গৃহবন্দী
গৃহবন্দী
Nov.17 Mystery Team A
গৃহবন্দী
মানিক চন্দ্র গোস্বামী
গহন বনের অন্ধকারায় গভীরতার মাঝে
ফুটছে যত কুসুম কলি সকাল হতে সাঁঝে,
চেষ্টা করে পরশ পেতে একটু আলোকের,
উদাস চোখে খোঁজ নেয় তাই সূর্য গোলকের |
সারাদিন ধরি চেষ্টা করে ছড়ায়ে আপন সুবাস,
দিনের শেষে নতমুখে খোঁজে ফিরে যাবার নিবাস |
পায় না আলো, পায় না বাতাস, অন্ধকারাগারে;
দিবারাত্রি বন্ধ থেকে হতাশ জীবনটারে--
অর্পিয়া যায় বদ্ধতারই কঠিন জটাজালে,
আপনার যত সুবাস হারায়ে ঢলে মৃত্যুর কোলে |
গহন বনের বৃক্ষরাজি বোঝেনা তাহার ব্যাথা,
চেষ্টা তারা করে না একটু ফেরাতে রাতের প্রথা |
সংস্কারটা বদ্ধ তাদের মনের আঙিনায়,
জানে শুধু বন্দিদশার মুক্তি নাহি হয় |
বন্দি যদি কারাগারে একটু আলোক পায়,
ক্ষমতা বলে স্বমহিমায় প্রকাশিত নিশ্চয়ই |
হয়তো আপন ব্যক্তিত্বের অকৃত্রিম শৌর্যে,
ছড়িয়ে দিত জগৎ মাঝারে আপনার বল-তুর্যে |
যতদিন তারে বন্দি করে কারাগারে যায় রাখা,
ততদিন তো নির্ভিকতায় চালাই শোষণ-শাখা |
যেভাবে খুশি ইচ্ছেমতো ঘরেই বন্দি করে,
যতটা ইচ্ছা আপনার মতো শোষণ করি তারে |
বুদ্ধিবলে দক্ষ হলেও তবুও বোঝে না সে,
বন্দিদেরই স্বাধীনচেতা তারই খুশি যে |
বন্দি যদি একটু আলো মনের মাঝে চায়,
অপরাধ কি সেইটাই আর শোষণ করা নয় |
বিচার যেন উল্টোপাল্টা সবই একাধারে,
বিচার কাঠির বিধান জেনে মেনেই নিয়েছে হারে |
করতে হয় বলেই যেন করছে কাজী বিচার,
ওপরে শুধু লোক দেখানো, শুধুই অনাচার |
হাতের মুঠোয় বিচার এবং বন্দীদিগের প্রাণ,
একটু এদিক-ওদিক হলেই নাই কো পরিত্রান |
বন্দি শুধু বন্দি হয়েই বন্ধ থাকুক ঘরে,
নতুন করে আর না যেন জেগে ওঠে অন্তরে |
আঁধার ঘেরা জীবন তাদের, আঁধার ঘেরাই থাক;
বিচার জোরে আর না তারা আলোর দেখা পাক |
মরে মরুক বন্দি থেকেই, তাও পাবে না ছাড়া;
হোক না তারা জগৎ মাঝে যতেক খুশি হারা |
কারাগারের বদ্ধ দোরে আপন মেনে নিলে,
বাঁচতে যদি পারে তবে, বাঁচুক আপন বলে |
আবদারে তো অনেকেই মাতে, তাই বলে তো আর
ছেড়েই দেওয়া যায় না যে ভাই, আপন সংস্কার |