ও ঠাকুমা
ও ঠাকুমা
পূজনীয়া পিতামহী,
মরণের পারে আছো কেমন?
দেখতে কি পাও আমায় তেমন
ওপার থেকে সময় করে তোমার ইচ্ছে যেমন?
শ্রদ্ধেয়া বিদেহী,
আজকে যে মা তোমার নাতিন,
ছোট্ট বালক স্নেহের অধীন,
এপার থেকে স্মরণ করি তোমায় রাত্রিদিন।
তোমার পুতি থাকে
তার ঠাম্মুর কোলের ভাঁজে
ভীষণ আদর হামির মাঝে,
দৃশ্য দেখে তোমার পরশ আমার প্রাণে বাজে।
গ্রামের ভিটার বাড়ি
আজ যে পোড়ো, ছোট্টোবেলার
দুষ্টামি সব, সোহাগ তোমার,
পুকুরপাড়ে আমের গাছে মিলেমিশে একাকার।
আমাদের সংসারে,
ছিলে তখন সবার সাথে
খুনসুটি আর মজায় মেতে,
আজ সে স্মৃতি মনকুঠুরীর নিঃঝুম সংগীতে।
কলোপাড় সাদা শাড়ি,
ঘুমের মাঝে দৃষ্টে আসে,
জড়িয়ে রেখে দৃঢ় পাশে
আকার বানায় তোমার দৃপ্ত অবয়ব বাতাসে।
আঁকতে বসি আমি,
মনে পড়ে তুমি তখন
যে কেউ এসে বসলে যখন
আমার আঁকার খাতাখানির প্রদর্শনে মগন।
দাঁতভাঙা কথা খেলা,
"বাবলা গাছে বাঘ বসেছে"
বলতে গিয়ে ভুল হয়েছে
হাসতে তুমি খালি, "বাঘ" হয় "বাপ" পাছে।
দশ বছরের আমি,
বসন্তরোগে বন্দী একা,
শোয়ার ঘরে তোমার দেখা
রোজের উঁকি দরজা দিয়ে উৎসুক বলিরেখা।
সময় গড়িয়ে পার,
তুমি ছিলে স্বাধীনচেতা
একলা চলার সকল ব্যথা
গ্রহণ করে জীবন তোমার এগিয়ে যাওয়ার গাথা।
মহাকালের গতি,
শেষ বয়সে তোমার গড়ন
রুগ্ন হল, তার সাথে মন,
চিনতে পারো আর না কোনোই সাথের আপনজন!
শেষের কদিন ধরে,
দুর্বলতায় চেতন কমই,
ডাকছিলে শুধু আমার নামই,
হায়রে কপাল! আমি এলাম, আর নিঃসাড় তুমি।
চোখ বোজা মুরতি,
চারটি কাঁধের উপর তোলা
ধীর গতিতে শেষ সে চলা,
অনল মাঝে চিরন্তনে মিলিয়ে যাওয়ার বেলা।
নীরব কান্না জুঝে,
চার পুত্র দুই কন্যা মিলে,
দূর ব্যবধান সকল ভুলে
একত্রিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন তোমার চরণতলে।