রিক্সাওয়ালা বেচারাম কাকা
রিক্সাওয়ালা বেচারাম কাকা
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
মামাবাড়ির যাওয়ার পথে বেচারাম কাকার রিক্সায় চড়ে বসেছি সবে,
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এলো, শ্রাবণধারা সব ভিজিয়ে পুড়িয়েই ক্ষান্ত হবে।
মায়ের সে আফশোসের হ্যাঁতে হ্যাঁ মেলালো আমার
বেচারাম কাকা বেচারা,
এপাড়া পেরিয়েই ওপাড়ায় আমার মামাবাড়ি, ভিজে ভিজেই তাই প্যাডেল মারা।
মধ্যবয়সী বেচারাম কাকা, একার আয়েই টানে তার সংসার, ঘরে আটটা পেট ঝাড়া,
ছাড়তে পারে না তাই কোনো ভাড়া,
হোক তুমুল বৃষ্টি বা কাঠফাটা রোদ মাথায় খাড়া।
ইস্কুলে যাওয়ার পথে বলেছিলাম একদিন বেচারাম
কাকাকে, এতো রোদ, ছুটি নিতে পারো তো,
বেচারাম কাকা হোহো হেসে বললো, আগে বড়ো হও খোকাবাবু, ঠিক বুঝবে, এখন ছাড়ো তো।
বেচারাম কাকা বলেছিলো, খোকাবাবু তোমাকে আমি ইস্কুলের পরে কলেজে নিয়ে যাবো,
খোকাবাবু তুমি অনেক বড় বড় পাশ দেবে, অনেক বড় চাকরি পাবে, তখন আমি ছুটি নেবো।
তার আগে তো ছুটি নেই খোকাবাবু, বলে আমাকে কোলে করে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে এগোতো,
ইস্কুলের ভেতরে ঢুকে চাতাল পেরিয়ে তবে কোল
থেকে নামিয়ে, হাত নেড়ে ফিরে চলে যেতো।
মাঝে মাঝে মামাবাড়ি যাই, মা আর আমি, বেচারাম
কাকাই নিয়ে যায় এখনো,
ম
ুখে লেগে থাকা হাসি ছাড়া কেউ দেখে নি, আমাদের বেচারাম কাকাকে কখনো।
সত্যি সত্যিই একদিন ইস্কুলের শেষে কলেজে পা,
তবে কলেজ অন্য অনেক বড় শহরে,
কী জানি কেন, নতুন জায়গায় এসেও বেচারাম কাকাকে মনে পড়ে কলেজভাঙা প্রহরে।
তারপর কালেকালে অনেক স্মৃতির ভিড়ে ধীরে ধীরে, তলিয়ে গেলো বেচারাম কাকা,
অনেক বড় চাকরি পেয়েছি, ফিরেছি নিজের শহরে,
দেখা করতে গিয়ে দেখি তার ঘর ফাঁকা।
ভরসন্ধ্যেবেলায় রিক্সা নিয়ে গলি থেকে বেরোবার মুখে, কোনো এক মেয়ের ইজ্জত বাঁচিয়ে,
ক'দিন বাদেই বেচারাম কাকার দেহটা পড়েছিলো
নিজের রিক্সার পাদানে প্রাণ হারিয়ে।
এ কেমন ছুটি নিলো আমার শৈশব কৈশোরের সে অসমবয়সী অসাম্যের রোজকার সাথী,
তবে বেচারাম কাকার বলিদান হয়নি বৃথা, সেই মেয়েটিই রেখেছে চালু কাকার সংসারে গতি।
নানান প্রকল্প থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধে পাইয়ে দিলাম কাকার সংসারে, মেয়েদের আর কাকির জন্য,
তবুও কি হোলো ঋণশোধ, বেচারাম কাকার ঘামঝরা, রক্তজলকরা পয়সায় ইমলি আচার খেয়ে হওয়া ধন্য?
বেচারাম কাকারা হয় না আসলে কখনো বোধহয় বিক্রি,
বেচারাম কাকাদের জীবনে হয়তো তাই একতরফা ডিক্রি।