নারকোল মামী
নারকোল মামী
পৃথিবীর এই সরাইখানায় পেয়েছি তোমায়,
অন্যদের মা আমার নও, তবু মায়ের মতোই ভালো।
ছোটোবেলায় চকোলেটের চেয়ে ভালবাসতাম ফল,
কমলালেবু, নারকোল আর নারকোলের জল।
যেদিন তোমায় প্রথম দেখি, দিয়েছিলে হাতে তুলে,
সপ্তমীর চাঁদের সাদা হাসির মতো টূকরো নারকোল,
মুখে আমার ফুঁটে ছিলো ঐ চাঁদের মতোই আলো।
আনন্দেতে, থ্যাঙ্কস বা থ্যাঙ্ক ইউ বলতে গেছি ভুলেই,
নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম তোমায় একটি নাম দিয়েই।
কি জানি তোমার আসল নামটি যে কি !
আমার কাছে তো তুমি আমার নারকোল-মামী।
একটু বড় হতে আমি যে মায়ের কেশবতী কন্যা,
পরিশ্রান্ত মাকে রোজ খাটাতে ইচ্ছে হতো না।
কোনো কোনোদিন সন্ধ্যে হবার আগেই,
বুঝে যেতে আমি হাজির হওয়া মানেই।
খুব যত্ন করেই মায়ের মতোই মাথায় দিয়ে তেল,
না বলতেই বেঁধে দিতে আমার মাথার চুল,
কখনও কলা বিনুনি অথবা কখনও কানবিনুনি,
আর তার সাথে চুলের ফিতের একটি, দুটি ফুল।
এখন আমি মায়ের থেকেও দূরে আর তুমি তো সুদূর,
আমার মাথার চুল ও আমার,সময় এখন অনাদরের।
অলস আমি কোনো মতোন খোপা করেই খালাস,
কে বা বোঝে বেনীর কদর, কেই বা বলে সাবাস!
ক্যানথারাইডিন আর কেওকার্পিনের যুগ প্রায় শেষ।
তেলের সাথে সম্পর্কটাও দিনে দিনে হয়েছে দুর্বল,
শ্যাম্পুতে দেশ ছেয়ে গেছে কেমিক্যাল ও হার্বাল।
কনডিশনার এসে করে নিয়েছে যে জবরদখল।
তুমিও যে নীরবে, ওসব সুগন্ধি তেলের মতোই,
আমার ভালোবাসা পেয়েও, গেলে তো সব ছেড়েই।
নিরুদ্দেশের পথে শেষমেশ তুমি যে পাড়ি দিলেই,
যতো দূরেই যাওনা কেন, থাকবে তুমি আমার মনেই।