বিট্টুর শিক্ষা
বিট্টুর শিক্ষা
" ঠাকুমা এসেছে , ঠাকুমা এসেছে " বলে ঠাকুমার পিছন পিছন কচিকাচারা ছুটে এলো ।
" বাচ্চারা সব কেমন আছো ? " বাগানের সেই চেনা বেদীতে বসে ঠাকুমা বসে জিজ্ঞাসা করলেন ।
সব গলা ফাটিয়ে বলে উঠলো , " ভালো ভালো । "
" দেখি আজ ঝুলিতে কী গল্প রয়েছে তোমাদের জন্য ? " বলেই ঝুলির ভেতর হাত ঢোকালেন ঠাকুমা ।
" শোনো তবে ...
সোনাগ্রামে একদা এক মহা পাজি ছেলে ছিলো । তার নাম বিট্টু । কথায় কথায় সে মিথ্যে কথা বলে । অকর্ম কুকর্ম করে বেড়ায় । সে পড়লো একদিন মহা ফাঁপড়ে ।
" কোথায় যাচ্ছিস বিট্টু এত্ত বেলায় ? " বিট্টুর মা জিজ্ঞাসা করলেন ।
" ওই ওই শিবু দা অঙ্কক্লাসে ডেকেছে । "
" ও যা । ও শোন শোন বইখাতা কই ? "
" বই লাগবে না মা ও শিবু দাই বই নিয়ে করাবে । খাতা নিয়েছি । চললাম দেরী হয়ে গেলো । "
প্রায় ৫ ঘন্টা পর বাড়ী এলো বিট্টু ।
" দাঁড়া কোথায় ছিলি এতক্ষণ ? " তুলসিমঞ্চে প্রদীপ জ্বালাতে জ্বালাতে কড়া গলায় জানতে চাইলেন ইরাবতী দেবী নিজের ছেলেকে ।
" না মানে ইয়ে অনেক অঙ্ক দেখার ছিলো । সবার না পারা অঙ্কগুলো করে দিলো শিবু দা । "
" ঠিক তো ? "
" হ্যাঁ মা । তুমি বিশ্বাস করো না ? "
" নিশ্চয়ই করি বাবু । যা হাত মুখ ধুয়ে নে । লুচি হালুয়া করেছি খাবি । "
হ্যাঁ বলতে যাবে গলাটা আটকে গেলো । সে একটুও কথা বলতে পারছে না দেখে গলাটা চেপে ধরে জোরে কাশতে লাগলো । হাত বাড়িয়ে মাকে জলের জন্য ইঙ্গিত করলো ।
" কী হলো বাবু তোর ? অমন করছিস কেন ? এই নে জল খা ।"
হাবে ভাবে বুঝিয়ে দিলো বিট্টু কথা বলতে পারছে না ।
" হে ভগবান , এ কী হলো ? "
হাত দিয়ে বিট্টু লিখবে বলে ইশারা করলো ।
" কী হলো গিন্নী ? ছেলে কী বলছে ? " এতক্ষণে বিট্টুর বাবা কাজ থেকে ফিরলেন ।
" দেখো না ও কথা কইতে পারছে না । কীরকম যেন করছে ! এই নে পাতা লিখে দে । "
" ও এই ব্যাপার ! ও নিয়ে ভেবো না গিন্নী । এ তো হবার ছিলোই । ব্রজেশ্বর বাবার মন্ত্র ফলেছে । লেখ হতভাগা কী কুকর্ম করেছিস । "
বিট্টু কাগজে লিখে দিতে মা পড়ে মুখে হাত চাপা দিলেন । " তুই জুয়া খেলতে গেছিলিস ! মুড়োঝ্যাঁটাটা কই ... এই তো এই তো ! আজ তোকে শেষ করে দেবো । " বলে ঝ্যাঁটা পেটা করতে লাগলেন ইরা দেবী । তখন উনি পুরোই ভুলে গেছেন ছেলে মারের চোটেও চেঁচাতে পারবে না ।
" দাঁড়াও ইরাবতী । শোন হতভাগা , তোর এই কাজকর্মের জন্যই ব্রজেশ্বর বাবা মন্ত্র পড়েছিলেন । কোনো গর্হিত কাজ করে মিথ্যে বললেই তোর বাকশক্তি ক্ষণিকের জন্য হারাবে । আমার আর মায়ের পায়ে মাথা ঠেকা , তবে কথা বলতে পারবি । "
অবশেষে ষষ্ঠাঙ্গে ক্ষমা চেয়ে বিট্টুর মুখে শব্দ ফুটলো ।
" আমি খুব বাজে ছেলে বাবা , ভুল করেছি মা । আর অমন হবে না । "
ঠাকুমা বললেন শেষে ,
" এমনি করে বিট্টু ক্রমে ভালো ছেলে হয়ে গেলো । বাবা মার বাধ্য ও ন্যায়নিষ্ঠ হয়ে উঠলো । এবার আমার কথাটি ফুরোলো , নটে গাছটি মুরোলো । "