অবহেলার রাত্রি পেরিয়ে
অবহেলার রাত্রি পেরিয়ে


অবহেলার রাত্রি পেরিয়ে,
ভোরের আলোয় জেগে উঠি একা—
তোমার অনুপস্থিতি যেন
নিস্তব্ধতার সবচেয়ে বড় চিহ্ন।
চোখে ভেসে ওঠে সেই শেষ সন্ধ্যা,
যখন চাঁদের আলোয় তুমি বললে, “চলো”—
অথচ পেছনে ফেলে গেলে আমার সব না বলা কথা,
শুধু নীরবতা হাতে নিয়ে ফিরলাম ঘরে।
তুমি কি জানো, প্রতিটা রাত
কেমন করে আগুন হয়ে পোড়ে বুকের ভিতর?
তোমার পাঠানো একটুখানি হাসিও
এখন বিষের মতো লাগে—তবু, ভীষণ আপন।
জানালার পাশে বসে চেয়ে থাকি,
যদি ফেরো, যদি একবার বলো—
“ভুল হয়েছিল, ফিরে এসেছি…”
কিন্তু শব্দেরা আজকাল আর বাঁচতে চায় না।
অবহেলার রাত্রি পেরিয়ে যখন ভোর আসে,
আমি কেবল নামহীন অপেক্ষায় জেগে থাকি—
তুমি নেই, তবুও প্রতিটা সকাল
তোমারই প্রতিচ্ছবি বয়ে আনে বাতাসে।
অবহেলার রাত্রি পেরিয়ে,
নিভে যাওয়া প্রদীপের আলোয়
চুপচাপ বসে থাকি আমি—
হৃদয় জুড়ে এক নিষ্ফল প্রতীক্ষা।
তোমার প্রতিটি কথার ছায়া
আজও মিশে আছে দেয়ালের ফাঁকে,
তোমার ছেড়ে যাওয়ার শব্দ
পায়ের ছায়ার মতো লেগে থাকে আমার হৃদয়ের ঘরে।
রাতের অন্ধকারে শব্দেরা কাঁদে—
বালিশ ভিজে যায় নামহীন কান্নায়।
তোমার স্পর্শহীনতা
এতটাই স্পষ্ট, যেন ছুঁয়ে দেওয়া দুঃখ।
আমি ভাবি, তুমি কি সত্যিই চেয়েছিলে দূরে যেতে?
নাকি সময়ের ভারে ভুলে গিয়েছিলে আমায়?
যখন বললে, "তোমার ভালো থাকাই চাই,"
তুমি কি বুঝেছিলে, আমিই ছিলাম তোমার আলো?
ঘুম আসে না বহুদিন ধরে—
চোখ বুঝলেই দেখি, সেই দুপুরবেলা
যখন তোমার কণ্ঠে ক্লান্তি ছিল
আর আমার প্রশ্নে ছিল শুধুই ভয়।
তুমি বলে গেলে, “এটা শেষ নয়,
সময়ই বুঝিয়ে দেবে ভালোবাসা কি ছিল…”
কিন্তু সময় তো কেবল বিস্মৃতি শেখায়,
ভালোবাসা নয়—ভাঙা স্বপ্নের চূর্ণ খোঁজে।
অবহেলার রাত্রিগুলো
আজ ইতিহাসের পাতায় পাতায় জড়ানো,
তোমার লেখা না-পাঠানো চিঠির মতো
যা কখনও খোলে না, তবু হারিয়েও যায় না।
আমি এখনো সেই জানালার পাশে বসি,
যেখানে বাতাসে বাজে এক পুরনো সুর—
তোমার প্রিয় গান, আজো কাঁপায় হৃদয়
যেন তুমি ঠিক পাশেই বসে আছো, নীরব।
তোমার ফিরে আসার স্বপ্ন বোনে ঘুমহীন রাত,
আর প্রতিটি ভোর যেন প্রশ্ন করে—
"এই কি তবে ভালোবাসার পরিণতি?"
একক গল্প, যেখানে আমি কেবলই 'অপেক্ষা'।
অবহেলার রাত্রি পেরিয়ে
আজও যে প্রেম বেঁচে আছে কোথাও,
তোমার কাছে নয়,
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে, আমার কবিতায়।।