হারানো কৃষ্ণ
হারানো কৃষ্ণ
দুই দিদির পর আমি -
শাঁখ বাজেনি, উলুধ্বনিও নয়।
কিন্তু মায়ের চোখের জলের আদর;
পাহাড়ঘেরা শহরে বড় হওয়া।
বাবা নাম দিলেন 'আলো'
ঠাকুমা বিরক্ত,'মেয়ে, তাও আবার এতো কালো!'
দিদিদের সাথে বড় হওয়া-
খেলা ছাড়িয়ে লেহাপড়া।
ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করে,
'শ্রীরাধার মানভঞ্জনে' দারুন 'কৃষ্ণ' করি।
কলোনির যেন নয়নমনি,
কালো মেয়ে লম্বা বেণী।
বড়স্কুলে ছুটির পর..
লুকিয়ে দেখা, বইয়ের ফাঁকে চিঠি।
দিদির বকা তবু মনে হয়,
যদি পাশের গলির শ্যামল অপেক্ষা করে।
কালো যেন আমার ভারী মিশমিশে,
লুকিয়ে অনেক চেষ্টা যেন ফর্সা হবো কিসে।
তখন আমি সতেরো;
হঠাৎ দেখি গালের পাশে ছোট একটু সাদা- কদিনেই হাতে পায়ে শরীরে;
ধীরে ধীরে আমার কালো হারিয়ে যেতে লাগলো সাদা রঙের ভিড়ে।
চুলগুলিও রইলো না আর কালো,
পুজোআচ্চা, ডাক্তার বদ্যি, এ শহর থেকে আর এক শহর;
আটকাতে পারলো না আমার কালো রঙের চিহ্নটুকু ও আর।
সেই কালো হারানো, কৃষ্ণ হারানো;
অনেক প্রশ্ন মনে, বংশে কার ছিল খুঁজে দেখা,
বেশি আলোয় কষ্ট হওয়া, মাঝেমাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়া,
সবখানেই সবাই তাকায় আমার দিকে, আমি যেন একদম একা।
মন গুমরে কাঁদে; চিৎকার করতে চায় আমার সেই কালোর জন্যে।
শ্যামলের চিঠির উত্তরটা আর নিতে এলো না কেন জানবার জন্য।
'পড়াশুনাই তোর সম্বল', মায়ের এক কথা।
সেই মন্ত্রে আজ আমি অনেকদূর পেরিয়ে;
সামনে এখন অনেক আলো; আমার স্বপ্নে বানানো ইমারত;
যারা এই টানাপোড়েনে তিক্ত, তাদের আমার শক্ত হাত।
আর মনের ভিতর আমার হারানো সেই কৃষ্ণ লুকিয়ে থাকে,
যার বাঁশির অপূর্ব সুরে সাজানো এই জীবন অঙ্গনকে।
