Sandip Chakraborty

Romance Tragedy

3  

Sandip Chakraborty

Romance Tragedy

তুঁহু মম/৪

তুঁহু মম/৪

3 mins
182



রাখিগঢ়ি

হরিয়ানা

কুমুদিনী,

ইনবক্সে তোমার মেইল এসে জমা হলে সাধারণত আমার মন আশ্চর্য এক খুশিতে ভরে যায়। দেরি না করে আমি পড়তে শুরু করি। কালও তাই করেছিলাম। কিন্তু পড়ার পর মনটা কেমন যেন থমকে গেল। সেই থমকানো মন নিয়েই রাতে শুয়ে পড়েছিলাম। তারপর আজ সকালে পাখিদের কিচিরমিচিরের মধ্যে বারান্দায় বসে আছি। দূরে অনেকখানি খোলা আকাশ। প্রচণ্ড রোদ্দুরে চকচক করছে রাখিগঢ়ির ডিগিং সাইট। চারিদিকে প্রাচীন ইটের স্তূপ। সাত হাজার বছর আগে এখানে একটা সমৃদ্ধ শহর ছিল। যেসব ফসিল পাওয়া গেছে তার কার্বন ডেটিং টেস্ট করে সময়টা জানতে পেরেছি। এই মানুষগুলোর কথা ভাবলে অবাক হতে হয়। বিশেষ করে একটি পরিবারের কথা ভাবলে। একজন নারী, একজন পুরুষ আর দুটি বাচ্চা। মেয়েটি তার প্রিয় মানুষটির হাত ধরে বসে আছে। বাচ্চাদুটিও। ওরাও নিশ্চয়ই ভালোবেসেছিল। হয়তো অপেক্ষা করছিল পরের দিনটির জন্য। আরও সুন্দর একটি জীবনের জন্য। মৃত্য হয়তো হঠাৎই এসেছিল। ওরা বুঝতে পারেনি। কিংবা, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ভালোবাসার উষ্ণতায় শেষবারের মতো ডুবে গিয়েছিল ওরা।

আমি জানি তুমি খুব অবাক হচ্ছ। হয়তো ভাবছ এসব কথা আমি তোমায় কেন লিখছি। আসলে তোমার মেইলটা পড়ার পর থেকেই ওই পরিবারটির কথা মনে পড়ছে। ছেলেটির সঙ্গে খুব সহজেই আমি নিজেকে রিলেট করতে পারছি। কিন্তু মেয়েটির জায়গায় তোমাকে আনলেই অবসাদে ভরে যাচ্ছে আমার মন। জন্মান্তরবাদ সম্বন্ধে আমার কোনও ধারণা নেই। কোনওদিন সিরিয়াসলি চর্চা করিনি। তবুও কেন জানি না মনে হচ্ছে ওই ছেলেটা হয়তো আমিই ছিলাম। কিন্তু ওই মেয়েটা তুমি ছিলে না। ওখানে অন্য কেউ ছিল। যে ছিল তাকে আমি চিনি। এই জীবনেও তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমার ঘরবার সব ঝাপসা করে দিয়ে সে চলে গেছে তিন বছর আগে। সবাই বলবে এখন আমার জীবনে সে আর নেই। কিন্তু তার দেওয়া আঘাতের অন্ধকার আছে। আর আছে আমার ব্যর্থতার বোধ, হতাশা এবং তীব্র অবসাদ। মাঝে মাঝে নিজের জন্য ভারী দুঃখ হয়। কর্মজীবনের মতো সংসার-জীবনেও ফসিল না-পেরিয়ে, ধ্বংসস্তূপ না-পেরিয়ে আমি কোনওদিন কোনও সত্যে পৌঁছতে পারলাম না।

না, আর তোমাকে হেঁয়ালির মধ্যে রাখব না, কুমুদিনী। এবার কয়েকটা সত্যি কথা সহজ করে তোমায় বলব। আমাদের পরিচয় চোদ্দ মাসের। এর মধ্যে আমাদের দেখা হয়েছে গুণেগেঁথে বার চারেক। কিন্তু ইমেইলে-হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ চালাচালি হয়েছে। টেলিফোনেও কথা হয়েছে অনেকবার। স্বীকার করি এইসব আলাপচারিতায় তুমি যেভাবে পাপড়ির পর পাপড়ি মেলে নিজেকে ফুটিয়েছ আমি পারিনি। আমি জেনেছি তোমার জীবন ভার্জিন বিচের মতো। সেখানে এখনও কোনও পর্যটকের পা পড়েনি। এক উথালপাথাল সমুদ্রের পাশে গা-ভর্তি জ্যোৎস্না মেখে তুমি একা বসে থাকো। কাল জানলাম আমি ভুল। এই বকুলগন্ধী নিশিযাপনে তুমি সঙ্গী করেছ আমায়। কিন্তু কুমুদিনী তোমার একবারও মনে হল না, যে-মানুষটা তার অতীতের কথা বলে না, জানতে চাইলেও এড়িয়ে যায়--- নিজেকে জোর করে আটকে রাখে তার বর্তমানে--- তাকে কি বিশ্বাস করা যায়? কাল তোমার লেখাটা পড়ার পর থেকে তীব্র অপরাধবোধে ভুগছি। বারবার নিজেকে প্রশ্ন করছি কেন তোমার কাছে অকপট হতে পারলাম না? কেন বলতে পারলাম না কোথায় আমার আলো আর কোথায় অন্ধকার? বললে হয়তো তুমি এই ভুল করতে না। হ্যাঁ কুমুদিনী, আমার কাছে এটা ভুলই। যদিও তুমি লিখেছ, এই সিদ্ধান্ত একান্তভাবেই তোমার। এতে আমার কোনও দায় নেই। কিন্তু তাই বা কী করে হয় বলো তো? আমি হিপোক্রিট। স্বার্থপর। হতাশাবাদীও। কিন্তু যাকে আমার ভালো লাগে, যাকে আমি শ্রদ্ধা করি--- সে ভুল করছে দেখেও তারই একটা কথার ফাঁক কাজে লাগিয়ে তাকে ব্যবহার করব, এতটা খারাপ মানুষও তো আমি নই।

আজ আমার মনের অবস্থা ভালো নয়। তাই হয়তো সব কথা গুছিয়ে লিখতে পারলাম না। তবে তোমায় সব কথাই বলব। ছেলেবেলার কথা বলব। রুরুর কথা বলব। রুরু বলত, তুমি যতক্ষণ দূরে ততক্ষণ তোমাকে ভালোবাসা যায়। কাছে এলে আর যায় না। সব জানার পর তুমিও তাই বলবে। তাতে আমার কোনও দুঃখ নেই। আফসোস একটাই। আমার একটা নদী ছিল। বুকে অনন্ত পিপাসা নিয়ে আমি তার কাছে ছুটে যেতাম। সেই নদীটা এবার শুকিয়ে যাবে।

ভালো থেকো

অর্জুনদা


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance