শকুন্তলা বলেনি আসতে
শকুন্তলা বলেনি আসতে
শকুন্তলা বলেনি আসতে,
কিন্তু এসেছিলাম|
শকুন্তলা বলেনি চলে যেতে,
তবুও চলে গিসলাম|
বারেবারে প্রশ্ন করি নিজেকে,
কেন শকুন্তলার কাছে গিসলাম?
আবার কেন ফিরে এলাম?
মনের গভীরে প্রশ্নগুলো জমানো ছিল
সংশয় সিন্ধুকে অনেকগুলো উৎকণ্ঠার কিল ঠুকে
যাকে টেনে বের করে আনতে পারিনি
শকুন্তলার সম্মুক্ষে|
সেদিন পূর্ণিমার রাতে
শকুন্তলা দাঁড়িয়েছিল লম্বা পাইন গাছটার নিচে,
আলুথালু বেশে, এলোমেলো চুলে|
উদাসী নয়নে তাকিয়েছিল নীলগিরি পাহাড়টার দিকে|
কি বলবো কি বলবো ভাবতে ভাবতে
হঠাৎ বলেই ফেললাম, মনেতে লুকনো না বলা কথাগুলো
একটু ইতস্তত করে, "আচ্ছা শকুন্তলা তুমি কি চাও?"
সেদিন ও চোখে ভালো করে কাজল লাগিয়েছিল|
মৃদু হাওয়ায় ওর মাথার চুলগুলো কপাল ও মুখের
কিছুটা অংশ বারে বারে ঢেকে দিচ্ছিল,
শকুন্তলা বাঁ হাতের আঙ্গুল দিয়ে
আস্তে আস্তে সরিয়ে দিচ্ছিল;
তখন পূর্ণিমার চাঁদ সমস্ত আলোর বিভা
শকুন্তলার মুখে ঢেলে দিতে ব্যস্ত|
ওর মুখের পানে তাকিয়ে
ভয় মিশ্রিত উদ্বেগ নিয়ে|
গাছের নিচে লাবণ্যে ভরা ওর মুখও
ঠিক আলো-ছায়া ঘেরা চাঁদের মতো;
উত্তরের প্রতীক্ষায় ওর সম্মুক্ষে আমি অভ্যাগত|
পূর্ণিমা রাতে মৃদু-মন্দ বাতাসে ওর মাথার চুলগুলো
উড়ে এসে ওর সমস্ত মুখমন্ডলকে আবৃত করে দেয়|
আমার উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে,
আমার চির আকাঙ্খিত প্রশ্নের জবাব শোনবার জন্য
আমি উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে থাকি
শকুন্তলার আলো-ছায়া মুখের পানে|
অকস্মাৎ কোথা থেকে ভেসে এল কালো একখানা মেঘ,
পূর্ণিমার চাঁদের সাথে শকুন্তলার মুখটাকেও দিল ঢেকে|
কোথায় হারিয়ে গেল পূর্ণিমার চাঁদ আর শকুন্তলা!
হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকি শকুন্তলাকে|
ঝোড়ো হাওয়ায় পাইন গাছটা মাঝে-মধ্যে হেলে-দুলে
মাটিকে কুর্নিশ করতে চায়;
শকুন্তলা বা শকুন্তলার ছায়াকে কোথাও খুঁজে পাইনা|
শুধু বাতাস কানের কাছে এসে বলে গেল,
"মনের চাওয়াকে কখনো কখনো
মুখের কথায় ব্যক্ত করা যায় না|"
কালো মেঘটা একটু সরে গেলে
চাঁদের আলোয় শকুন্তলার কায়া পাইন গাছটার নিচে
আবার জ্বলজ্বল করে উঠল|
আমার মনের বাতিটা জ্বলে উঠল আশার আলো নিয়ে|
এই আশার আলো নিয়ে বাঁচাই তো জীবন|