মেঘবালিকা
মেঘবালিকা
আনমনে বসেছিলাম বাতায়নে
শিশুর কলরবে নজর গেল
পুষ্পোদ্যান পানে-
কচি কাঁচা কিছু বালিকা
গাছের তলায় ঝরে পড়া
পারিজাত কুড়োচ্ছে-
তাদের খিলখিল হাসি ঝঙ্কৃত হয়ে
মুক্তোর মতো ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে।
আকাশ বাতাস হচ্ছে মুখরিত-
কখনো বকবক-কখনো খুনসুটি,
ময়ূখমালীর আলোকছটা গায়ে মেখে
মাটিতে লুটোপুটি।
তাদের নির্মল সরল মনের দ্যূতির
অপরূপ মায়াবী আলোয়
ভেসে যাচ্ছে উদ্যান,
সূর্যের কিরণও বুঝি ম্লান
সেই আলোক রশ্মির কাছে।
উৎসুকুতা বাড়লো
কোথা থেকে এলো
এই নিষ্পাপ শিশুর দল!
কখনো ফুলে ফুলে
প্রজাপতি ধরে বেড়াচ্ছে
কখনো বা একে অপরকে
ফুল ছুঁড়ে মারছে,
কখনো বা লুকোচ্ছে ঝোপের আড়ালে।
সহসা দেখলো আমায়-
শুধায়-“এসো না,
খেলবে আমাদের সাথে”।
বললাম “তাই কি হয়!-
তোমাদের শিশুর দলে আমি বুড়ো মানুষ-
খেলি কি করে”!
বললে-“এসো কাছে-দেবো শিখিয়ে”।
গুটি গুটি পায়ে গেলাম কাছে-
মিশে গেলাম তাদের সাথে-
পারি কি তাদের সাথে
পাল্লা দিয়ে খেলায় মাততে!
হেসে গড়িয়ে পড়ে তারা-বলে-
“কিছুই পারো না-
ধরো হাত-এসো খেলি”।
ভুলে গেলাম নিজের বয়স-
মেতে গেলাম ওদের সাথে।
এ ফুলে-ও ফুলে ঘুরে আমিও
রংবাহারী প্রজাপতি ধরলাম,
খেললাম তাদের সাথে লুকোচুরি,
গাইলাম গলা ছেড়ে গান-
লাফাচ্ছি, ছুটছি, তাদের সাথে
হেসে গড়িয়ে পড়ছি-
যেন হারানো শৈশব ফিরে পেয়েছি।
দেখি সবই পারছি করতে
খুশিতে মন গেলো ভরে।
সহসা দেখি তাদের হাত ধরে
ঊড়ছি আকাশে।
একি মনের ভ্রম না দিবাস্বপ্ন!!
সহসা হাতের বাঁধন আলগা হলো-
মিলিয়ে গেল মেঘবালিকা
মেঘের কোলে-মেঘের দেশে।
পড়ছি নীচে-উফ্ পড়লাম
মুখ থুবড়ে ধরাতলে-
যন্ত্রণায় উঠলাম কুঁকড়ে-
স্বপ্নের ঘোরে পড়েছি
বিছানা থেকে নীচে।
গায়ে-হাত-পায়ে ব্যাথা-
বুঝলাম নয় কোন মেঘবালিকা,
নয় কোন আকাশে ওড়া-
পুরোটাই ছিল আমার স্বপ্ন-
সম্পূর্ণ আমার কষ্টকল্পনা।