ফাগুনহারা
ফাগুনহারা
ছেলেটার ছিল এক বুক ফাগুন...
ফাগুনের রংগুলো দিয়ে সে রঙীন সুতো
কাটত চরকায়,চাঁদের বুড়ির মত...
আর সেই সুতোগুলো কখন যে বাহারি নকশিকাঁথা হয়ে জড়িয়ে ধরত তার আশেপাশের
মানুষগুলোকে,সে নিজেই বুঝতে পারত না...
সবাই বলত, ছেলেটা না কি বড্ড হাবা,
নইলে কি অমনটা কেউ করে?
এই তো সেদিন, যে দুষ্টু বাচ্চা মেয়েটা, দৌড়াচ্ছিল
স্কুলের সামনে দিয়ে,একটু হলেই পড়ত চাপা গাড়িতে,বোকা না হলে কেউ বাঁচায় অমন করে,
নিজের জীবন বাজি রেখে?
আরেক দিনও তো কি বোকামিটাই না করল!
পাড়ার দিদি শম্পাকে বেপাড়ার ছেলেগুলোর কাছে অপমানিত,লাঞ্ছিত হতে দেখে,করে ফেলল
প্রতিবাদ।
তারপর? আর কি! মার খেয়ে শরীরের ব্যাথা নিয়ে নড়তে পারেনি দুদিন...
তবে সবাইকে ফাগুন বিলিয়ে বেড়ালেও,
বাপ-মা মরা ছেলেটা ফাগুনের স্বাদ পেত,
শুধু তার পাড়াতুতো এক ঠাকুমার কাছে...
তাই তো একটু আধটু ভাল রান্নার স্বাদ জুটত,
ঐ ঠাম্মার সৌজন্যে...
কিন্তু হায়, ফাগুন যে চিরকাল থাকার নয়...
ফাগুনের শেষেই যে আসে চৈত্র।
সে না কি আবার পুরোনো কিছুই সইতে পারে না
পুরোনো যা সব বাতিল করে,নতুনের জয় গায়...
এবারেতে তার শক্তি বড়ই, পেয়ে 'করোনা'কে
সহচর।সবাই যখন এড়িয়ে চলছে তার ঠাম্মাকে, ছোঁয়াচে 'করোনা' র ভয়ে,
তখন আবার হঠকারীর মত ছেলেটা,
রাতবিরেতে গেল আ্যম্বুলেন্স ডাকতে!
দিনরাত এক করে পড়ে ছিল হাসপাতালে।
বোকা না হলে কেউ করে এমনটা!
নির্দয় চৈত্র নিয়ে গেল তার পুরোনো ঠাকুমাকেও...
কিন্তু এমন চৈত্র কি চেয়েছিল,ফাগুনহারা ছেলেটা?....