Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Joy Mondal

Fantasy Thriller Children

4.0  

Joy Mondal

Fantasy Thriller Children

সোনার পাহাড়

সোনার পাহাড়

9 mins
789


          জয় মন্ডল


" খোকা ঘুমালো , পাড়া জুড়ালো

              বর্গী এল দেশে

    বুলবুলিতে ধান খেয়েছে  

         খাজনা দেবো কিসে!! " মায়ের কাছে ছড়া শুনতে শুনতে বছর সাতেকের ছোট্ট রনি ঘুমিয়ে পড়ল । মা তার কপালে একটা দীর্ঘ চুম্বন দিয়ে, গালে হাত বুলিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লেন। সকালে উঠে বাড়ির সব কাজের পাশাপাশি সরলা দেবীকে রনিকে রেডি করতে হয় স্কুলের জন্য ।" রনি ,বাবা খেয়ে নাও, স্কুলে যেতে দেরী হয়ে যাবে ; সায়ন, সোহোনরা সবাই চলে গেলো ,তাড়াতাড়ি খেয়ে নে"। রনি অর্থাৎ রনজয় মিত্র বিবেকানন্দ গ্রামীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে , ছাত্র হিসেবে স্যারেরা তাকে ভালোবাসে খুব।রোজ মার হাত ধরে ঘাসে ভরা সবুজ ধানক্ষেতের আল দিয়ে স্কুল যায় রনি। কত্ত বন্ধুর সাথে কথা বলে, গল্প করে, খেলা করে রনি । রোজ রাতেরবেলা রনি তার মাকে স্কুলের গল্প শোনায়। আর মাও অভূতপূর্ব দৃষ্টিতে ছেলের গল্প শুনেন। রনির বাবা খুব ভালো ছবি আঁকতেন,আর রনির মা লিখতেন ছোটদের জন্য গল্প। রনিও বাবা- মার গুণগুলি পেয়েছে। আজ রনির বাবা বেঁচে থাকলে তিনি সমস্ত কিছু ছেলেকে শেখাতেন। কিন্তু সরলা দেবী তার অভাব বুঝতে দেননি। ছেলের পড়াশোনা, খেলাধুলা, ছবি আঁকা সব কিছু সঙ্গী তিনি।প্রতিদিন ছেলেকে একটা করে নতুন নতুন গল্প শোনাতে হয় আর মন্ত্রমুগ্ধের মতো ছেলেও গল্প শুনে কৌতুক মনে প্রশ্ন করতে থাকে। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে, মুসলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হলো। দুজনেই ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরতেই, রনির নৌকা বানাবার কথা মনে পরল। আর ওমনি মা ছেলে খাতা নিয়ে বসে পড়ল নৌকা বানাতে; বৃষ্টি থামতেই তারা নদীর জলে নৌকাগুলোকে ভাসিয়ে দিলো। আর বলল আমার নৌকা ফিরে আসবে ,"সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে"; ঠিক আমার আঁকার খাতায় নৌকাগুলোর মতো। কোনদিন মায়ের সাথে লুকোচুরি খেলা তো কোনদিন মার সাথে রান্না করা, তো কোনদিন মা আমার লেখার গল্পের একমাত্র পাঠক হওয়া , এইভাবে চলতে থাকে রনির বর্ণময় জীবন। একদিন স্কুলে সায়নের একটা ভালো টিফিন বক্স দেখে, রনিরও ওমন টিফিন বক্স নিতে ইচ্ছে হলো, কিন্তু সে মাকে বলল না ,নিজের আঁকার খাতার শেষে লিখে রাখলো। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রনি অবাক! এ কি দেখছে সে! তার আঁকার খাতার উপরে একটা নতুন টিফিন বক্স রাখা।ঢুলু ঢুলু চোখে সে মা মা বলে চিৎকার করে উঠলো।মা দেখো আমার নতুন টিফিন বক্স ।কিন্তু এটা কি করে এলো ?" হ্যাঁ তাইতো এটা তো আমি কিনিনি। তবে হয়তো সন্টাক্লোজ দিয়ে গেছে।রনির আজ আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায়। এইভাবে রনি মাঝে মাঝেই তার আঁকার খাতায় কখনো ব্যাট, বল কখনো রংপেন্সিল ,কখনো খেলনা,তার যা যা পেতে চাইবার ইচ্ছে হতো লিখে রাখত। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার প্রতিবার সেই আঁকার খাতার উপরে আগের দিনের লেখা জিনিস গুলো আবিষ্কার করতো। একদিন বিকেলে বসে গল্পের বই পড়তে পড়তে হঠাৎ বারান্দা দিয়ে একদল ছেলে সাইকেল নিয়ে যেতে দেখে তার সাইকেল চাপার ইচ্ছে হলো; তাই সে নির্দ্বিধায় আঁকার খাতায় লিখে রাখলো সেটা। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই তার চোখ ছল ছল করতে থাকে, কাঁদতে শুরু করে দেয় রনি ।মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে স্যান্টাক্লোজ আজ আমাকে সাইকেল দিল না। কেন মা আমাকে আজ গিফট দিল না? মুচকি হেসে মা উত্তর দিলেন ," দুষ্টু বদমাইশি ছেলেদের স্যান্টাক্লোজ সবসময় গিফট দেয় না, তুমি ভালো করে পড়াশোনা করো আবার দেখবে স্যান্টাক্লোজ তোমাকে গিফট দেবে"। রনির মা সামান্য টাইপরাইটারের কাজ করেন যা যা রোজগার হয় তাতে কোনরকমে সংসার চলে কিন্তু সাইকেল কিনে দেওয়ার মত পয়সা তার নেই ,ছেলের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ তিনি এই কথা ভেবে তিনি কষ্টে ভেঙ্গে পড়েন কিন্তু এটা ভেবে তিনি নিশ্চিন্ত হন যে রনিকে তার সমস্ত টুকু দিয়ে তিনি মানুষ করবেন।রনির মন ভারাক্রান্তআজ, তাই তার মা গল্প শোনাতে থাকেন। সারা বিকাল ধরে গল্পের আসর চলতে থাকে ,অজস্র প্রশ্নোত্তরপর্ব হয় তাদের দুজনের মধ্যে। রাতের বেলা মায়ের পাশে ঘুমাতে ঘুমাতে পারোনি বলে মা সত্যিই যাবেতো সোনার পাহাড় দেখতে!, "হুম যাবো তো সোনার পাহাড় দেখতে"। একদিন তারা সত্যি সত্যি গল্পে বর্ণিত সোনার পাহাড় এর খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। রনির মনে আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায় ,তার কত আনন্দ হচ্ছে সে সোনার পাহাড় দেখবে সে সোনার দেশে যাবে। কত গাড়ি ঘোড়া চেপে তারা পৌঁছলো একটা জঙ্গলের সম্মুখে; সরলা দেবী বলে উঠলেন আর এখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে সোনার পাহাড়।কিন্তু হায়! তাদেরকে কারা যেন ঘিরে ফেলেছে ,ব্যাগপত্র সবকিছু টেনে নিচ্ছে, আর ধস্তাধস্তিতে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়লেন সরলা দেবী ও রনি। সম্বিৎ ফেরার পর সরলা দেবী নিজেকে আবিষ্কার করলেন একটি হসপিটালে।কোনো এক ব্যাক্তি তাদেরকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে , হসপিটালে ভর্তি করেন।রনি ও তার মায়ের আর সোনার পাহাড় দেখা হলো না ;সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল ,সেই দিন থেকে রনি প্রতিজ্ঞা করল সে আজ সোনার পাহাড় যাবে না।গ্রামের স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর রনি পড়বার জন্য যে সুদূর কলকাতায় সেখান থেকে ডাক্তারি পাশ করে হয়ে ওঠা একজন সুদক্ষ চিকিৎসাবিদ। গ্রাম থেকে মাকে নিয়ে চলে আসে শহরে। আজকে চিকিৎসক রনি অর্থাৎ রনজয় মিত্র এবং সরলা মিত্র থাকেন একটি ফ্ল্যাটে। কিন্তু ছেলে- মায়ের মধ্যে সেই আগের খুনসুটিটা কিঞ্চিৎ । রনি সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকে। সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে প্রায় এক বছর হলো। বৃদ্ধ শাশুড়ি মায়ের দেখাশোনাতে গররাজি রনজয় মিত্রের স্ত্রী অঙ্কিতা মিত্রর। সে না দেখতে পারে মায়ের উপেক্ষা, না ফেলতে পারে বউয়ের কথা। তাই বাধ্য হয়ে আলাদা একটি ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করলো তারা দুজন। মার জন্য একটা অলটাইম কেয়ারটেকার রাখা হলো। এখন বুড়ির সবসময়ের সঙ্গী কেয়ারটেকার রুম্পা, রুম্পা ঠাম্মির সাথে সমস্ত কথা বলে। বয়সের ভারে ও নিজের ছেলে-বৌমার দায় বদ্ধতা দেখতে দেখতে একটু খিটখিটে স্বভাবের হয়ে গেছেন বছর ষাটের বৃদ্ধা সরলা দেবী। বাতের ব্যথা ও সুগার কষ্ট দেয় তাকে। নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। মাঝে মাঝে রনি দেখা করতে গেলেও এক-আধ বার দেখা করতে আসে তার স্ত্রী। ছেলে বৌমা অবশ্য প্রায় প্রতিদিনই মার খবর নেয়। কিন্তু সরলা দেবী খুব একটা কথা বলতে চান না ফোনে।আগে যেমন রনজয় সরলা দেবীর কোন কথা শুনতো না ঠিক তেমনেই রনজয় আর অঙ্কিতার কথা এখন বৃদ্ধা শোনেন না। সবকিছুতেই না বলে দেন। এই ভাবেই একটা অতৃপ্তিপূর্ণ ও শূন্যতায় ভরা জীবন অতিবাহিত করছিল রনি। কিন্তু একটা ঘটনা রনির জীবনে টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠে।


"ঠাম্মা ও ঠাম্মা রনি দাদাবাবু কিন্তু আপনাকে প্রতিদিন বিকেলবেলা একটু পার্কে ঘুরতে যেতে বলেছে" রুম্পা বলে উঠলো।

- "তুই ছাড় তোদের কথা আমি ওসব কোথাও যাবো না" 

- "তা যাবে কেনো! সবকিছুতেই না!! আর সব সময় আমাকে জবাবদিহি করতে হয় " সুর টেনে টেনে বলল রুম্পা।

- "সে তোর দরকার নাহলে তুই কাজ ছেড়ে দিগে যা।"

" এই বুড়িকে সত্যিই কিছু বলে লাভ নেই" একটা হতাশার সুর রুম্পার মুখে। 

"আচ্ছা চল আজ ঘুরে আসি"।

সমস্বরে হেসে বলে উঠলো রুম্পা " "চলো তবে"। 

পার্কে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ সরলা দেবী একটা ছেলেকে দেখতে পায়, ছেলেটা পড়ে গেছে, পায়ে চোট লেগেছে ভীষন কাদঁছে। কাউকে দেখতে না পেয়ে তিনি ছেলেটাকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে দেন ওষুধ, মলম ,ব্যান্ডেজ লাগিয়ে শুশ্রূষা করলেন। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ ।ভদ্রলোক বলে উঠলেন "বিট্টু কে কি আপনি এনেছেন?"

হ্যাঁ , ও পরে গিয়েছিল ফাস্টেড দিয়ে দিয়েছি। ভদ্রলোক একটা অনাথ আশ্রম চালান ,ফ্ল্যাট থেকে মিনিট পাঁচেক দূরে।। নাম ঠিকানা সবই দিলেন। বৃদ্ধাকে একটা আর্জি জানান ভদ্রলোকটি , বিট্টু খুবই রুগ্ন, ওর হার্টের ব্যামো আছে।তাই ও যদি আপনার কাছে প্রতিদিন কিছুক্ষণ থাকে ;খুব কি অসুবিধা হবে আপনার? , নতুন মানুষ পেয়ে আনন্দই হবে বিট্টুর। কিছুক্ষণ ভাবার পর সরলা দেবী রাজি হয়ে গেলেন। সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত থাকে বিট্টু সরলা দেবীর কাছে।কিন্তু রুম্পার কাছ থেকে সমস্ত কিছু জানবার পর তীব্র আপত্তি জানাতে থাকে অঙ্কিতা ও রনি; তাদের কথায় কর্ণপাত করেন না, সরলা দেবী। বিট্টুর সাথে খেলতে থাকেন ,কথা বলতে থাকেন,মজা করতে থাকেন ,সরলা দেবী; যেন একটা একাকীত্ব এতদিন ধরে সরলা দেবী কে গ্রাস করেছিল সেটা হঠাৎই আস্তে আস্তে কাটতে শুরু করলো। প্রতিমুহূর্তে তার রনির স্মৃতি উদ্ভাসিত হতে থাকলো মনের মধ্যে। বারবার মনটা ব্যাকুল হতে চাইল, ফিরে যেতে চাইলো সেই আগের দিনগুলোর কাছে। কিন্তু রনি তার কোন শখ আহ্লাদ পূরণ তো দূরের কথা শুধুমাত্র খবরটুকু নিয়ে দায়ভার শেষ করে দিয়েছে ।মাকে নিয়ে যেন তারা কোনো স্বপ্ন নেই!!! এই সব কথাগুলো মনে পড়লে বুকের ভেতরটা হাঁসফাঁস করে ওঠে। কিন্তু তাতে কি! বিট্টু তো আছে ।

একদিন বিট্টু ঘরেতে খেলতে খেলতে হঠাৎই খাটের তলা দিয়ে একটা বক্স দেখতে পায়। সভাপতি কৌতুহলী মনে বক্সটা বের করে খোলে। অসংখ্য খাতা দেখতে পায় সে। একটা একটা করে পাতা উল্টাতে থাকে আর দেখতে থাকে আঁকা ছবি। কি সুন্দর ছবি,একটুও এরকম ছবি আঁকতে পারে তারও আঁকার খাতা আছে। এবার বিট্টুর নজর গেল গল্পের খাতার দিকে। হঠাৎই কানটা ধরে টান দিতেই "আর করব না, আর করব না বলে" চেচিয়ে উঠলো বিট্টু।

"না বলে হাত দিয়েছিস কেন?"গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলেন সরলা দেবী।"এগুলো কি তোমার ছেলের আঁকার খাতা! যার কথা তুমি আমাকে মাঝে মাঝে বলতে! আর এই গল্পের খাতাগুলো কার! তোমার ছেলেরই বুঝি!

-" না", ওটা আমার লেখা অপ্রকাশিত ছোটগল্প।" বুড়ি আমায় গল্প শোনাবে? আমার না গল্প শুনতে দারুন লাগে"। ঠিক বিট্টুর মত রনিরও গল্প শুনতে খুব ভাল লাগত। "কবে ওকে শেষ গল্প শুনিয়েছে গিয়ে কে যানে"। মনে মনে ভাবলেন সরলা দেবী।

" আচ্ছা বারান্দায় গিয়ে বস গল্প শোনাবো।" আরম্ভ করলেন সেই সোনার পাহাড় এর গল্প। যে যে গল্পের রিয়েল এডভেঞ্চারটাই মাঝপথে গিয়ে থেমে গিয়েছিল। দ্বিধাহীন মনে বলেচললেন গল্প আর মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে লাগলো ছোট্ট বিট্টু। গল্প শোনার পর বিট্টু বলে উঠল- "বুড়ি আমাকে সোনার পাহাড় নিয়ে যাবি"। হঠাৎ শরীরে একঝলক বিদ্যুৎ খেলে গেল সরলা দেবীর। সোনার পাহাড়ে তো শুধুমাত্র তার আর রনির যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল, কিন্তু রনি প্রমিস করেছিল সে বড় হবার পর আবার সোনার পাহাড় যাবে, সোনার পাহাড়ে গিয়ে গল্পটার শেষাংশ লিখবে। কিন্তু রনি ভুলে গেছে সোনার পাহাড় এর কথা তার স্বপ্ন ,তারা মায়ের স্বপ্ন ভুলে গেছে ;সত্যিই ভুলে গেছে । রাতে অনেক ভাবনা চিন্তা করে ঘুমালো সরলা দেবী।সকালে উঠে রুম্পাকে এক সপ্তাহ ছুটি দিয়ে দিছে দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিল। সরলা দেবীর ফ্ল্যাটের 17 নম্বর ফ্লোরে তার বাল্যবন্ধু থাকতো। কিন্তু সেও পেশায় একজন চিকিৎসক তাই সব সময় ফ্ল্যাটে থাকে না। তাকে ফোন করে সে ফ্লাইট এর টিকিট বুক করতে বললো। বিট্টু ঘরে আসতেই তাকে এক সপ্তাহের জন্য ঘুরতে নিয়ে যাব বলে রাজি করালো তার বিক্রম দাকে। ব্যাস এবার রওনা দিল দুজনে সোনার পাহাড় এর উদ্দেশ্যে।

এদিকে সরলা দেবী আর রুম্পাকে দেখতে না পেয়ে রনি ও অঙ্কিতা দুজনই আতঙ্কিত। অনেকক্ষণ পর রুমার ফোনে লাইন পেয়ে ঘটনাটা জানতে পারল। শুধু বলল" ঠাম্মি আর বিট্টু সোনার পাহাড় দেখতে গেছে" । কথাটা শুনে চমকে উঠলো রনি ।সোনার পাহাড়! কোন সোনার পাহাড়! তার ছোটবেলার মার গল্প লেখা সোনার পাহাড়!। তোমারা ওখানে কেন?

চলো অঙ্কিতা আর দেরি করলে চলবে না, আমাদের এক্ষুনি রওনা দিতে হবে। রনি অঙ্কিতা দুজনে রওনা দেয় সুদূর পাহাড়ের দেশে। সৌভাগ্যক্রমে বিট্টু ও সরলা দেবীর হোটেলেই রনি অঙ্কিতা উঠলো। কিন্তু কোনো কথা বললেন না সরলা দেবী। শুধু বললেন যা করেছি নিজের ইচ্ছেই করেছি, বেশ করেছি। দুদিন বিট্টু কে নিয়ে ভ্রমণ করেন পাহাড় দেশ। আজ সকালে দৃপ্ত দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে সুবর্ণ সোনালী কাঞ্চনজঙ্ঘা। বিট্টু সোনার পাহাড় সরলা দেবীর গল্পের সোনার পাহাড়। সোনার পাহাড় এর ছবি আঁকতে শুরু করল সরলা দেবী তার গল্পের শেষ অংশ লিখতে আরম্ভ করলেন। হঠাৎ হাজির রনি মার ঘরে।

কান্নায় ভেঙে পড়ল সে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো- "মা তোমার তো আমার সাথে সোনার পাহাড় যাওয়ার কথা ছিল তবে অন্য কেউ কেন?, মা তোমার কি মনে নেই আমাদের সোনার পাহাড় যাবার পথ মাঝখানে থেমে গিয়েছিলো। মা তুমি আমাকে না নিয়ে আসতে পারলে সোনার পাহাড়ে, আমাকে ছাড়াই গল্পের শেষাংশ লিখছো!" আমাকে কি ক্ষমা করতে পারো না? সরলা দেবী আর চুপ করে থাকতে পারলেন না, অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন কাছে আয়, হাতদুটো এগিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন সেই আগের মতো ছোট্ট রনিকে।"আমার খুব ভুল হয়ে গেছে মা, আমায় ক্ষমা করে দাও; আমি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি , আমি ভিতরে ভিতরে একটা অতৃপ্তির আগুনে জ্বলে মরতাম নিজেকে ঠিক করতে পারতাম না। কেন জানিনা মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থেকে গেলাম। অনেক ঔদ্ধত্য চলে এসেছিল মনে। আমি তোমাকে সেই আগের মতোই খুব খুব ভালোবাসি। " আদর করে একটা দীর্ঘ চুমু খান কপালে , সাথে বিট্টু কেও আদর করে দেন সরলা দেবী। ঘরের মধ্যে না থাকলেও দরজা থেকে সবকিছুই শুনেছে ও দেখেছে অঙ্কিতা। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সখা তরে শাশুড়ি মার থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয় অঙ্কিতা এবং মাতৃস্নেহ উপভোগ করতে থাকে। আজ সরলা দেবীর দুই ছেলে ও এক পুত্রবধূ। সবাইকে সাথে নিয়ে সোনার পাহাড় গল্পের শেষ অংশ সমাপ্ত করলেন সরলা দেবী ।আর মনে মনে ভাবলেন কে জানতো এত সবাই সোনার পাহাড়ের প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে যাবে।


সত্যিই মার ভালোবাসার,মার স্নেহের জয় হলো আজ ।মাছ যেমন জল ছাড়া নিষ্প্রাণ তেমনি সন্তান মাতৃস্নেহ ছাড়া অসহায়। তাই সব সন্তানদেরই এই সম্পদ আগলে রাখতে হয়।


           সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy