অচেনা
অচেনা
যতক্ষণ অরুণ আমার পাশে পাশে আছে,
সাহস হোক কিংবা দুঃসাহস, থাকে আমার কাছে।
অন্ধকার নেমে এলেই আমি বাপু কাবু,
পরিচিত ছকে ফিরতে হবে অবশ্যই, নিয়ে এই বপু।
জুজুবুড়ি আমার কাছে অদৃশ্য যা কিছু,
সন্ধ্যে হলেই মনে হয়, যেন কে নিয়েছে পিছু!
দিনের বেলা নতুন জায়গাতে একটুও ভয় নেই,
আমি নতুন একথা, আমি ছাড়া আর কি জানে কেউ!
বরং অন্য কেউ এসে রাস্তা শুধায়,আমি চিনি কি না?
লজ্জ্বা পেয়ে তখন, বলতেই হয় যে, সত্যিই চিনিনা।
কখনও নিজের পরিচিত শহরেও যাই যে হারিয়ে,
অলি গলির গোলোকধাঁধা দেয় আমার মাথা ঘুলিয়ে।
গা টা তখন যদিও করে ছমছম, তবে বুঝতে দিই না,
ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হলেও, কাউকে জিজ্ঞেস করিনা।
অভিজ্ঞতা এমন অনেক আছে, লোকে ঠিক বলে না,
নতুন কিংবা চেনা সব জায়গায় আছে এমন লোক,
উল্টো পথের দিশা দিয়ে হয়রান করতে ছাড়ে না।
এদিক থেকে ট্রাফিক পুলিশ বা কোনো দোকানদার,
নতুন কোথাও জিজ্ঞেস করাতে, করেছে উপকার।
বাড়িতে একা থাকলে দিনের বেলাতেও দিই তালা,
একা না থাকলে রাতে চোর আর আরশোলা দেখলে,
চিৎকার করে বাড়ির সবার কানে লাগাই তালা।
চিংড়ি, ট্যাংরা, শিঙ্গি, কই, মাগুর থেকে থাকি দূরে,
বাই চান্স ছুঁয়ে ফেললে, চিৎকার করি করুণ সুরে।
রক্ত দান করতে গেলে একটুও ভয় পাইনা আমি,
অথচ কারো রক্ত বেরোতে দেখলে খাই ভিরমি।
বিপদ না ভেবে সবার আগে সবকাজে ঝাঁপাই,
এভাবেই যে বাড়ির লোকেদের চিন্তায় ফেলে দিই।
এ স্বভাব টা যে খুব ছোটোবেলা থেকেই রয়েছে,
একবার আমরা ছোটোমামাকে দেখতে গিয়েছি।
আমার বয়েস নয় আর ভাই তখন হবে বছর চার,
নীচে নামার পরে মা হঠাৎ করেই লক্ষ্য করে,
ভাই তিনতলার ঐ ঘরে জুতো জোড়া ফেলে এসেছে।
বাবা আর মামাদাদু আমাদের রেখে কাছেই গেছে,
মাকে বলে ফেলি, "আমি নিয়ে আসবো?"
মা অবাক হয়ে বলে, "তুই পারবি?"
মাকে চিন্তা করার আমি দিইনা একটুও সুযোগ।
ঘাড়টা কাত করেই, "হুঁ" বলেই দে দৌড়, দে দৌড়!
লিফ্টের দরজাটা বন্ধ হয়ে যায় আমি যেতে যেতেই,
দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট! উঁহু, একদম পোষায় না।
গুনে গুনে সিঁড়ি দিয়ে ঠিক সেই ঘরে পৌঁছে যাই,
ছোটো মামা অবাক! ফেরার রাস্তা এবার সিঁড়িটাই।
এন. আর. এস এর নীচে নেমে দেখি মা খাচ্ছে বকা,
কলকাতায় প্রথম গেছি আমি আর মা, সব বোকা।
আমাকে ফিরতে দেখে মায়ের চোখে জল মুখে হাসি,
কি করি! দুঃসাহস এর কাজ করতে যে ভালোবাসি।
কোনো ভয়ের কথা থাকে না তো মনে একেবারেই!
বুঝি যে, সাহস চাই, কাজ হয় না শুধু চোখের জলেই।
