রামায়নের উপেক্ষিতা
রামায়নের উপেক্ষিতা
বনবাস শেষে রাম
ফিরিল আপন ঘরে,
সান্ত্রী মন্ত্রী প্রজা সকল
আজ ঘিরিল তাহারে ধরে৷
তারি সাথে ফিরি মৈথিলি
শ্রূতকীর্তিরে ক্ষনে সুধায়,
অনুজা উর্মিলা রয়েছে কোথায়
নয়ন হেরিবারে চায়!
শ্রূতকীর্তি বলে আমিও
হেরি নাই এ যাবৎ নয়ানে,
কেমনে বর্ণিব তোমারে
তাহার মুরতি বয়ানে!
তোমরা যদ্যপি গিয়াছ কাননে
সেদিন সে দিয়াছে দ্বার,
চারুমতি শুধু অন্নদানে
সেও মুরতি হেরে নি তার৷
শুনি সে কথা জানকি
বলিল বয়ানে অশ্রদ্ধা অভিমান কথা,
উর্মিল করিল আজ এ'কি!
ভাঙিয়া কুলের প্রথা৷
ত্বরায় ছুটিল রামের ঘরণী
ডাকিল উর্মিলারে,
বন্ধ দরজা খুলিল সহসা
দাঁড়ালো সম্মুখে উদ্ভাসিত বাহারে৷
সুধালো জানকি তাহারে কুশল
কেন এমন করিল সে,
লক্ষনতার প্রানের সখা
ফিরিয়াও এসেছে সে যে৷
শুনি প্রশ্নবান উর্মিলা
বয়ানে আপন অগ্রজায়,
বর্ণিল তার মনের বেদন
অন্তরখানি যাহা চায়৷
একবগ্গা জীবন মোর
কপাট অন্তরালে,
চৌদ্দ বরষ সৃজিত হইয়া
খুশির সুরভি ঢালে৷
তোমরা কভু দেখেছো মোরে
ধূপের মতো পুড়তে,
আমি পুড়েছি শুধুই অন্তরে অনলে
জীবনটারে সুখে দুঃখে জুড়তে৷
সেই যবে রাম হরধনু ভেঙে
লভিল সীতা জনক পুরে,
আমিও সেথা লক্ষনগামী
বাঁধা পড়ি নহবত সুরে৷
আসি দাশরথি রাজমহলে
কাটানু মিলে মিশে দিন,
কার কোপে যেন ছন্দপতন
একদা হইনু হীন!
রাম চলে বনবাসে পিতৃ আজ্ঞায়
সীতা চলে অনুসরণে অনুগামী,
লক্ষন দোসর হইল সেথায়
আমি ঊর্মিলা উপেক্ষিতা জানে অন্তর্যামী!
রাজপুরবাসী ব্যস্ত ব্যকুল
তাহাদেরই তরে সবে,
করে হাহাকার হাপুস নয়নে
সুউচ্চ কলরবে৷
সেথায় মোরে খুঁজিল না কেউ
সুধাইলো না মনোবাস,
তাই ভাবি আমি অন্তরে
এ কেমন পরিহাস৷
ফিরি কক্ষে একাকিনি
দ্বার করিনু বন্ধ,
আত্মশোকে আত্ম বিলাপে
জিনিয়াছি ভালমন্দ৷
আপন অন্তরে সুখ পেয়েছি
হইয়া একাকি অন্তর্মুখি,
সমস্ত বিলাপ কখন ভুলিলাম
হলাম কখন যে সুখি!
রাখিনে সে খবর
আমার ব্যথিত হৃদয়ে,
এ জীবন টুকু বেঁচে আছে
চারুমতি ছিলো সদয়ে৷
তাই আজ এ ঊর্মিলা
প্রানসখা লক্ষন বুঝিবে কি?
কার দাবি কে করিবে
আমি যে আজ আত্মসুখি৷
