সমাজের প্রতি দ্রৌপদী
সমাজের প্রতি দ্রৌপদী


আমি দ্রৌপদী।
হ্যাঁ, মহাভারতের দ্রৌপদী!
আমি ধ্রুপদ- কন্যা পাঞ্চালি, দৃষ্টদ্যুম্ন তথা শ্রীখন্ডী ভগিনী,
আমি পান্ডব-পত্নী, কুরুকূলবধূ , সকল-শাস্ত্রজ্ঞানী।
আমি অগ্নিকন্যা, শ্রেষ্ঠ সুন্দরী, ইন্দ্রপ্রস্থের রানি,
ভীম তথা অর্জুনের মতো যোদ্ধা আমার স্বামী।
স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ যার সাথী, যার সখা,
তবুও হায়, কন্টক পূর্ণ আমারই ভাগ্যরেখা!
এত রাজকীয়তা, এত সুরক্ষা সত্ত্বেও আমি অসহায়া এক নারী!
বিশ্ব যখন পাপমগ্ন, আমি একা কী করিতে পারি?
আজ ও বহু আলোচিত আমার বস্ত্রহরণের অধ্যায়,
ভাগ্য যেদিন হয়েছিল কৌরব-সহায়।
টেনে এনেছিল আমার কেশগুচ্ছ ধরি দুষ্ট-দুঃশাসন!
আছড়ে ফেলেছিল কুরুসভায়, শোনেনি শত মিনতি, বারন।
তখন দুর্যোধনের রক্তচক্ষু কেবলই প্রতিশোধ চায়!
নির্বস্ত্র করি, চেয়েছিল মোরে বসাতে জঙ্ঘায়।
ভীষ্ম-কর্ণ-দ্রোণাচার্য কত মহারথীগণ!
এ পাপ দেখিয়াও কাপুরুষের মত ধারন করেছিল মৌন্।
জুয়ায় লাগিয়া, নতজানু পান্ডব, বসেছিল অশ্রুজল ভরি।
পত্নী হিসেবে মনে হয়েছিল অগ্নি-স্নান করি!
টানিতে লাগিল দুঃশাসন শাড়ির আঁচল ধরি,
অসহায় হয়ে ডাকিতে লাগিলাম কৃষ্ণ, কৃষ্ণ করি!
সেদিন বস্ত্র দিয়ে বংশীধারী ঢেকেছিল মোর মান,
বেঁচে গিয়েছিল শরীর, কিন্তু আহত হয়েছিল প্রান!
তারপর হলো কত যুদ্ধ কুরুক্ষেত্র মাঠে,
অপমানের প্রতিশোধ ও নেওয়া হলো বটে।
প্রান হারালো কৌরব তথা পাপী কুরুসভা-জন,
তবুও আজ ও আঁতকে ওঠে আমার প্রান-মন।
আজ ও কত দ্রৌপদী গুমরে গুমরে কাঁদে,
শাড়ির আঁচল ফেঁসেছে তাদের কত দানবের ফাঁদে!
আজ ও কত দুর্যোধন তাদের স্পর্শ করিতে চায়,
সমাজ তখন পরিনত হয় মৌন কুরুসভায়।
আজকের দ্রৌপদী কৃষ্ণ হয়ে নিজেই লড়িতে চায়,
কিন্তু, কর্ণের মতো সমাজ তাদের বেশ্যা বলিয়া যায়!
কিসের ভয়, কিসের সঙ্কা, কিসের এত লাজ?
অন্যায় দেখিয়াও কেন চুপ থাকিতে চায় সমাজ?
বিধাতার হাতের চক্র-সুদর্শন নামিবে ধরাতে যবে,
মনে থাকে যেন, পাপী-কুরুসভাসম, এ সমাজ ও শাস্তি পাবে!!