মুক্তি
মুক্তি
সিঙ্গাপুর থেকে পলাশ হঠাৎ করে বৌ কে নিয়ে দেশে ফিরে আসে। দিল্লীতে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে।
--গ্রামের বাড়ি থেকে বাবা-মা কতবার ফোনে ও চিঠি দিয়ে বাড়িতে আসার জন্য অনুরোধ করে।
--পলাশ ও শিউলি মুখে প্রতিবার বলে যাবো কিন্তু বাস্তবে বাবা-মার সংস্পর্শে যেতে চায় না।
--ছোট্ট থেকে পলাশ খুব মেধাবী ছাত্র। বরাবর ও বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করেছে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর দিল্লী আই আই টি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে। তার পর একটি বহুজাতিক সংস্থায় মোটা বেতনের চাকরি নিয়ে সিঙ্গাপুরে কাজে যোগদান করে।
-- সিঙ্গাপুরে পলাশের সাথে টাইফ্রিন নামে এক মহিলার আলাপ হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যে আলাপ প্রেমে পরিণত হয় এবং তারা লিভ-টু-গেদার করতে থাকে।
-- পলাশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সিনেমার এক একটা দৃশ্যের মত এসব ঘটে যায়। পলাশ যেন বর্ষায় পুকুরের পাড় ভেঙে বের হওয়া জল স্রোতে ভেসে যাওয়া মাছ। ভেসে যায় কিন্তু কোথা যায় জানে না।
-- কয়েক মাস পরে ফ্রিন আগের স্বামীর অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে ব্রেক আপ করে ইংল্যান্ড চলে যায়।
-- এদিকে পলাশের বাবা-মা শিউলির সাথে বিয়ে ঠিক করে পলাশ কে দেশে ফিরে আসতে বলে।
-- বছর দুই আগে পলাশ একমাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসে এবং শিউলিকে বিয়ে করে।
-- বিয়ের পরে শিউলি পলাশের সাথে সিঙ্গাপুরে পাড়ি দেয়।
-- বিয়ের মাস ছয়ের মধ্যে শিউলি কনসিভ করে। কিন্তু, মাস তিনেক পরে মিসক্যারেজ হয়ে যায়।
-- ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা যায় শিউলি এইচ আই ভি পজিটিভ।
-- পরীক্ষায় দেখা যায় পলাশও পজিটিভ।
-- ওরা অনেকদিন বিষয়টা গোপনে গোপনে চিকিৎসা করে সিঙ্গাপুরে ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে ওখানে সবাই ঘটনা জানতে পারে।কোম্পানি চাকরি থেকে পলাশ কে টারমিনেট করে।
-- পলাশ ও শিউলি ফিরে আসে দেশে। দিল্লীতে বস্তি এলাকায় কম খরচে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে।
-- খুব প্রয়োজন ছাড়া ওরা বাড়ি থেকে বের হয় না।
-- একদিন ওষুধ কিনতে পলাশ বের হয় সন্ধ্যার দিকে। --সেই সময় পুলিশ এক খুনের আসামীর খোঁজে তল্লাশি শুরু করে।
-- ওই আসামীর সাথে পলাশের চেহারার মিল থাকায় পুলিশ পলাশকে গ্রেপ্তার করে।
--তাছাড়া, রোগের চোটে পলাশের চেহারা দেখতে অপরাধীদের মতোই হয়ে গিয়েছিল।
-- স্থানীয় থানার পুলিশ অফিসার বাড়ি তল্লাশিতে আসে, আর কোন সূত্র না পেয়ে শিউলি কে থানায় দেখা করতে বলে।
-- শিউলি থানায় গিয়ে অফিসার কে বারবার অনুরোধ করে বলে পলাশ অসুস্থ, ওকে ছেড়ে দিন।
-- সুযোগ বুঝে থানার পুলিশ অফিসার শিউলি কে রাত্রি বাসের প্রস্তাব দেয়। শিউলি প্রস্তাবে রাজি হলে পলাশকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে কথা দেয়।
-- শিউলি তখন অসুস্থ পলাশকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসার জন্য মরিয়া। কেননা,কেউ না জানুক শিউলি জানে ওই
রোগীর ওখানে থাকা কতটা কষ্টকর।
-- অফিসার এটা কিন্তু আপনার সংসার জীবনে ভয়ঙ্কর ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে।
-- পুলিশ অফিসার তখন শিউলির চেহারায় বুঁদ হয়ে ডুবে আছে। যেনতেন প্রকারে শিউলি কে রাতে পেতে মরিয়া হয়ে আছে।
--আমার সংসারে কেউ এখানের ঘটনার টের পাবে না। আপনি রাজী কি না বলুন?
-- বেশ, তবে তাই হবে। আজ রাত্রিতে বাড়িতে আসুন।
-- স্যার,আজ ছেড়ে দেবেন তো ওকে?
-- না, আজ নয় দুই থেকে তিন লাগবে ছাড়া পেতে। চিন্তা নেই আপনার স্বামী ছাড়া পেলে আমি আর আসবো না।
-- দেখতে দেখতে একসপ্তাহ কেটে গেল। আজ পলাশ ছাড়া পাবে। তাই শিউলির ভীষণ আনন্দ।
-- পলাশ কে ছেড়ে দেওয়ার পর অফিসার বলেন দেখুন আপনার সব টাকা পয়সা ঠিক আছে কি না?
-- স্যার, টাকা পয়সার চেয়ে আমার ও আমার স্ত্রীর ওষুধ গুলো খুব প্রয়োজন। আর হয়তো কয়েকটা দিন বাঁচবো। সেই কটাদিন এই ওষুধ গুলোই ব্যথা কমিয়ে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেবে।
-- কি অসুখ হয়েছে আপনাদের?
-- স্যার, আমরা দুইজনেই এইচ আই ভি পজিটিভ। তাই সিঙ্গাপুর থেকে এসে বাড়ি লোকের সাথে সংস্রব না রেখে এই বস্তিতে থাকি।
-- পলাশের কাছ থেকে এই কথা শোনার পর ওই পুলিশ অফিসার পাগলের মতো হাত-পা ছুড়তে থাকে। মাথার চুল ছিঁড়তে থাকে।
-- চিৎকার করে বলতে থাকে মুক্তি চাই,আমি মুক্তি চাই।নিজের পরিবারের লোকেদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাই।
-- কয়েকদিন পরে ওই পুলিশ অফিসার নিজের সার্ভিস রিভলবার থেকে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করে।
-- নিজের ভুলে একটা তরতাজা জীবন অকালে পৃথিবীর মানব গোষ্ঠী থেকে ঝরাপাতার মতো ঝরে পড়লো।