হলদে চিঠি
হলদে চিঠি


পাতা ঝরা শীতের সকাল, রিক্ত স্মৃতির ভিড় মনের অঙ্গনে,
আবহমান সময়ে সালোকসংশ্লেষ হারায় সবুজ কিশলয়রা,
বার্ধক্যের শিথিলতায় বৃন্তচ্যুত ওরাও সামিল হলুদের দলে -
যত্নে তুলে রাখা চিঠিরা আজীবন তোলা থাকে স্মৃতিপটে,
খাম খুললেই ভাঁজে ভাঁজে মলিন কয়েকটা হলদে কাগজ,
আগলে রাখা কিছু চিঠি জুড়ে মন কেমনের টানাপোড়েন!
'শ্রীচরণেষু' দিয়ে শুরু, চিঠির শেষে 'ইতি' টানা উপসংহার,
এই হাতের লেখাটার সাথে যে নাড়ির টানের চিরন্তন বন্ধন!
হোস্টেল থেকে পাঠানো ছেলের ছোটবেলার ঐ পত্রগুলো,
হারিয়ে গেলেও অনেক মুহূর্ত অতি সহজে যায় না ভোলা;
আবেগরা আজ মূল্যহীন, তাই সুখের সংসারে উদ্বৃত্ত তিনি,
নতুন আবাসনে কাগজগুলোর মতো অপ্রাসঙ্গিক মানুষটা,
যে হাত একদিন অনুপম
স্নেহে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিত,
সেই বয়োবৃদ্ধ আলগা আঙুলগুলোকে ধরার কেউই নেই;
কর্মব্যস্ত সন্তান কাছে থেকেও নেয় না মায়ের কুশল বার্তা,
আজও চিঠির আদান-প্রদান চলে, ভিড় করে ডাকবাক্সে,
আধুনিক প্রযুক্তির ভাষায় যাকে তুমি-আমি 'ই-মেইল' বলি;
লাল বাতিটা জ্বলে একাকী মনের পোস্ট অফিসের ঘরে,
না পাঠানো চিঠিগুলো আজও ঠিকানা খুঁজে গুমরে মরে;
অবশেষে ভ্যালিডিটি ফুরোয়, চিতাকাঠে জ্বলে নশ্বর দেহ,
বেমানান হলদে চিঠিরা দহনজ্বালায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় -
চারপাশ আলোয় ভরিয়ে দেয় মুহূর্ত পোড়ানো হলুদ আভা,
শুধু বাঁধানো ছবিটা এখন জ্বলজ্বল করে দেওয়ালের গায়ে,
আসলে চিঠি, আগুন কিংবা ছবি - পরিণতিতে হলদে সবই,
ল্যামিনেশন তো জোর করে সময়ের গতি আটকানোর চেষ্টা।