STORYMIRROR

Manik Goswami

Fantasy Inspirational

3  

Manik Goswami

Fantasy Inspirational

পাগলামি

পাগলামি

3 mins
238


রাস্তা দিয়ে ওই যে লোকটা হেঁটে যাচ্ছে

তাকে দেখে তোমরা হাসছো,- বলছো পাগল |

লোকটা হঠাৎ হঠাৎ হাসছে,

রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে

হাত-পা নেড়ে কত কি বলছে |

তোমরা সেসব কিছু শুনছো না |

শুধুমাত্র তার অঙ্গভঙ্গি দেখে হাসছো |

তাকে একটুও বোঝার চেষ্টা করছো না |


আমি কিন্তু একবার দেখেই বুঝেছি,

ও পাগল ছিল, কিন্তু এখন নেই |

তোমরা অবাক হয়ে ভাবছো, এ কেমন কথা |

এ কথার কোনো মানে হয়না |

আমি গম্ভীরভাবে জানাই-- মানে ?

অনেক কথারই তো কিছু মানে থাকেনা |

পাগল আগে ছিল, এখন নেই |

যেমন তোমাদের বোঝবার ক্ষমতা

আগে ছিল, এখন নেই |

লোকটা হাসছে, হাসবে না ?

এতদিন দুঃখ দিয়েছে, দুঃখ পেয়েছে |

এখন তার আনন্দ |

তাই হাসছে, ধুলো ওড়াচ্ছে;

তোমাদের দেখে দাঁতে ভেংচি কাটছে |

হঠাৎ লাফাচ্ছে, হঠাৎ দৌড়োচ্ছে;

হঠাৎ কাঁদছে, হঠাৎ বক্তৃতা দিচ্ছে;

আবার হঠাৎ হঠাৎ হাসছে |

তোমরা একটা আজব জন্তু ভেবে

তাকে দেখে হেসেই যাচ্ছ |

পাগল তো তোমরাই |


আমার কথাগুলো হেয়ালি মনে হচ্ছে ?

হবেই-- কারণ তোমরাই তো পাগল |

তোমাদের বোধশক্তি নেই |

রাগ করছো কেন ?

শোনো বুঝিয়ে বলছি |এটা গল্প কথা নয়,

রূপকথার সাজানো কাহিনীও নয় |

বাস্তব এবং নির্মম সত্য |

লোকটা জন্ম নিয়েছিল এই-ই দেশে |

শৈশবে সকলেই যেমন করে

সেও তেমনি ছোটাছুটি, খেলাধুলায় মেতেছিলো খুব |

ক্রমে সে বড় হলো, বুঝতে শিখলো |

ছোটাছুটি গেলো থেমে |

শান্ত হলো সে |

বুঝতে পারলো, দুঃখ কাকে বলে |

দৈন্যদশা কিভাবে আসে এগিয়ে |


মাথার ওপর এতকাল যারা ছায়া ধরেছিলো

তারা চলে গেলো একে একে |

কেউ নেই, কেউ নেই তার আপন |

সহায় সম্বলহীন এক নব্য যুবক |

বাঁচার তাগিদে, জ্ঞানের ভাণ্ডারে যেটুকু ঐশ্বর্য ছিল

সামনে রেখে দাবি করলো চাকুরীর |

হঠকারিতা, আস্পর্ধা |

ক্ষমা করা যায় না এ দোষীকে |

দ্বারে দ্বারে হাত পেতে

তোষামোদ করলো কত জনকে |

কত অনুনয় করলো |

কিন্তু এ দেশ--দেশের মানুষ

এখন যে শুধু নিজের জন্য,

কেউ কারো জন্য নয় |


অনেকে অবশ্য অনেক কথাই বললো |

অনেক অনেক উপদেশও দিলো |

অবশেষে শুভাকাঙ্খীদের কারো পরামর্শে

অনেক প্রত্যাশা নিয়ে

সে এলো বিরোধী দলের পতাকার নীচে |

অনেক খাটুনি খাটলো |

দেওয়ালে অনেক পোস্টার সাঁটলো |

অনেক সভা সমিতি, অনেক বক্তৃতা |

কত কিছু | কত নতুনকে জানতে পারলো |


এ দেশে শাসকগোষ্ঠী শুধু অত্যাচারই করে এসেছে |

দুমুঠো অন্ন মুখে তুলে দেবার ক্ষমতা নেই

পারে শুধু মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিতে |

অত্যাচার, অনাচার আর অবিচার |


কত কথকথা শুনলো |

ভবিষ্যতের আশ্বাসবাণীতে

হৃদয় আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠলো |

কত শক্তি এলো শরীরে,

কত প্রত্যাশা জাগলো মনে |

কালো মেঘের ঘনঘটা দূরে সরে গিয়ে

নতুন সূর্য আবার হাসবে |


অবশেষে দিন বদল হলো |

রঙ্গমঞ্চে পট পরিবর্তনের সাথে

এলো নতুন শাসকগোষ্ঠী |

দিন কাটতে থাকলো |

ক্রমে বোঝা গেলো--

কালো মেঘ ঘন থেকে ঘনীভূত হচ্ছে |

পট পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু

মূল কাহিনীর সুর

বাঁধা রয়ে গেছে একই সূত্রে |

শুধু বঞ্চনা, শুধু ধাপ্পা |

শুধু চুপ করিয়ে রাখার কৌশল |

হতোদ্যম যুবক বুঝতে পারলো

তার ভবিষ্যত কোন দিকে প্রবাহমান |

সেই ভবিষ্যত--

ভবিষ্যতে যাতে আর কারো না আসে

তাই সে আজ শোনায় অভয়বাণী |

তোমাদের বোঝাতে চায়

চক্রান্তের কথা, ফাঁদের কথা;

যে ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছো তোমরা |

তোমাদের কৃতকর্মের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে

তোমাদের ভুল কোথায় সে বুঝিয়ে দিচ্ছে |

কিন্তু তোমরা তা দেখে হাসছো


তোমাদের হাসি দেখে সে ব্যথা পাচ্ছে |

ব্যথার বহিঃপ্রকাশ তার চোখে মুখে |

তোমাদের পরিহাস করার ছলে

সে মুখ ভ্যাংচাচ্ছে | কিন্তু--

তবুও তোমরা হাসছো |

কিছু না বুঝেই হাসছো |

আর জগতের কি নিয়ম দেখো,

তোমাদের পাগলামিতে তোমরা পাগল নও |

পাগল বলছো তাকে, - যে

তোমাদের জানাচ্ছে সাবধানবাণী |

তোমরা সাবধান হও |

নিজেদের চিনতে শেখ |

নিজেদের ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে

এভাবে হেসো না |

সারাদিন পাগল সেজে

সখের পাগলামিতে মেতো না |


Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Fantasy