Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sanghamitra Roychowdhury

Classics

3  

Sanghamitra Roychowdhury

Classics

মেঘ রৌদ্র বৃষ্টি

মেঘ রৌদ্র বৃষ্টি

6 mins
690


মেঘ আর বৃষ্টি গাড়িতে উঠে বসার পর কয়েক গজ গাড়ি গড়িয়েছে কি গড়ায় নি, বিকট ধড়াম শব্দে টায়ার ফাটলো। বিগলিত হেসে ড্রাইভার মোহন জানালো ওর সাথে স্টেপনি নেই। তাহলে উপায়? ড্রাইভার মোহন ওদেরকে ভূপাল স্টেশন থেকে প্যাসেঞ্জার ট্রেনে তুলে দিলো, আর ওর এক বন্ধু ড্রাইভার অশোককে ফোন করে দিলো। মেঘের আর বৃষ্টির দু'জনের ফোনেই ড্রাইভারের নাম,ফোন নাম্বার আর দুই ড্রাইভার বন্ধুর একখানা সেলফি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিলো মোহন। অশোক ম্যাডামদের জন্য ওবেদুল্লাগঞ্জ স্টেশনে অপেক্ষা করবে গাড়ি নিয়ে। আর গাড়ি সারিয়ে নিয়ে বিকেলের মধ্যেই গাড়ি নিয়ে মোহন সিধে পৌঁছে যাবে সাইটে।


বহুকাল পরে ট্রেনে চড়ে কিন্তু বৃষ্টিদের মন্দ লাগলো না। নবরাত্রি শেষে বহু পরিবারকে দেখলো দেবীমার মূর্তি বিসর্জন করতে নিয়ে যাচ্ছে নর্মদা নদীতে, মূর্তি কোলে নিয়ে বা ট্রেনের সিটে বসিয়ে। ট্রেনে চাপিয়ে, রীতিমতো ব্যান্ড বাজিয়ে। বৃষ্টি ডিএসএলআর তাক করে বসে আছে। মেঘ মনে মনে হাসলো। বাধ্য হয়ে ট্রেনে এসে ভালোই হয়েছে তবে, কানে ইয়ার ফোনটা গুঁজে মেঘ চোখ বুজলো। যথেষ্ট ক্লান্ত ওরা, প্রায় মাস চারেক ধরে ওরা লোকেশনের জন্য রেইকি করে যাচ্ছে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। এটাই লাস্ট ডেস্টিনেশন। মোটামুটিভাবে বেশীর ভাগই ফাইনাল হয়ে গেছে। ওরা এখন জাস্ট একবার যাচ্ছে কিছু স্টিল ফটোগ্রাফির উদ্দেশ্যে।


ওবেদুল্লাগঞ্জে এসে ট্রেন মোটামুটি টাইমেই পৌঁছে গেছে। স্টেশনে নেমে দেখে ওই অশোক নামের ড্রাইভারটি একটা কাগজের ওপর বড়ো বড়ো অক্ষরে বৃষ্টি ম্যাডাম আর মেঘ ম্যাডাম লিখে প্ল্যাকার্ড বানিয়ে উঁচু করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ বুদ্ধিমান ছোকরা তো! খুঁজে পেতে অসুবিধা হয় নি তাই অচেনা মানুষকেও। স্টেশনের পাশের ছোট্ট এক চায়ের দোকানের নড়বড়ে বেঞ্চিতে বসে চা খেলো ওরা। অখ্যাত জায়গায় ছোট্ট দোকান হলে কী হবে? চাটা বানিয়েছে জম্পেশ, একেবারে ঘন খাঁটি দুধে।


গাড়িতে বসে দু'জনেই দুই জানালা দিয়ে দেখতে দেখতে চললো। লাল ধূলোয় ভর্তি ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো রাস্তা। খুব খারাপ রাস্তার অবস্থা। ড্রাইভার ছেলেটি দেহাতি হিন্দিতে বললো যা, তাতে ভূপাল শহর ছাড়িয়ে কিছুটা এলেই নাকি রাস্তার এই হাল। প্রবল বৃষ্টিতে গেলো বর্ষায় রাস্তা পুরো বেহাল। শুনেছে শিগগিরই রাস্তার কাজ শুরু হবে। তবে এটা ওরা জানে আসা যাওয়া দু'পিঠই এই রকম রাস্তায় গাড়ির লাফালাফিতে গা-হাত-পা ব্যথা অবশ্যম্ভাবী।


যাই হোক, এখন ওসব কিছু ভেবে এখন আর লাভ নেই। এসেছে যখন, ফিরতেও হবে। ভীমবেটকায় যখন ওরা পৌঁছলো তখনই রোদের ঝাঁঝটা কেমন যেন ঝিমিয়ে এসেছিলো। একদিকে ভালোই, ওরা যখন ছবি তুলছিলো রোদের ঝাঁঝে কষ্ট হয় নি। মেঘ একপাশে একটা লম্বা শিরিষ গাছের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে, বৃষ্টি একের পর এক ছবি তুলছে। ওর ভাবখানা এমন যেন ক্যামেরা দিয়েই গোটা ভীমবেটকাকে বন্দী করে নিয়ে যাবে কোলকাতায়।


আসলে কিছু কিছু স্মৃতিদৃশ্য তো কেবলমাত্র মনের স্ক্রিনটাতেই বন্দী থাকবে। বোকা বৃষ্টিটা বোঝে না সেসব। তেইশ বছরের বৃষ্টি জীবনীশক্তিতে ভরপুর।


থাক গে, নিজের যা ভালো লাগে করুক। ফিল্মের স্টিল ফটোগ্রাফির প্রয়োজনে যা যা লাগবে সেসব ছবি আগেই তোলা হয়েছে। মেঘ চেক করেও নিয়েছে। এখন বৃষ্টি নিজের শখ মেটাচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরেই মেঘের একটা সিগারেট পিপাসা পাচ্ছে, কিন্তু সিগারেটটা ধরাতে পারছে না, কারণ বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে কিছু ফ্যামিলি ঘুরতে এসেছে। মেঘ সাধারণত বাচ্চাদের সামনে স্মোক করে না।

কী আর করবে? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের আঙুল মটকাতে মটকাতে দেখলো, বৃষ্টি একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। হাইটটা মনে থেকে যাওয়ার মতোই, তাই মনে আছে, সকালে ভূপাল স্টেশনে দেখেছিলো, টিকিট কাউন্টারের সামনে।


বৃষ্টি ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলতে বলতে, ডাইনে বাঁক নিলো। যেখানে মেঘ দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে তাকিয়েও যেন না দেখতে পাওয়ার মতো করেই বৃষ্টি ক্যামেরার ফোকাস ঠিক করতে করতে এগিয়ে গেলো। মেঘের ভালো লাগলো না। অজানা অচেনা জায়গায় অচেনা ছেলের সাথে এতো গল্প করার কি আছে? বৃষ্টির সবটাতেই বাড়াবাড়ি। আবার এগিয়ে গিয়ে যে ডেকে আনবে তাও পারছে না। মেঘের ভেতরে কি যেন একটা বাধা। থাকগে, দেখাই যাক না কি করে ভেবে, ওখানেই শিরিষ গাছটার ছায়ায় দাঁড়িয়ে রইলো। মেঘ ঘড়ি ব্যবহার করে না, আর মোবাইলও অফ রেখেছে, এখানে কোনো টাওয়ার নেই। মোবাইল অন করলে টাওয়ার লোকেট করতে করতেই পুরো ব্যাটারি চলে যাবে। মেঘের আন্দাজ ঘন্টাখানেকের বেশী হয়ে গেছে।


মেঘের আর আপাতত কিছু করার নেই, তাই বোকার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির অপেক্ষায় অন্যান্য ট্যুরিস্টদের দেখছে। অন্যমনস্ক হয়েই ছিলো, তাই খেয়াল করতে পারে নি মেঘ, বৃষ্টি কখন এসে সামনে দাঁড়িয়েছে। চমক ভাঙলো বৃষ্টির কথায়, "মিট মাই ফ্রেন্ড, মেঘ, ফ্রম কোলকাতা। মেঘ, হি ইজ রৌদ্র, রৌদ্র রয়, ফ্রম গৌহাটি। অ্যান্ড অরিজিনালি ফ্রম কোলকাতা, ভবানীপুর।" নমস্কার প্রতি নমস্কারের পালা শেষ করে মেঘ বললো, "চলা যাক এবার"।


ততক্ষণে মোহনও গাড়ি নিয়ে এসে পৌঁছে গেছে।

অশোককে কিছুতেই টাকা পয়সা নেওয়াতে পারলো না। মোহন বললো পরে ওকে দিয়ে দেবে। ফেরার পথ ধরেছে ওরা, এবারে রৌদ্রও ওদের সঙ্গী হোলো। বৃষ্টির হাবভাবে মনে হচ্ছে, যেন ওর কতোকালের চেনা রৌদ্র্য্।‌‍‍‍‍ ফেরার সময় রৌদ্রও ওদের সঙ্গে গাড়ীতে উঠে বসলো, বৃষ্টির আন্তরিক আমন্ত্রণে। রৌদ্র সামনে বসেছে, মেঘ আর বৃষ্টি পেছনে। গাড়ীতে উঠেই মেঘ কানে ইয়ারফোন গুঁজে মিউজিক অন করে দিলো। ভালো লাগছে না ওর একদম, এই রৌদ্র ছেলেটার ওদের সঙ্গে এরকম সেঁটে যাওয়া। বৃষ্টির সাথে কাজের দু-একটি কথা বলার ছিলো, হোলো না। থাক, হোটেলে ফিরেই বলবে।


মেঘ এমনিতেই গোনাগুন্তি কথা বলে। আজ তো আরো চুপচাপ। বৃষ্টি যেন মেঘকে খেয়ালই করছে না। ভূপাল শহরে ঢুকছে গাড়ি। মোহন জানতে চাইলো, রৌদ্র কোথায় নামবে? রৌদ্র স্টেশনের কাছে নামবে, রিলেটিভের বাড়ীতে উঠেছে, স্টেশনের কাছেই। অবশ্য মেঘ বৃষ্টির হোটেলটাও স্টেশনের কাছেই। রৌদ্র বিদায় নিলো, ওর নাকি পরদিন ভোরে ফ্লাইট, ব্যাঙ্গালোর যাবে কাজে, তারপর গৌহাটি ফিরবে, নেক্সট উইকে। বিদায় নিলো রৌদ্র। মেঘের মনে হোলো, বৃষ্টি যেন কীরকম একটু মুষড়ে পড়লো রৌদ্রের চলে যাওয়াতে।


এরমধ্যেই সন্ধ্যা নেমেছে, শহর ঝলমল করছে নিয়নের আলোয়। মেঘ আর বৃষ্টি খেতে ঢুকলো, ওদের হোটেলের রেস্টুরেন্টেই। সারাদিন বিশেষ কিছু খাওয়া হয় নি। খাবারের অর্ডার দিয়ে মেঘ ক্যামেরায় পরপর দরকারি শটগুলো দেখে নিয়ে, ওগুলোকে আলাদা ফাইলে করে ল্যাপটপে দিয়ে দিতে বললো। ক্যামেরা চেক করার সময় পরপর বেশ কয়েকটা শটে বৃষ্টি আর রৌদ্র। অন্যকেউ তুলে দিয়েছে বোঝাই যাচ্ছে। তবে একদিনেই এতোটা ঘনিষ্ঠতা? মেঘ সহজ ভাবে নিতে পারছে না কেন? এতো একদিন না একদিন হবারই ছিলো!


খেয়েদেয়ে মেঘ আর বৃষ্টি ওদের ঘরে চললো, ছ'তলায়। লিফটে উঠে পড়লো ওরা, আর কেউ নেই লিফটে। ছ'তলার সুইচ টিপলো, নো স্টপ সুইচ অন করে দিয়ে। বৃষ্টি বোধহয় কিছু বলবে বলে মুখ খুলতে যাচ্ছিলো, মেঘের দু'ঠোঁটের ফাঁকে তখন বৃষ্টির লিপস্টিক রাঙানো নরম ঠোঁটদুটো। লিফট মসৃণ গতিতে উঠছে ওপরে। থেমে গেছে লিফট। মেঘ বললো, "বৃষ্টি কখনো সারাজীবন মেঘের কাছে বাঁধা পড়ে থাকে না। মেঘের কোল থেকে ঝরে পড়াই বৃষ্টির ধর্ম। মেনে নিলাম সেটা।" লিফটের দরজা খুলে বেরিয়ে গেটটা টেনে বন্ধ করতে করতে মেঘ আবার বললো, "তোর এবার মুক্তি বৃষ্টি, মেঘের কাছ থেকে। যা এবার রৌদ্রের কাছে। খুশি ঝলমলে রামধনু ফুটিয়ে থাকিস। শেষ চুম্বন এটা," একটা কথাও বলে নি এতোক্ষণে বৃষ্টি।


কথা বলতে বলতে ওরা নিজেদের ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টি ব্যাগ থেকে চাবিটা বের করে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, "সবটাই তো একতরফা নিজের কথা বলে গেলে। আমার কথা তো শুনলেই না। যাক গে, পরে হবে ওসব কথা। এখন ফ্রেশ হয়ে ছবিগুলো আরেকবার সিলেক্ট করে দাও। কাজটা সেরেই রাখবো শোবার আগে।" তারপর খুব তাড়াতাড়ি দু'জনেই ফ্রেশ হয়ে নিলো। কাজে ডুবে গেছে তারপর।


রাত প্রায় বারোটা। ক্লান্তিতে ঘুম এসে গেছে, ল্যাপটপ শাট ডাউন করে চার্জে বসিয়ে শুয়ে পড়লো দু'জনেই, কিং সাইজ বেডটার মাঝখানে। অন্ধকার ঘরে বৃষ্টি ততক্ষণে জড়িয়ে ধরেছে মেঘকে। দু'বছরের সম্পর্কের মধ্যে এই প্রথমবার বৃষ্টি শরীরী খেলা শুরু করলো মেঘকে জড়িয়ে। আঠাশ বছরের মেঘ তেইশের বৃষ্টিকে গভীর আশ্লেষে জড়িয়ে বৃষ্টির আদরের প্রত্যুত্তর দিতে শুরু করলো। ফিসফিস করে বৃষ্টি বললো, "যেখানে মেঘ নেই, সেখানে বৃষ্টিও নেই। তুমি জানো না, রৌদ্রের ঝাঁঝে বৃষ্টি শুকিয়ে যায়? রৌদ্র জানে আমরা লেসবিয়ান কাপল, বন্ধু হয়ে থাকতেই পারে, আর গে'দের কাছ থেকে কোনো ভয় নেই, সেফ ফ্রেন্ডশিপ!" দু'জনেই হাসছে, আর হঠাৎ মেঘ "উঃ" করে চেঁচিয়ে উঠলো, "এতো জোরে কামড়াস না, ব্যথা লাগে না?" দুই লেসবিয়ানের শরীরের তলায় কুঁচকে যাচ্ছে তখন কিং সাইজ বেডের ধবধবে সাদা বেডশিটটা।


যেকোনো ভালোবাসায় ফিলিং অফ ইনসিকিওরিটি, বোধহয় ভালোবাসা বাড়িয়েই তোলে পক্ষান্তরে!! মেঘের সব অভিমান বৃষ্টি ধুয়ে দিয়েছে, নিজের ঝরে পড়ে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics