কিরীটকনা
কিরীটকনা
পূণ্যসলিলা ভাগীরথীর পশ্চিম তীরের দহপাড়া,
আজ আর কারো মনে হয়তো জাগায় না সাড়া।
একটু দূরেই কিরীটকনায় মায়ের অধিষ্ঠান,
মুখসুদাবাদ যখন মুর্শিদাবাদ হলো,
বাংলা-বিহার- উড়িষ্যার কানুনগো,
দর্পনারায়ন রায়, ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে এলো।
তাঁরই উৎসাহে এই উপপীঠের আশেপাশের জঙ্গল পরিষ্কার করে
মন্দিরের সংস্কার করা হলো।
দহপাড়াও নানা অট্টালিকায় বিভূষিত হলো,
সতীর কিরীট নাকি এখানেই পতিত হয়েছিলো।
মা কিরীটেশ্বরী কিরীটকনায় জ্বলজ্বল করছিলো,
গঙ্গাজল আগের মতোই ভাগীরথী দিয়ে বয়ে যায়।
কিন্তু সেই সব সোনালী দিন আজ আর নেই।
ঠিক যেমন মুর্শিদাবাদ আর রাজধানী নেই।
যতদিন মা কিরীটেশ্বরী সমস্ত মুর্শিদাবাদের,
অধীষ্ঠাত্রীস্বরূপা ছিলেন, শ্রী বৃদ্ধি হয়েছিলো।
আকবর শাহের কানুনগো বঙ্গাধিকারী মহাশয়,
ভগবান রায়ের সুযোগ্য বংশধর দর্পনারায়ন রায়।
মুর্শিদাবাদ যদিও আছে, কিন্তু নামকরা সেই!
তিন বংশ আজ আর মুর্শিদাবাদে সেভাবে নেই।
নবাব, জগৎশেঠ আর কানুনগো বঙ্গাধিকারী!
ঝকমকে তিন নক্ষত্র, গৌরবের অধিকারী।
কিরীটেশ্বরীর মন্দিরের পাশেই রায়েদের দর্পনারায়ন,
গভীর এক দিঘী "কালীসাগর" খনন করান।
নানা জায়গার তীর্থযাত্রীরা এখানে স্নান করেন।
কিরীটেশ্বরীর মেলার ও করেন তিনি প্রচলন!
আজও পৌষ মাসের প্রতি মঙ্গলবার মেলা বসে,
কিন্তু আজ আর নেই অত অত যাত্রীর সমাগম।
রাজধানীর পাশে অবস্থিত ছিল বলে,
অনেক বেশী লোকজনে করতো তখন গমগম।
বনিক, রাজা-মহারাজা রাজধানীতে কোনো কাজে
এলেই করতে যেতেন মাতা কিরীটেশ্বরীর দর্শন।
দর্পনারায়ন এর পুত্র শিব নারায়ণ রাস্তার সংস্কার
এবং সেতু নির্মাণের কাজ করিয়েছিলেন।
পূজো হয়, কিন্তু মনে সাড়া দেয় কি আগের মতন?
মন্দিরের ঘন্টাধ্বনীর সাথে তাল মিলিয়ে ____
নেচে নেচে বয়ে যেতো ভাগীরথীর জলের ঢেউ।
আজ আর সেসব মানুষ নেই, সময়টাও গেছে___
অনেকটা দূরে হারিয়ে, যায়না ছোঁয়া,
মায়ের মনের কষ্ট হৃদয় দিয়ে কি অনুভব করে কেউ?
