পাগলামি
পাগলামি
রাস্তা দিয়ে ওই যে লোকটা হেঁটে যাচ্ছে
তাকে দেখে তোমরা হাসছো,- বলছো পাগল |
লোকটা হঠাৎ হঠাৎ হাসছে,
রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে
হাত-পা নেড়ে কত কি বলছে |
তোমরা সেসব কিছু শুনছো না |
শুধুমাত্র তার অঙ্গভঙ্গি দেখে হাসছো |
তাকে একটুও বোঝার চেষ্টা করছো না |
আমি কিন্তু একবার দেখেই বুঝেছি,
ও পাগল ছিল, কিন্তু এখন নেই |
তোমরা অবাক হয়ে ভাবছো, এ কেমন কথা |
এ কথার কোনো মানে হয়না |
আমি গম্ভীরভাবে জানাই-- মানে ?
অনেক কথারই তো কিছু মানে থাকেনা |
পাগল আগে ছিল, এখন নেই |
যেমন তোমাদের বোঝবার ক্ষমতা
আগে ছিল, এখন নেই |
লোকটা হাসছে, হাসবে না ?
এতদিন দুঃখ দিয়েছে, দুঃখ পেয়েছে |
এখন তার আনন্দ |
তাই হাসছে, ধুলো ওড়াচ্ছে;
তোমাদের দেখে দাঁতে ভেংচি কাটছে |
হঠাৎ লাফাচ্ছে, হঠাৎ দৌড়োচ্ছে;
হঠাৎ কাঁদছে, হঠাৎ বক্তৃতা দিচ্ছে;
আবার হঠাৎ হঠাৎ হাসছে |
তোমরা একটা আজব জন্তু ভেবে
তাকে দেখে হেসেই যাচ্ছ |
পাগল তো তোমরাই |
আমার কথাগুলো হেয়ালি মনে হচ্ছে ?
হবেই-- কারণ তোমরাই তো পাগল |
তোমাদের বোধশক্তি নেই |
রাগ করছো কেন ?
শোনো বুঝিয়ে বলছি |এটা গল্প কথা নয়,
রূপকথার সাজানো কাহিনীও নয় |
বাস্তব এবং নির্মম সত্য |
লোকটা জন্ম নিয়েছিল এই-ই দেশে |
শৈশবে সকলেই যেমন করে
সেও তেমনি ছোটাছুটি, খেলাধুলায় মেতেছিলো খুব |
ক্রমে সে বড় হলো, বুঝতে শিখলো |
ছোটাছুটি গেলো থেমে |
শান্ত হলো সে |
বুঝতে পারলো, দুঃখ কাকে বলে |
দৈন্যদশা কিভাবে আসে এগিয়ে |
মাথার ওপর এতকাল যারা ছায়া ধরেছিলো
তারা চলে গেলো একে একে |
কেউ নেই, কেউ নেই তার আপন |
সহায় সম্বলহীন এক নব্য যুবক |
বাঁচার তাগিদে, জ্ঞানের ভাণ্ডারে যেটুকু ঐশ্বর্য ছিল
সামনে রেখে দাবি করলো চাকুরীর |
হঠকারিতা, আস্পর্ধা |
ক্ষমা করা যায় না এ দোষীকে |
দ্বারে দ্বারে হাত পেতে
তোষামোদ করলো কত জনকে |
কত অনুনয় করলো |
কিন্তু এ দেশ--দেশের মানুষ
এখন যে শুধু নিজের জন্য,
কেউ কারো জন্য নয় |
অনেকে অবশ্য অনেক কথাই বললো |
অনেক অনেক উপদেশও দিলো |
অবশেষে শুভাকাঙ্খীদের কারো পরামর্শে
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে
সে এলো বিরোধী দলের পতাকার নীচে |
অনেক খাটুনি খাটলো |
দেওয়ালে অনেক পোস্টার সাঁটলো |
অনেক সভা সমিতি, অনেক বক্তৃতা |
কত কিছু | কত নতুনকে জানতে পারলো |
এ দেশে শাসকগোষ্ঠী শুধু অত্যাচারই করে এসেছে |
দুমুঠো অন্ন মুখে তুলে দেবার ক্ষমতা নেই
পারে শুধু মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিতে |
অত্যাচার, অনাচার আর অবিচার |
কত কথকথা শুনলো |
ভবিষ্যতের আশ্বাসবাণীতে
হৃদয় আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠলো |
কত শক্তি এলো শরীরে,
কত প্রত্যাশা জাগলো মনে |
কালো মেঘের ঘনঘটা দূরে সরে গিয়ে
নতুন সূর্য আবার হাসবে |
অবশেষে দিন বদল হলো |
রঙ্গমঞ্চে পট পরিবর্তনের সাথে
এলো নতুন শাসকগোষ্ঠী |
দিন কাটতে থাকলো |
ক্রমে বোঝা গেলো--
কালো মেঘ ঘন থেকে ঘনীভূত হচ্ছে |
পট পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু
মূল কাহিনীর সুর
বাঁধা রয়ে গেছে একই সূত্রে |
শুধু বঞ্চনা, শুধু ধাপ্পা |
শুধু চুপ করিয়ে রাখার কৌশল |
হতোদ্যম যুবক বুঝতে পারলো
তার ভবিষ্যত কোন দিকে প্রবাহমান |
সেই ভবিষ্যত--
ভবিষ্যতে যাতে আর কারো না আসে
তাই সে আজ শোনায় অভয়বাণী |
তোমাদের বোঝাতে চায়
চক্রান্তের কথা, ফাঁদের কথা;
যে ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছো তোমরা |
তোমাদের কৃতকর্মের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে
তোমাদের ভুল কোথায় সে বুঝিয়ে দিচ্ছে |
কিন্তু তোমরা তা দেখে হাসছো
তোমাদের হাসি দেখে সে ব্যথা পাচ্ছে |
ব্যথার বহিঃপ্রকাশ তার চোখে মুখে |
তোমাদের পরিহাস করার ছলে
সে মুখ ভ্যাংচাচ্ছে | কিন্তু--
তবুও তোমরা হাসছো |
কিছু না বুঝেই হাসছো |
আর জগতের কি নিয়ম দেখো,
তোমাদের পাগলামিতে তোমরা পাগল নও |
পাগল বলছো তাকে, - যে
তোমাদের জানাচ্ছে সাবধানবাণী |
তোমরা সাবধান হও |
নিজেদের চিনতে শেখ |
নিজেদের ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে
এভাবে হেসো না |
সারাদিন পাগল সেজে
সখের পাগলামিতে মেতো না |
