STORYMIRROR

Siddhartha Singha

Romance Fantasy Others

3  

Siddhartha Singha

Romance Fantasy Others

ভ্যালেন্টাইন

ভ্যালেন্টাইন

2 mins
1.0K



যিনি নিজের জায়গায় ঠিক থাকবেন

মৃত্যুর পরেও তিনি বেঁচে থাকবেন।


প্রাচীন রোমে জুনো পুজোর জন্য

চোদ্দোই ফেব্রুয়ারি ছুটি থাকত।

জুনো শুধু ওখানকার দেব-দেবীদের রানিই ছিলেন না

ছিলেন বিবাহেরও দেবী।

সেই পুজো উপলক্ষে বেশ কয়েক দিন ধরে চলত

লিউপারকেলিয়া উৎসব।


এই উৎসবটা ছিল ভারী মজার।

এলাকার অবিবাহিতা তরুণীরা নিজেদের নাম একটা চিরকুটে লিখে

গির্জার সামনে রাখা নির্দিষ্ট কাচের জারে ফেলে দিতেন

আর অবিবাহিত পুরুষেরা

সেখান থেকে যে যাঁর মতো একটা করে চিরকুট তুলে নিতেন।

যাঁর চিরকুটে যে মহিলার নাম লেখা থাকত

তিনি তাঁকে নিয়েই উৎসবের ওই ক’টা দিন মেতে থাকতেন।

উৎসবের শেষে যদি উভয়েরই উভয়কে ভাল লেগে যেত

তা হলে তাঁরা বিয়ে করে নিতেন।


কিন্তু সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের রাজত্বকালে

শুরু হল ভীষণ যুদ্ধ

হাত ছাড়া হয়ে গেল বহু রাজ্য।

সম্রাট দেখলেন, ওগুলো ফেরাতে গেলে আরও সৈন্যর দরকার

কিন্তু অবাক কাণ্ড, রাজ্যের কোনও যুবকই আর যুদ্ধে যেতে রাজি নয়।


কিন্তু কেন? কে যেন তখন বললেন---

প্রেম-ভালবাসা, ঘর-সংসার

আর ছেলেমেয়েদের মায়াই

একটা পুরুষকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখে।

তাই বিশাল বাহিনী গড়ে তোলার জন্য

তিনি সে দিনই আইন জারি করলেন---

কেউ আর বিয়ে করতে পারবে না। বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

যারা এই আদেশ অমান্য করবে, তাদের শিরচ্ছেদ করা হবে।

কিন্তু আইন করে তো সব কিছু বন্ধ করা যায় না,

ফলে লুকিয়

ে-চুরিয়ে, চুপিসারে প্রণয়পর্ব চলতেই লাগল।


এই সময় রোমে এক যাজক ছিলেন।

তাঁর নাম--- ভ্যালেন্টাইন।

তিনি এই তরুণ-তরুণীদের কাছে ত্রাতার মতো আবির্ভূত হলেন।

তাঁর গির্জাতেই নিশুতি রাতে

মোমবাতির কাঁপা কাঁপা আলোয়

একের পর এক বিবাহ হতে লাগল।


বেশি সময় লাগল না

গুপ্তচরের মারফত সেই খবর‌ পৌঁছে গেল সম্রাটের কাছে।

এক গভীর রাতে ভ্যালেন্টাইন যখন কয়েকটা জুটির একসঙ্গে বিয়ে দিচ্ছেন

ঠিক তখনই, সেখানে আচমকা হানা দিল সম্রাটের অনুচরেরা।

বিয়ের জন্য হাজির হওয়া বর-কনেরা পালিয়ে বাঁচলেন ঠিকই

কিন্তু ফৌজের হাতে ধরা পড়ে গেলেন ভ্যালেন্টাইন।

দুশো ঊনসত্তর খ্রিস্টাব্দের চোদ্দোই ফেব্রুয়ারি

বিবাহের দেবী জুনো পুজোর দিন

তাঁর শিরচ্ছেদ করা হল।


বন্দি থাকার সময় কারা-অধিকর্তার একমাত্র মেয়ের

প্রেমে পড়ে যান তিনি।

মৃত্যুর আগে ছোট্ট একটা কাগজের টুকরোয়

তিনি তাঁকে লিখেছিলেন,

রাজা ক্লডিয়াস কোনও দিনই ভালবাসার গতি

রোধ করতে পারবেন না।

এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রেমিক-প্রেমিকারাই জয়ী হবে।


তাঁর সেই ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে হয়নি।

যিনি নিজের জায়গায় ঠিক থাকবেন

মৃত্যুর পরেও তিনি ঠিক বেঁচে থাকবেন।

ভ্যালেন্টাইন আজও বেঁচে আছেন।

যত দিন এই পৃথিবীতে প্রেম থাকবে

যত দিন কুঁড়ি তার পাপড়ি মেলবে

যত দিন নদীতে বইবে তিরতিরে ঢেউ

তত দিন, তত দিন তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মধ্যে

আমাদের মনের গভীরে।

-----------------


Rate this content
Log in