সাধু দর্শন
সাধু দর্শন
গঙ্গার নদীতটে, বোধিবৃক্ষ তলে,সাধুর আশ্রম
মোর বয়স আঠারো যবে,একাকী করিনু গমন ।
সাধুবাবা স্নেহে কহে , আয় বাবা দীনের কুটিরে
করিয়া চরন স্পর্শ , নীরবে প্রবেশিলাম নীড়ে ।
প্রসন্ন বদনে সাধু, রাখিল অভয় কর শিরে।
সবে এই কিশোর বেলায়, ধর্মের মতি কী হেতু !
বিচলিত করেছে চিত্ত! ভারাক্রান্ত মন তব কিছু ?
বিনয়ে কহি নতমুখে, শুনেছি যে সবার মুখে,
সাধু সন্ত নয় শুধু ,তুমি বড় জ্ঞানী বিচক্ষন ,
বিজ্ঞানে যা হয় না ব্যখ্যা,হামেশা করো নিরসন।
অবিরত তনুদেহে লাখো নিউট্রিনো হানে প্রতিক্ষণ
অনভূত হয় না কেন ! ভাবায় মোর বিচলিত মন।
ওরে বৎস, মায়া সম তোর এ স্থুল দেহ
অজ্ঞান আর ভ্রমে দৃষ্ট, দোষী তব পঞ্চ ইন্দ্রিয়
সুচাগ্রে আসেনা দেহ নিউট্রনে করিলে রূপান্তর।
এই তোদের দেহের গরব, রূপ লালসা নিয়ে মর ।
বিজ্ঞানমগ্ন কিশোর মনে, শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে
ফিরিলাম সেদিন গৃহে ,তৃপ্ত আর প্রসন্ন বদনে।
ঘন ঘন যত যাই,মোহগ্রস্থ হল মোর,ক্রমশ অন্তরে।
শুনেছিনু অমবশ্যার রাতে, পূজিলে ভক্তি ভরে ,
কালী মা প্রসন্ন হয়ে,অন্তরে দৈবজ্ঞান ভক্তরে সঁপে,
ভাবিনু বাবার পঞ্চমুন্ডে, নিশ্চিত পূণ্য তপ ভূমে
অমবশ্যা গভীর রাতে, দীপ্তযুবার পবিত্র আশ্রম,
সাধনা সিদ্ধ যোগে, নিশ্চিত হবে মোর মনোস্কাম।
শীতের নিশুতি রাত, ঘন কালো আঁধার পথ
জোনাকী আলোকে আবছা, বালুকাময় নদীখাত
শৃগালের ক্ষনেক উচ্চধ্বনি,নিশিপক্ষীর বিকট ডাক
দিশেহারা এক পথিকসম,অবশেষে নদীর সে বাঁক!
টিমটিম আলো,নিভৃত ছোটকক্ষ,কিছু রহস্যমোড়া
জানালা নীরবে ঠেলি,উৎসুকে শুনি, হৃদয়ের কথা।
সাধু বক্ষে সোয়াগিনী, যেন কোন অপ্সরা পরী !
গৃহে মৃদু আলোয় দেখি, কে হেন এ রূপবতী নারী!
চিনিতে পারি না,চিনিতে চাহিও না,উদভ্রান্ত কামনা
দীপ্তযুবা সাধুবাবা আজ, কার করিতেছে সাধনা!
অবাধ্য অধম হাঁচি,সহসা নীরবতা ভাঙ্গি খান খান
কে তুই পাপীষ্ঠ অধম,ছিন্ন করব তোর মুন্ড এখন,
খড়গহস্তে অগ্নিসম, সাধু রোষে, ধাবিত মোরপানে।
ওরে বেটা সাধুভন্ড ,করব তোর এই কেচ্ছাকান্ড, বলিলাম চিৎকারে।
উদ্ধশ্বাসে গৃহে ফিরি, ক্লান্তদেহে ঘুমে ঢলি । নিদ্রা জাগি জননীর ডাকে ।
অনেক তো হল বেলা, তোলপাড় গোটাপাড়া,
বিধবা বৌ হয়েছে নিখোঁজ!
নীরব আর নিরাশা ঘন , একরাশ স্বপ্ন হারানো, শিখা পালিয়েছে বোঝ !
অষ্টমঙ্গালার রাতে, সিঁদুর খোয়ানো মেয়ে,
সংসারের আপদ।
জন্মে বাপ মা হারা,কদিনেই স্বামী গেল মারা, মামী বলে অশুভ বিপদ।
পুত্র হারা পিতা মাতা, পোষিত বিধবা বধুমাতা, রাখে যেন দেবদাসী
শিবভক্ত দুখী শিখা, মনে বড় তার বিরহ জ্বালা,
দীপ্তযুবা সাধু আশ্রমে তার মতি।
আজীবন স্মৃতিকথা , কাঁদিয়া তার মনব্যাথা
দীর্ঘশ্বাসে শোনাত ভবিতব্য গতি।
রূপে যেন অগ্নি শিখা, দগ্ধ হতাম হৃদয়ে সদা ।
সমবয়স বা একটু বেশি,পরিত্যক্ত সমাজে বোঝা!
দরদী অন্তরে ভাবি , যা করেছে আজ দীপ্ত সাধু
শ্রদ্ধায় চিত্ত গেলভরে।
নিরপরাধ দুখী জনে,উদ্ধারিল নিজগুনে,দুখীবধু ।
বিধাতার ছিল এই মনে।

