Joy Mondal

Abstract Children Stories Children

4.0  

Joy Mondal

Abstract Children Stories Children

গ্রীষ্মে মামাবাড়িতে সোমনাথ

গ্রীষ্মে মামাবাড়িতে সোমনাথ

6 mins
251



 মা! ও মা! ফ্যানটা একটু চালিয়ে দিয়ে যাও। সকাল থেকেই আজ টেম্পারেচারটা খুব বেশি,  গা দিয়ে কি ঘাম দিচ্ছে । 


" তুই ফ্যানটা চালিয়ে নে বাবু ; আমার হাত জোড়া এখন ,একটু পর পাতিলেবুর শরবত করে আনছি"। উফ্ মা হাতে ঠান্ডা লেবুর শরবত! পুরো জমে যাবে । কিছুক্ষন পর শরবত খেয়ে সোমনাথ মাকে জিজ্ঞাসা করলো- " মা মামার বাড়ি যাবো , সেই কতদিন আগে মামার বাড়ি গিয়েছিলাম ,মনে হয় ওখানকার সবকিছু ভুলেই গেছি ! চলো না মা , তুমি কিন্তু প্রমিস করেছিলে মাধ্যমিকে আমি ভালো নম্বর পেলে মামাবাড়ি গিয়ে সবার সাথে দীঘা বেড়াতে যাবো । প্লিজ !প্লিজ !প্লিজ!"। হ্যাঁ ,এখন যাওয়াই যায় মামাবাড়ি , তোর স্কুলেরও ছুটি এখন ; ঠিক আছে তোর বাবার সাথে কথা বলে কিছু দিনের জন্য ঘুরে আসবো। তবে এখন দীঘা নয় ,দাদু - দিদার শরীরটা ভালো নেই আর তোর মামার চাষবাস ও আছে । মার কাছ থেকে মামা বাড়ি যাবার অনুমতি পেয়েই সোমনাথ দৌড়ে পড়ার ঘরে থেকে একটা খাতা পেন নিয়ে দুতলার ঘরে চলে গেল ,আজ সোমনাথের যেন সবথেকে আনন্দের দিন , সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না । এখন সে খাতায় লিস্ট করবে কালকের জন্য সে কি কি নিয়ে যাবে । সোমনাথের মা অনিথা দেবী সোমনাথের বাবার থেকে সম্মতি নিয়ে কালকে যাবার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিলো । সোমনাথের বাবার অফিসের কাজের জন্য যেতে পারবে না । সোমনাথ আনন্দর চটে রাতে আর পড়তেই বসলো না , সে অবশ্য মার কাছে মামার ছেলে, মেয়েদের  জন্য কি কি গিফট্ নিয়ে যাবে আগে থেকে বলেদিল ,নাহলে আবার মার কাছে ব্যাগ ভারীর জন্য ধমক খেতে হবে। একটু তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে ঘুমাতে গেল সোমনাথ ,কিছুতেই তার ঘুম আসছে না ; আগেরবারের স্মৃতি বিজড়িত দৃশ্য গুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল। 


খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে মার সাথে ব্যাগপত্র নিয়ে রুইপুর স্টেশনে ট্রেন ধরে কুসুমপুররের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি । আপন ছন্দে ট্রেন চলতে থাকে, জানালার পাশে বসে একমনে ওপরের ধুধু সবুজ প্রান্তর ,সেখানে কত ধানের জমি ,কত গরু ,ছাগল বাধা আছে ,কত ডোবা, কত কুড়ে ঘর দেখতে থাকে সোমনাথ । জানালার হওয়ায় মাথার চুল উড়তে থাকে , ট্রেনে কত কি খাবার উঠছে কিন্তু সোমনাথের সেদিকে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই ।সে মনে মনে ভাবছে রুম্পদি , বিষু মামা , বুবাইদা আর ছোটনকে ট্রেনে করে মামাবাড়ি যাবার গল্প শুনাবে । আনিথা দেবী তার বোনপো- বোনঝিদের জন্য অনেক কিছু কিনলো । " বাবু তুই কিছু কিনবি ? " কথা টা শুনে এতক্ষণ জানলার দিকে হা করে থাকা সোমনাথ তাকালো এবং কিছু লাগবে না তার জানিয়ে তৎক্ষণাৎ পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেল। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ট্রেন সফর এর পর তারা কুসুমপুর স্টেশনে আসলো। এখান থেকে প্রায় আধঘন্টা ৺হাটা পথ । সোমনাথ বলল , " মা চলো না ,ওই গরুর গাড়িটা করে যাই " , হ্যাঁ তাই চল । গাড়িতে চেপে একবার এদিকে আরেকবার ওদিকে নড়ে নড়ে সোমনাথ একগাল হাসি নিয়ে মার সাথে মামাবাড়ি যেতে লাগলো। খামারে রুম্পাদি আর বিষু মামাকে দেখেই তরাং করে লাফিয়ে নামলো সোমনাথ ।" আরে করিস কি , গাড়িটা থামুক না তারপর নামবি , গেলিতো পরে" ।" আরে থাক থাক আর বকিস না " মামা সমস্বরে বলে উঠল। নিচু হয়ে হাঁটুতে ধুলো ঝেড়ে দিতে দিতে " সোম বাবু কেমন আছো গো , কত দিন পর এখানে এলে ,কত্ত বড় হয়েগেছে ছেলেটা "। মামার গলা ধরে উঠে কোলে চাপলো সোমনাথ , অনিথা রুম্পাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো । সবাই কত আনন্দ করে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে গল্প আরম্ভ করে দিলো ।


 বুবাই দা ও ছোটনের সাথে সোমনাথ মাঠির ঘরের দুতলায় যায় । সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে দেখেপায় উপর দিকটা হালকা অন্ধকার , দাদার সাথে হাত ধরে আস্তে আস্তে উপরে উঠে বসে পড়লো । সোমনাথ আর তস সইছে না যেন; সে ছোটন, রাম্পদি আর বুবাইদার জন্য কত কি এনেছে সেগুলো দেখতে লাগল । 


 এই গ্রীষ্ম কালে দুপুরবেলায় দুর্ধর্ষ হওয়ায় খাটিয়ার শুয়ে ঘুম চলে এলো সোম বাবুর । ঘুমিয়ে উঠে দাদা দিদি দের সাথে নদী দেখতে গেল । নদীর নাম কুসুমকুমারী । নদীর ধারে বসে তারা একসাথে গল্প করতে থাকে আর জলে পা ডুবিয়ে নদীর স্রোত অনুভব করতে থাকে সবাই । কি বিস্তৃণ নদী , স্বচ্ছ কাঁচের মতো ঠান্ডা জল । সোমনাথ বলেই দিলো কাল আমি নদীতে স্নান করবই তোমাদের সাথে । রাতের বেলা লন্ঠন আর হারিকেনের আলোতে আজকের নদীটার ছবি আঁকতে লাগলো সোমনাথ , ছোটন ও বলে উঠলো দাদা আমিও ছবি আঁকতে পারি ,আমারও পেন্সিল রাবার আছে । কিন্তু এই এতো গুলো রং , কি সুন্দর না দাদা!  


 রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও সোমনাথ তখনও জেগে আছে , সে শুধু উপলব্ধি করছে ; সত্যিই কোথায় গ্রাম আর কোথায় শহর । কি নিস্তব্ধতা ! কি সুন্দর চাঁদের জোৎস্নার আবরণের মধ্যে কত গুলো তাল গাছ দাড়িয়ে আছে , পাতাগুলোর খরমর শব্দ হচ্ছে ঝোড়ো হাওয়াতে। মাঝে মাঝে প্যাঁচার ডাক শোনা যাচ্ছে । এই ভাবেই আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ল সোমনাথ। 


সকালে ঘুম ভাঙল পাখির ডাকে । কিছুক্ষন মন্ত্রমু্গ্ধের মতো পাখির সুরেলা রঙিন সুরে নিজেকে ভাসালো । আজ দাদা দিদি আর ছোটনদের সাথে মাঠে যাবে সোমনাথ । বোরো ধানের জমিতে নদী থেকে মেশিনে জল দিচ্ছে মামা । সোমনাথ এর কাদা মাটি ভীষণ প্রিয় । তার মনে পড়ে গেল আগের বারের মাটির সবাই মিকে দুর্গা ঠাকুর টা ভালো বানাতে পারেনি । আজ সেই সুযোগ সমুক্ষে তার। নদী থেকে এঁটেল কাদা সংগ্রহ করে তারা। বুবাই দাদা সোমনাথ একটা শশার থেকে একটু বড় ফল দিলো বাড়িতে গিয়ে সবাই মিলে খাবো । কি অনবদ্য খেতে ! গুড় দিয়ে খেতে হয় ,জানতে পারলাম এর নাম - 'ফুটি ' শুধুমাত্র গ্রীষ্ম কালেই হয় । এবার তারা মাটি দিয়ে প্রতিমা করতে শুরু করে । নদীতে

 স্নান করতে যাবার আগে খোকন জেটুর বাড়ির পাশে ঢিল নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আম গাছে ছুরছিলাম , আম ও পাই অনেক গুলো । গ্রীষ্মের রোদে নদীর জল চকমক করছে , নদীতে নেমে কত দিনের সেই সাধ ,আল্লাধ মিটলো ,কত বার যে ঝাঁপ দিয়েছি নদীর জলে তার কাউন্টিং করাই হয়নি । 


বিকাল বেলায় পড়ন্ত রোদে জলের উপর নিজের ছায়াটা বহুদূর গেছে , যেন আমাকে নড়িয়ে দিচ্ছে বারবার ।পাখিগুলো বাড়ির অভিমুখে উড়ে যাচ্ছে ,আর আমি একরাশ নিঃশ্বাস নিয়ে গ্রীষ্মে গ্রামের একটা রোমহর্ষক , অন্তঃদীপ্ত সৌন্দর্য দেখতে থাকি । রাতের বেলা ঘুমাতে গিয়ে সে প্রতিবার অনুভব করেছে একটা অসম্ভব উদ্দীপনা ঠিক আগের বারের মত , যেন আরো বেশি । আগের বার আম পাড়তে যাওয়া আর আজ যাওয়া , আগের বার নদীতে স্নান করা ,নদী বক্ষে ঘোরা আর আজকের ঘোরার মধ্যে সে কোনো পার্থক্য খুজে পাচ্ছে না । এ যেন সেই ছোটো বেলাতে ফিরে যাওয়া , নদী ,মাটির গন্ধ যেন তার বাঁচবার রসদ । তার মন যেন সারা জীবন এর জন্য এখানে থাকতে চাইছে । শহরের বাতাসটা খুব খারাপ , এত শব্দ , এত দূষণ, আর এখানের পরিবেশ সে মুখে বলে প্রকাশ করতে পারবে না । দেখতে দেখতে একসপ্তাহ কেটে গেল সোমনাথের মামাবাড়ির সফর । এবার তাকে ফিরতে হবে ,,,,কিন্তু এই সবকটা দিন আবার তার কাছে প্রতি রাতের বর্নময় স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে । 


আজ দুদিন হলো সোমনাথ নিজের বাড়িতে ; এখনও তার মন ভারাক্রান্ত । এতক্ষণ সে তার ডায়রি তে গ্রামের অভিজ্ঞতা লিখছিল। চলে আসার আগে রুম্পা দি ,বুবাই দাদা,ছোটনকে নিয়ে মাটির দুর্গা ঠাকুর টা আগের থেকে অনেক ভালো বানিয়েছে এবারে । ছোটনকে তার রং গুলো আর আঁকার খাতাটা দিয়ে এসেছে ।আর বলেছে," ছোটন পরেরবার যখন আসবো বাকি খাতা গুলোতে গ্রামের সবকিছুর ছবি এঁকে রাখিস " । একরাশ ভালবাসা তোদের জন্য । 

সত্যিই আবার যেন পরের গ্রীষ্মে মামাবাড়ি যেতে পারি ঠাকুর ! দেখো একটু। 

    


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract