STORYMIRROR

Siddhartha Singha

Abstract Tragedy Fantasy

3  

Siddhartha Singha

Abstract Tragedy Fantasy

পাতার নৌকো

পাতার নৌকো

3 mins
223


তুমি যেমনটি চাও, গাঢ়-রঙা টিপ

আলতা, কাজল আর জংলা ছাপায় নিজেকে সাজিয়ে

ছিলাম দু'চোখ বুজে গাছের তলায়

এমনই ধূসর এক বৈশাখী দুপুরে

পিছু থেকে চোখ টিপে ধরবে কখন!

হঠাৎই কানে এল, টিপে টিপে আসা পায়ের পাতায়

গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাওয়া পাতার মর্মর

এত কাছে, তবু এত ফাঁকা ফাঁকা কেন!

চেয়ে দেখি, তোমাদের রাখাল-বালক চরাতে এসেছে হরিণ-বাছুর।

সকালে তোমাকে নাকি কেউই দেখেনি বিছানায়... দমকা বাতাসে ছোটে ঝরা পাতা-টাতা

ময়াল-আঁচল ধরে আমাকে পেচিয়ে...

তা হলে কি সত্যি কথা পরীরা আকাশে মেলে ডানা মধ্যরাতে!

ঝলসে ঝলসে যায় এ দিক-ও দিক

যত দূর চোখ যায় পথ চেয়ে থাকি---


ভাবি, জ্যৈষ্ঠ মাসে

মাহেন্দ্র যোগে কি কেউ তোমাকে করেছে বশীভূত! নইলে এ জন্মদিনে বাল্য বিবাহিত বট-পাকুড়ের ডালে

নেই কেন মানত করে বেঁধে যাওয়া নতুন কোনও ঢেলা,

আগেকার ঢেলাগুলো বৃষ্টি-শিশিরে পচে খসে খসে পড়ে

তা হলে কি মনোবাঞ্ছা হবে না পূরণ!


আষাঢ়ের সকালে

পাঠশালা যেতে যেতে ভাসাতাম নৌকো খাতার পাতা ছিঁড়ে খালে-বিলে

তুমি তাতে লিখে দিতে আমার নাম, তোমার নাম---

কত দূর যেত সেটা দাঁড়িয়ে দেখিনি কোনও দিনও।

নজরে পড়ত শুধু ফেরার সময় ভাসছে এক কোণে কাগজের ভেলাটি।

চেয়ে চেয়ে দেখতাম, কী ভাবে মৃদু ঢেউয়ে মিশে যাচ্ছে

আমাদের নাম দুটো জলের ভিতরে


জলে জলে জলমগ্ন সারাটা শ্রাবণ

অলক্ষুনে মন বলে, যা শুনি, হয়তো তা-ই ঠিক

বিছানায় মুখ গুঁজে ঢুকরে কাটাই সারারাত

আরও যদি দেরি করো কাটাব তোমার কাছে পুরোটা শ্রাবণ।


মনে পড়ে, সেই ভাদ্রে বন্ধুরা মেতেছে যখন ঝুলন সাজাতে

ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছি পেয়ারা বাগানে

দোলনা বেঁধে দু'জনে ভেসেছি

কখনও এনেছি তুলে কচুরিপানার রাঙা ফুল

অথবা ছুটেছি শুধু ফড়িঙের পিছু পিছু এ মাঠে সে মাঠে...

কোথায় হারিয়ে গেছে সেই ছুটোছুটি, ঝুলনে ঝুলন খেলা

কখনও হবে কি আর একসঙ্গে দোলা!


আশ্বিনের আগেই তো শুরু হত চালা বাঁধা

মুখুজ্জেবাড়িতে ঠাকুর বানানো।

কে আগে দেখতে পারে মা দুগ্গার মুখ

ছুটতাম মহালয়ার দিন ভোররাতে

সেটা কি আসল ছিল, না কি তোমার ও মুখ দেখে

মনে মনে ভাবতাম, দিন ভাল যাবে

একটি ঝলক আজ সেই মুখ যদি দেখা যেত হঠাৎ প্রত্যুষে!


সে বার কার্তিকে

সরায় দেখিয়েছিলে আতপের গোলা, বলেছিলে--- চৌকাঠে পায়ের ছাপ যদি রেখে যাও

মাকে আর কষ্ট করে আঁকতে হবে না

তুমিই তো এ ঘরের লক্ষ্মীস্বরূপিণী।

কেউ কি ফেলল শুনে এই কথা!

তাকিয়েছি আলোয়-অন্ধকারে

বলেছি, এ ভাবে নয়

শাঁখা আর সিঁদুরে আমার বড় লোভ, দেবে?

একটু সবুর করো, তুমি বলেছিলে

কিন্তু আর কত কাল!আর কত যুগ!


প্রত্যেক অঘ্রাণে

যেতাম রাসের মেলা পাশাপাশি হেঁটে আমরা দু'জনে, মনে পড়ে?

ফাঁকা পথে কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় দিয়েছিলে প্রথম চুম্বন

থরথর কাঁপা দুটি ঠোঁটে,

এখনও সেখানে যাই, যদি দেখা হয়!

নাগরদোলার ভেলা শুধু ঘুরে ঘুরে আসে, তোমাকে দেখি না

বড় একা লাগে, তাই এ বার সন্ধ্যায়

সেই কৃষ্ণচূড়ার পাশে লাগিয়ে এসেছি একটি রাধাচূড়া।


তখন তো আরও ছোট, শাড়িও ধরিনি

পৌষের নবান্ন রাতে চাদরে আমাকে আগলে

পৌঁছে দিয়েছিলে বাড়ি

তখনই তো ছোঁয়াছুঁয়ি, লজ্জাবতী লতা।

তার পর থেকে চোখে চোখ মিলে গেলে

শরীরেও খেলে যেত তিরতিরে ঢেউ

সকালে শিশির আর কুয়াশায় ভিজে যেতাম তোমার কাছে

ঠিক কত দিন হল, বলে দিতে পারি

দেয়ালের গায়ে কাটা দাগ না-গুণেই।


আতঙ্কে কাটাই বড় মাঘ এলে, মনে পড়ে যায়

সাঁকোটা পেরিয়ে গেলে কত অনায়াসে

কাঁপা কাঁপা পায়ে আমি

ও পারে পৌঁছে দেখি, তুমি বহু দূরে...

যত জোরেই হাঁটি, দূরত্ব ঘোচে না

ঝাঁকরা গাছের মাথা ঝুপ করে মুহূর্তে নামায় ঘন রাত

তুমি কই? চোখ মেলি ধুকপুক বুকে

কিছু কিছু মনে পড়ে কিছুটা হারাই

পুষ্করিণীর কাছে ভোর রাতে বলি 

ছেঁড়া ছেঁড়া সেই স্বপ্নগুলো

তোমার হয়ে কাটি হাড়িকাঠে ফাঁড়া।


তা হলে কি তুকতাক কখনও হয় না ফাল্গুনে!

বুড়িমার মন্ত্রপূত ফুল-বেলপাতা

খাটের পায়ার নীচে এত দিনে পাক্কা আমচুর

তিন দিনের মধ্যেই অথচ আসার কথা ছিল!

তা হলে কি তাই...

তোমার বাড়ির লোক হয়তো সেটাই ভেবেছে

এক-আধটা বিষমও কি খাও না গো তুমি!


মনেও কি পড়ে না সেই চৈত্রে চুপিচুপি তুলসীতলায়

আবিরের ছলে আমার সিঁথিতে তুমি সিঁদুর দিয়েছিলে

করেছিলাম প্রণাম আমি হাঁটু গেড়ে।

তোমার পায়ের সেই চিহ্নটুকু ছেড়ে নিত্যদিন লেপি দু'চোখের ফোঁটা ফোঁটা জলে করি শিবচতুর্দশী।

যেখানেই থাকো তুমি আমার ওড়ানো এ আবির

ঠিক ছোঁবে প্রিয় সে পায়ের পাতা দু'টি

যদি সত্যি সত্যি ছোঁয়, এ শরীরে অন্তত একবার ছড়িয়ো

তোমার ছোঁয়ার শিহরন!


এই গাজনের দিনে পূর্ণ হবে বারোটা বছর

সে দিনও না এলে আমি এ বার করব একাদশী---




Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Abstract