বাসাবদল
বাসাবদল


আমি
আমার সঞ্চয়ী পূর্বপুরুষের ভিটে মাটির প্রাংশু দালান
গুনতিতে
ঘর বেশি বারান্দা বেশি এবং খুব সেকেলে
ঝোপঝাড় ঘাসপাথর
আজকালকার ধাঁচের সঙ্গে মানানসই নয় বলে
বেচে দিয়ে
কিনে নিলাম বিবির জোরাজুরিতে আবেগে
হালফিলের ডিজাইনের চকচকে ফ্ল্যাট বাড়ি
একেবারে বাইশ তলায়
যার
ঘর কম বারান্দা কম ঝলমলে
আলো বাতাস সুতলি আগলে
অন্ধকার বেশি
যেন ফাঁকা বাড়িতে দেখা
টর্চের আলোয় সূর্যের বলিরেখা ।
আমি
আবার অধিকার ফলিয়ে
গর্বে
গলা ফাটিয়ে মাথা উঁচু করে দাবি করছি
বলে উঠছি কথায় কথায় উঁচু গলায়
এ বাড়ি আমার
এ বাড়ি আমার
আর খুঁজে নিচ্ছি কলিজায়
পাঁজরের ভেতর সাময়িক দুর্নিবার শান্তি ।
আমার নিজের প্রতিষ্ঠিত হাতে শোবার ঘর বসবার ঘর
বিলাসিতার রঙ ছড়িয়ে করছি আরও মহার্ঘদর
প্রমাণ করছি খ্যাতি অর্থ বংশ মর্য্যাদার কীর্তি
আরো বাদবাকি লোকের দেখা দেখি ।
আমার
পূর্বপুরুষের নিরক্ষর ছবির অ্যালবাম
শ্বাসরুদ্ধ
আলমারির তাকে পুরোনো কাপড়ের গাদায়
অবহেলিত ।
কেন জানি না,
মাঝে মাঝে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়ি
যখন দু’চোখ নিংড়ে দেখি
মাদুর বিছানোর উপর বসে আমার বাবা মায়ের
যুগলছবি
ধরে রয়েছেন আকাশ পরিষ্কার
গা ভর্তি স্বর্গের সুবাস দু’চোখ কোলভরা আশ্রয়
আগলে আমাদের ঘর সংসার ।
যাঁদের
রক্ত কতটা জল হয়েছে
জল কতটা অশ্রু হয়েছে
তিলে তিলে রক্ত জলে গড়ে ওঠা গাছপালা বাঁধানো
ভিটে মাটির নিরেট দালান বাড়ির বসবাস
একান্নবর্তী
যেটা সদ্য বেচে আজ আমি বাঁচার কথা ভাবছি
চোখবন্ধ পুতুলের মতো শূন্যতা গিলে
আমার বাসাবদল সাম্প্রতিক প্রাসাদে ।