Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debdutta Banerjee

Drama Crime

2.7  

Debdutta Banerjee

Drama Crime

বিষে বিষক্ষয়

বিষে বিষক্ষয়

6 mins
2.4K



ঠান্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে এ বছর কলকাতায়। মাঠ পুকুরের ধারে ভাঙা কারখানার ছাউনিটার ভেতর জমিয়ে বসেছে ওরা তিনজন। ভিকু, পটাই আর কিরো। আজ মদনার বাংলা পাইটের সাথে ঢ‍্যামনা চাঁদনির বানানো মুরগির ছাটের চাট আর বিহারীর গাছ থেকে চুরি করা কচি শশা। আঃ , জমে ক্ষীর।

-''ধুর শালা... ঠান্ডাটা কমছেই না। '' ছোট করে জ্বালানো আগুনটায় শুকনো ঘাস গুজে দিয়ে কিরো বলে।

-'' ঠান্ডাটার মজা নে বে শালা, দশ মাস তো গরমেই সেদ্ধ হই আমরা এই কলকাতায়। এই কটা দিন তো ঠান্ডাটা পাই। বেশ একটা লন্ডন লন্ডন ফিলিং আসে এ সময়। '' বলেই একটা হিক্কা তোলে পটাই।

-'' ঠিক, এই ঠান্ডার একটা আলাদা মজা আছে। '' বোতলের শেষ টুকু গলায় ঢেলে ভিকু চোখ কচলে তাকায়। যাদবপুর স্টেশনের দিক থেকে মাঠ পুকুরের নির্জন রাস্তায় ওটা কে হে়ঁঁটে আসছে !! রাস্তার টিমটিমে আলোয় তো মালটা জম্পেস মনে হচ্ছে। জিব দিয়ে ঠোঁটটা চেটে একটা অদ্ভুত চুক চুক আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ও।

পটাই ওর দৃষ্টি বরাবর তাকিয়ে দেখে ফেলেছে ততক্ষনে। চুমকি বসানো শিফনের শাড়ি সামলে দ্রুত পায়ে হেঁটে আসছে মেয়েটা। নিস্তব্ধ শীতের রাতকে খানখান করে শেষ লোকাল ট্রেনটা চলে গেলো আপের দিকে। একটা কুকুর বিটকেল সুরে কেঁদে উঠল দূরে। গির্জার ঘড়িতে ঢং ঢং করে বারোটা ঘন্টা পড়ল। 

-''এবার বেশ গরম লাগছে শালা, আজ রাতটা বেশ যাবে ।'' পটাই উঠে পড়ে। 

-''কে বে মালটা? এতো রাতে .... খাল পারের মাগি গুলো নয় তো ?'' কিরো উঠে দাঁড়ায়। 

-'' চল, মোলাকাত হয়ে যাক। '' ভিকু এগোয় সবার আগে। 

হাল্কা কুয়াশার চাদর আর ল‍্যাম্প পোষ্টের হলদে আলোয় এক আলো আঁঁধারী পরিবেশ, মেয়েটা হাঁটছিল বেশ দ্রুত। কারখানার শেডের তলা থেকে আচমকা তিনটে অবয়ব এসে ঘিরে ফেলে ওকে। জোর করে মুখ চেপে ধরে নিয়ে যায় কারখানার ভেতর। মেয়েটা বুঝে যায় একা তিনজনকে বাঁধা দিতে পারবে না। চিৎকার করেও লাভ নেই। ওর ধারালো নোখ ঢুকে গেছে প্রথম জনের হাতে। আরেক জনকে এলোপাথাড়ি খামচায় সে। কিন্তু ওরা আজ যে সুযোগ পেয়েছে তা কি ছাড়া যায়!! অসম লড়াই চলতেই থাকে। 


******


শীতের সকালে ঘুম ভাঙ্গতে বেশ দেরি হয় দিতির। কড়া করে কফি বানিয়ে ব‍্যালকনির মিষ্টি রোদে এসে বসে পেপারটা নিয়ে। আজ বেরিয়েছে খবরটা। গতকাল মাঠপুকুরের কারখানায় তিনটে মাতালের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। মৃত‍্যু ঘিরে দানা বেঁধেছে রহস‍্য। মদ‍্যপ তিন যুবকের শরীরে মিলেছে কিছু মেয়েলি নখের আঁঁচড়। রক্তে পাওয়া গেছে চন্দ্রবোরার বিষ। অথচ শরীরে নেই দংশন চিহ্ন। প্রতিটা আঁচড়ে রয়েছে বিষের ছোবল। কোনো মহিলার নোখের আঁচড় বলছে ডাক্তার। সারা কলকাতা সরগরম।

ভেতরের পাতায় বড় করে বেরিয়েছে খবরটা। আগের দিন দুপুরে ডেডবডি পাওয়ার পর থেকে টিভি চ‍্যানেল গুলোয় শুরু হয়েছে চুল চেড়া বিশ্লেষন। মিডিয়া আততায়ীর নাম দিয়েছে কলকাতার নাগ কন‍্যা। ইতিমধ‍্যে দুই তান্ত্রিক গোষ্টি টিভিতে মুখ দেখিয়েছেন। একদল বলছে এটা এক ইচ্ছাধারি নাগিনের কাজ। এক দল বলছে নাগমনি চুরি ক‍রতে গেছিল ওরা তিনজন। ঐ কারখানায় নাগিন রয়েছে। 

আজ বেশ কয়েকটা চ‍্যানেলে নাগিনা টাইপ সিনেমা গুলো দেখাচ্ছে। জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। এর মধ‍্যেই এলো ব্রেকিং নিউজ। পাল পাড়ার কাছে আজ আবার দুটো মৃতদেহ পাওয়া গেছে একটা অটোর ভেতর। একজন চালক ও তার বন্ধু। অটোটা দক্ষিণ জলার ধারে পড়েছিল মাঝ রাত থেকে। পাশের ঝোপে দুপুরে বডি দুটো পাওয়া যায়। আবার নোখের আঁঁচড়। বিষ সেই চন্দ্রবোরার। 


খবর এখনের সুন্দরী সঞ্চালিকা মিতা রায় বলে চলেছেন -'' কলকাতায় রাতের বিভিষিকা নাগ কন‍্যা !! তবে কি মেয়েটি নিজের নোখে সাপের বিষ মেখে আসে ? নাকি কোনো বাঘ নোখ জাতীয় কিছু পরে? আপনাদের মতামত পাঠান আগামি তিন ঘন্টার ভেতর ৫৭৫৭৮ নম্বরে। আমরা বেছে নেবো লাকি তিনজন বিজয়ী কে। আপনাদের নিয়েই হবে আলোচনা কাল রাত আটটায়। নমস্কার , খবর এখন।''

রিমোট ঘুরিয়ে আরো দুটো চ‍্যানেল দেখে দিতি। 

বহুদিন পর গুনগুন করে গান গাইতে ইচ্ছা করছে। পুলিশ কুকুর ও ফেল। আততায়ী কফির প‍্যাকেট ছিড়ে কফি ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। সেই গন্ধে কুকুর দিশাহারা। 

টিভি অফ করে নেল রিমুভারটা দিয়ে নোখ পরিস্কার করে দিতি। তারপর সুন্দর তীক্ষ্ণ নোখে সুন্দর করে নেল পালিশ পরে আবার। শিল্পীর হাত। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিজেই নিজের হাত। 


****** 

এত রাতে বাইপাশে লিফট চাইছে মেয়েটা। গাড়ি থামিয়ে ওকে তুলে নেয় দুই বন্ধু জয় ও দীপন। মেয়েটা বেলেঘাটায় নামবে বলেছিল। কিন্তু গাড়ি বাসন্তি রোড ধরতেই পেছন থেকে মেয়েটা বলে -'' এ পথে কেনো যাচ্ছেন? ''

গাড়ি দাঁড় করিয়ে চকিত পিছনে চলে আসে জয়। দীপন বেশ আস্তে চালাচ্ছে। জয়ের অবাধ‍্য হাত খেলা করে অনিচ্ছুক মেয়েটার শরীরে। হঠাৎ ওর কন্ঠ নালি কামড়ে ধরে মেয়েটা। নখ বসে যায় ঘাড়ে। গাড়ি চালাতে চালাতে দীপনের শরীর অবশ হয়ে আসে। ঘাড়ে নোখের আঁঁচড় । গাড়িটা থামতেই গলায় বসে যায় নরম নখ। 


ভোরের প্রথম বাসে শহর কলকাতায় এসে ঢোকে দিতি। চোখে রাত জাগার ক্লান্তি। বাড়ি ফিরেই আগে উষ্ণ জলে স্নান করে ও। তারপর ছোট স্টোর রুমে ঢুকে ঝুড়িটা কোলে নেয়। ঢাকনা তুলতেই ওর প্রিয় পোষ‍্য চন্দ্রবোরাটা আদর করে চুমু খায়... ছোবল মারে হাতে। এ এক অন‍্য রকম ভালোবাসা। সাপটাকে আদর করে খেতে দিয়ে ও শুতে আসে। এখন গাঢ় ঘুম হবে বেশ।


******


ওরা পাঁচজন জোর করে ওকে টেনে নামিয়েছিল ট্রেন থেকে। কেউ বাঁধা দেয় নি। রেললাইনের পাথরের উপর ঘসটে ওকে নিয়ে নেমেছিল পাশের জমিতে। একে একে পাঁচ জন চালিয়েছিল অকথ‍্য অত‍্যাচার। রক্তাক্ত মেয়েটাকে ওখানে ফেলে চলে গেছিল কাপুরুষের দল। ভোর বেলা এক বেদেনীর দল ওকে খুঁজে পায়। থানা পুলিশ হলেও বাড়িতে আর ওর জায়গা হয় নি। শিক্ষিত মেয়েটার প্রথম দোষ ছিল শহর কলকাতায় চাকরি করতে যাওয়া, অর্থ উপার্জন, নিজের পায়ে দাঁড়ানো আধুনিক মেয়ের এটাই পরিনতি গ্ৰামের পাঁচজন রায় দিয়েছিল। জরিমানাও করেছিল কুড়ি হাজার। সেদিনের জটলায় পাঁচজনকেই দেখতে পেয়েছিল মেয়েটা। কিন্তু ওর কথা কেউ শোনে নি। 

বেদেনীরা কিন্তু অশিক্ষিত হয়েও ওর সাথে ছিল। ওদের ডেরায় ফিরেছিল সুস্থ হয়ে মেয়েটা। প্রাইভেট চাকরিটাও চলে গেছিল ততদিনে। শারীরিক যন্ত্রনার উপশম হলেও মানসিক যন্ত্রনাটা সহ‍্য করতে পারছিল না আর। বিষাক্ত চন্দ্রবোরাটাকে জড়িয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাতে গেছিল ও। কিন্তু বেদেনীদের দয়ায় এবারেও বেঁঁচে উঠেছিল। কিন্তু শাপে বরের মত শরীরে মিশে গেছিল সাপের বিষ। বেদে বৌ রোজ নিতো বিষের ছোবল। ভালো নেশা হয় ওতে। ওর থেকেই শিখেছিল বাকিটা। পুরোটাই প্র‍্যাকটিস। এখন ওর বেশ কয়েকটি পোষ‍্য হয়েছে। একটা হারানো সাহস ফিরে পেয়েছিল এক ধর্ষিতা মেয়ে। মেরুদন্ড শক্ত হয়ে উঠেছিল ওর। নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিল মেয়েটা। কলকাতাকেই বেছে নিয়েছিল ও। আবার চাকরির চেষ্টাও সফল হয়েছিল। আস্তে আস্তে পায়ের নিচের জমি শক্ত হয়েছিল। বিষকন‍্যা হয়ে সমাজের জঞ্জাল পরিস্কার করবে এই ছিল পন। বাকি মেয়েরা তো নিরাপদে থাকতে পারবে। 

যুদ্ধটা আজ ওর একার জন‍্য নয়, সমাজের জন‍্য। কিন্তু ও জয়ী হবেই ও জানে। হয়তো মুল স্রোতে আর ফেরা হবে না কখনো। তাই বালি থেকে বালিগঞ্জ, টালা থেকে টালিগঞ্জ, বারাসত থেকে বেহালা রাতের অন্ধকারে একাই ঘোরে ও শিকারের খোঁজে। কল্ললিনী তিলোত্তমা দিন দিন আয়তনে বাড়ছে, আর বাড়ছে এসব অপরাধ।

তবে ভয় পেয়েছে ওরা, আজকাল কোনো মেয়ে রাতে একা বের হলেও ভয় নেই। ধর্ষকরা ভয়ে সামনে আসে না। নিজের নোখ গুলোকে লাল রঙে রাঙিয়ে নেয় দিতি। দাঁত গুলোকে ঝকঝকে করে রোজ। 

লালাবাজারের দুঁঁদে পুলিশ অফিসার চ‍্যাটার্জীর হাতে বেশ কয়েকটা অস্ত্র রয়েছে। আধার কার্ডের দৌলতে দেশের সবার হাতের ছাপ এখন হাতের মুঠোয়। ছাপ মিলেছে যার সাথে সে এক ধর্ষিতা। একাই থাকে একটা ভাড়ার ফ্ল্যাটে। ফরেনসিক পরীক্ষায় দাঁতের দাগের সাথেও কিছু লালার নমুনা পাওয়া গেছে। মেয়েটা নিয়মিত সাপের বিষের নেশা করে চ‍্যাটার্জী জেনেছে সেখান থেকেই। তবে ওর কোনো তাড়া নেই। ধর্ষণ কমে গেছে মহানগরীতে। অপরাধ কমানোই তো আইনের মূল লক্ষ‍্য। ধীরে সুস্থে আইন আইনের পথে এগোক না। বিষকন‍্যা কলকাতাকে জঞ্জাল মুক্ত করুক। অতি সাধারণ মেয়েরাও এখন অপরাধীদের নোখ দেখাচ্ছে। বিষের ভয় দেখাচ্ছে। সবাই বড় বড় নখ রাখছে আজকাল। ভয় পাচ্ছে কাপুরুষের দল। সেদিন সান্ধ‍্য কলেজের বাইরে একটা ছেলেকে আঁঁচড়ে কামড়ে দিয়েছে একটি মেয়ে। ছেলেটা ভয়েই অজ্ঞান হয়ে গেছিল। হাসপাতালে বারবার বলছিল সাপের বিষ ঢুকেছে শরীরে। ওর ভুলটা ভাঙ্গতে দেয়নি পুলিশ। 

এবার প্রেস কনফারেন্সে ঠিক কি বলবে গুছিয়ে নেয় চ‍্যাটার্জী। ইচ্ছেধারী নাগিনের গল্পটা জমবে। নাগমনিটাও রাখতে হবে। আবার পুলিশ এসব মানে না বলতে হবে। যেভাবেই হোক এই মেয়েটিকে প্রোটেকশন দিতে হবে। ওকে ধরা ছোঁওয়ার বাইরে রাখতে হবে আপাতত। কাজটা করতেই হবে ঠিকঠাক। কলকাতাকে এভাবেই অপরাধের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama