নষ্ট চন্দ্র
নষ্ট চন্দ্র
ভেবেছিলাম খুব করে কষে এক ঘুম লাগাবো,
স্বপ্ন দেখবো কি না জানিনা, তা আমার হাতে নেই।
মন্দিরের ঢাকের শব্দে বার বার ঘুম ভেঙে যায়,
রাতে কুকুরের কোনও শব্দ নেই, আশ্চর্য এটাই।
ওরাও আজ মোহিত হয়ে / ভয়ে ঢাকের শব্দ শুনছে,
তার মানে আজ অমাবস্যা, রাতে কালি পূজো হচ্ছে।
আমার মতো কি কেউ শুক্লা পঞ্চমীর দিন গুনছে?
ঐ দিনের আগের রাতে নাকি একদম ঘুমাতে নেই,
কেন যে রাতটাকে "নষ্ট চন্দ্র" বলা হয়, তা জানা নেই।
বেশ মনে আছে আগেকার দিনে এই রাতে হতো চুরি,
সামান্য ফুল ও মলমূল কেটে নিয়ে যেতো দিয়ে ছুরি।
পরদিন তা দেখে গালাগালি করতো যতো বুড়ো বুড়ি,
তাতে নাকি পূণ্য তাদেরই বাড়ে, যারা করেছিল চুরি।
সকালের ঐ বকাবকিতে সরস্বতী পূজোর আনন্দ,
দ্বিগুণ হয়ে যেতো ওদের, লাগতোনা একটুও মন্দ।
সত্যিই তাই, দেখেছি নিজের চোখে ওদের খুশী হতে,
বুঝিনি এ কেমন নিয়ম, কেন করে কেউ এসব কাজ,
কেই বা শেখায়, পাঁজি, নক্ষত্র অথবা কোন গ্রহ ?
মনে অবশ্য এ ব্যাপারে একটুও নেই আমার সন্দেহ।
বাড়ির দেশী কুলগাছটা সারা বছর স্বপ্ন দেখে যায়,
কবে ছেলেপুলেরা যেভাবেই হোক কুল পেড়ে খায়।
কেউ বলেনি, সরস্বতী পূজোর আগে কুল খেতে নেই?
দিন কয়েক আগেই তাই ঝেঁটিয়ে সব কুল করে সাফ,
আমিও নিজে থেকে কিছু বলিনি ওদের বাপরে বাপ!
কুলকে আপেল বানাতে চেয়ে কে প্রথম স্বপ্ন দেখেছে,
তাই বড়ুই ফলটিকে, প্রায় আপেল বানিয়ে ছেড়েছে।
খেতে আপেলের মতো না হলেও দেখতে তো বটেই,
দোকানীরাও কি জানেনা এত আগে কুল খেতে নেই!
আপেল কুল বলে বসে বসে দিব্যি বেশ বিক্রি করছে,
এখন ভোর প্রায় পাঁচটা, রাতে ডাকতে পারেনি তাই,
দূরে কোথাও শেয়ালেরা রাতের শেষ ডাকা ডাকছে।
ঢাক বাজছিলো বলে ওদেরও বোধহয় দেরি হয়েছে,
বাজারে উঠেছে বলেই বাড়িতেও কুল এসে গেছে,
যতোই হোক কুসংস্কার, কে আর ওগুলো খেয়েছে?
কুলগুলোও নিশ্চয়ই সরস্বতী পূজোর দিন গুনছে।
নিজেরা না খেলে তা ঠাকুরকেও দেওয়া যায় না,
না খেলেও জানিনা, কেন কুল আগে খাওয়া হয়না।