নতুন বসতি
নতুন বসতি
সেবার বর্ষার পর থেকে জমি মাপামাপি, মাটি নিয়ে কথা।
স্কুলে যাবার সময় ঐ লোকগুলোর অবিরাম আনাগোনা;
পাশের বাড়ির বুড়োদার সাতকুলে কেউ নেই।প্রথম সেই দিল জমি।
বাকবিতন্ডা বোঝাপড়া কিছুই আটকাতে পারলো না।
দুটি পাতা একটি কুঁড়ি চা বাগানের সেই থেকে শুরু।
জমি দিলে পয়সা, সাথে চা বাগানের বারোমাস কাজ।
দাদার পাস ছিল, চা এর ট্রেনিং এ নিয়ে নিল ওকে।
জ্যাঠা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। সেই দেশভাগের
সময় ভালো ধানের মাটি দেখে এখানে এসেছিল।
মাঠের আল ধরে লোকগুলোর দামী ফোনে কথা থামেনি।
বছর ঘুরতে চা বাগানে গাছেরা মাথা চাড়া দিয়ে,
সাইনবোর্ড এখন গাঁয়ে ঢোকার মুখে,
কোন ধানের ফলন কেমন হবে সে চিন্তা নেই,
দোলায় পাটের পচা গন্ধ নেই। হিমঘরে আলু রাখার
বুকিং কর
ে রাখার তাড়া নেই। যেদিকে তাকাও সবুজে সবুজ।
কত রকমের মেশিনে চা গাছের পরিচর্যা। পাতা তুলতে ব্যস্ত
গ্রামের অনেক বৌয়েরা। চা মালিকদের বড় বাংলো, গ্রামের
বড় পুজো এখন ওখানেই হয়। ধুনুচি নাচে শহর থেকে আলোর ভিড়।
এই বসতিতে ধান চাষের অভিজ্ঞতায় কুলুপ বসল।
চা র পাতায় গল্প বাঁধল অনেক রঙের।
যাত্রা পালা আর বেশি হয় না, ব্যান্ডের গান এখন বেশ রমরমা।
জ্যাঠার মত অনেকে নিতে পারেনি এই ভাতের মাটি ছেড়ে ভালো থাকতে।
শেষ দিনেও বরিশালের ধানের স্বপ্ন দেখেছে।
আমি কিন্তু চা বাগান নিয়ে পড়াশুনো করে আবার গ্রামে ফিরেছি।
আমার বাগান যেন সবচেয়ে ভালো চা তৈরি করে, যাতে আর কোন
নতুন বসতি মুছে দিতে না পারে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি।
পাতায় পাতায় লেগে থাকুক আমাদের ভালো মন্দের স্মৃতি।