ্যের,
আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য প্রত্যেক রঙের চুড়ির,
আসলে সকলকে ভালো রাখাই লক্ষ্য আমাদের।