চেনা অচেনার বাইরে
চেনা অচেনার বাইরে
ছোটো থেকে ভালোবাসি নতুন কিছু জানতে
খুঁজতে চাইতাম চেনা পৃথিবীর অচেনা রূপ।
তাইতো কখনো যাই আপন খেয়ালে, একা একাই,
দেশ থেকে দেশান্তর, পথ থেকে প্রান্তরে।
সত্যি বলতে কি, ভালোবাসি সমুদ্রকে,
সবার থেকে একটু বেশিই ভালোবাসি।
যখন অবাধ্য জলোরাশিগুলি দুর থেকে আসতে আসতে
আছড়ে পড়ে, ছুঁয়ে যায় পায়ের পাতা,
তখন রোমাঞ্চিত লাগে বেশ মনের অন্তরে।
সেদিন ছিল এক পড়ন্ত বিকেল -
দীঘার ঝাউ এর ধারে বসে দেখছি -
সমুদ্রের রাগান্বিত জলরাশির অপরূপ শোভা,
প্রকৃতি প্রেমের টানে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে।
হঠাৎ চোখে পড়ে দূরের ছোটো ঢিপির টিলায়
বসে আছে দুটি মানুষ প্রেমের আঙ্গিকে,
মনে হলো চেনা, দেখেছি কোথায়,
উঠেই গেলাম শেষ পর্যন্ত।
গিয়ে দেখি সত্যি তো, আমার শৈশবসাথী অরূপ
সাথে সদ্য প্রেমে পড়া তার এক মেয়ে বন্ধু।
আলাপ করালো সে নিজেই সুচরিতার সাথে,
আমিও জানালাম প্রত্যুত্তর।
অরূপ এখন চাকরি পেয়েছে মাস দুয়েক,
নিজেই বলে চলেছে সদ্য প্রেমে পড়া মেয়েটির কথা -
" খুব ভালো, রূপে লক্ষ্মী গুনে সরস্বতী,
আর মানুষ চিনতে পারে খুব, বোঝেও,
আর জানে মানুষের মনকে ভালবাসতে "।
সদ্য ফোটা প্রেমিকের মুখে প্রশংসা শুনে
লজ্জায় পারলো না মুখ তুলতে মেয়েটি,
তাকিয়ে আছে জলের দিকে, মুখে হাসির রেখা,
শেষ সূর্যের আলোতে দেখাচ্ছে সত্যি মেয়েটা সুন্দরী ।
শেষে বন্ধুকে বললাম, " সত্যি চয়েস আছে তোর "
বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের পথ ধরি।
না পারছি হাসতে, না পারছি কাঁদতে -
বুকের বামপাশে মোচড় দিচ্ছে ক্রমশ,
মনের অরণ্য আলোড়িত হচ্ছে অনবরত,
না না - ভালোবাসার জন্য নয়, অকৃতজ্ঞতার জন্য।
নিজের মনেই বলে উঠলাম, ' সত্যি কি
কেউ ভালোবাসা বোঝে, নাকি বোঝে ভালোলাগা?'
সত্যিই তো -
নাহলে দীর্ঘ চার বছরের প্রেমের পরেও
ছেড়ে যেত না কখনো বেকারত্বের অপরাধে।
'তোকে আর মনে পড়ে না, আর মনেই পড়তো না হয়তো,
কিন্তু এতদিন পরে দেখা, তাও এক অন্য ভূমিকায়।
চেনা থেকেও চেনা অচেনার বাইরে আজ অনেক আলোকবর্ষ দূরে।
ঠিকই বলছি, সেই মেয়েটি, যাকে দেখলাম সদ্য প্রেমে পড়তে
ঠিকই দেখেছি, সেও যে ছিল -- সুচরিতা !